করোনা ভাইরাসে ভারত যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। ভারতের রাজধানী দিল্লিতে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা এতই বেড়েছে মরদেহ সমাহিত করার জায়গা পেতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে মৃতদের পরিবারকে। শ্মশান ঘাটে লাশের সারি,তাই খোলা প্রান্তরে জ্বলছে সারি সারি চিতা। রাজধানীর দিল্লি থেকে এমনই এক দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেছে রয়র্টার্সের ড্রোন। ছবিটি ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
বৃহস্পতিবারের (২২ এপ্রিল) তথ্যমতে, দিল্লিতেই নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২৬ হাজার ১৬৯ জন। মারা গেছেন ৩০৬ জন করোনা রোগী। সেই পরিস্থিতিতেই জনবসতিপূর্ণ এলাকার পাশে বহ্নিমান গণচিতার একটি ছবি সামনে এনেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স। তারা জানিয়েছে, শুধু শ্মশানই নয়, রাজধানীর কবরস্থানগুলোর অবস্থাও এক। দেহ সমাহিত করার জায়গা পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কোভিডে মৃতদের পরিবারকে।
এর আগে দেশটির গুজরাট, মধ্যপ্রদেশের মতো জেলায়ও শ্মশানের বাইরে দেহ নিয়ে সারি সারি অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে দিল্লিতে পরিস্থিতি এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, শ্মশানের বাইরে লাইনেও জায়গা পাচ্ছেন না অনেকে। বাধ্য হয়ে বাড়িতেই প্রিয়জনের মরদেহ রেখে দিতে হচ্ছে।
দিল্লির সীমাপুরীর বাসিন্দা নিতিশ কুমার জানান, কোভিডে আক্রান্ত হয়ে দু’দিন আগে তার মা মারা গিয়েছেন। কিন্তু কোনো শ্মশানে মায়ের মরদেহ দাহ করার জায়গা পাননি। বাধ্য হয়ে দু’দিন বাড়িতেই মায়ের মরদেহ রেখে দিয়েছিলেন তিনি। নিজে এদিক-ওদিক চষে বেড়িয়েছেন। কোথায় দাহ করা যায়, জায়গা খুঁজছিলেন। শেষমেশ একটি পার্কিং লটে গড়ে ওঠা অস্থায়ী শ্মশানে মা-কে চিতায় তোলার জায়গা মেলে।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘শহিদ ভগৎ সিংহ সেবা দল’-এর প্রধান জিতেন্দ্র সিংহ শান্টি বলেন, দিল্লিতে এমন দৃশ্য দেখতে হবে কেউ ভাবেনি। বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়ে, কারও বয়স ৫, কারও ১৫, কারও ২৫। তাদের দাহ করতে হচ্ছে। সদ্য বিবাহিত অনেকের দেহও শ্মশানে আসছে। চোখে দেখা যাচ্ছে না।
তিনি জানান, সীমাপুরীর পার্কিং লটে গড়ে ওঠা অস্থায়ী শ্মশানে বৃহস্পতিবার বিকেলে ৬০টি দেহ দাহ করা হয়েছে। জায়গা না পেয়ে পড়েছিল আরও ১৫টি দেহ। কিন্তু গতবছর পরিস্থিতি এতটা ভয়ংকর ছিল না। সংক্রমণ যখন সর্বোচ্চে গিয়ে ঠেকে, সেই সময়ও একদিনে সর্বাধিক ১৮টি দেহ দাহ করতে হয়েছে।