পবিত্র রমজান মাসে নারীদের হিজাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আজারবাইজান। এই ঘটনায় মুসলিমদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটির একটি ইসলামি সংগঠনের প্রধান হাজ ইলকার ইব্রাহিম উগলু একটি টিভি চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাতকারে সেদেশে হিজাবের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়ে বলেন, পবিত্র এই রমজান মাসে কারও কারও ইসলাম নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা ব্যর্থ হবে। আজারবাইজানের অন্যতম এই রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব সম্প্রতি রমজান মাসে মসজিদ খুলে দেয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।
আজারবাইজানের জনগণ এবার এমন সময় রোজা পালন করছে যখন বিগত বছরগুলোর মতো এ বছরও সেদেশের সরকার মসজিদগুলো বন্ধ রেখেছে এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ওপর বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাপ ও বিধিনিষেধ অব্যাহত রেখেছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে সম্প্রতি আর্মেনিয়ার সঙ্গে নাগোরনো-কারাবাখ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ৪৪ দিনের যুদ্ধে আজারবাইজানের জনগণও সরকারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে এবং ওই যুদ্ধে আজারবাইজান বিজয়ী হয়।
এই বিজয়ের পর দেশটির ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ভেবেছিলেন তাদের মসজিদগুলো খুলে দেয়া হবে এবং তারা স্বাধীনভাবে ধর্ম প্রচারের কাজ করতে পারবেন। কিন্তু তাদের সে প্রত্যাশা আজো পূরণ হয়নি। তাই অনেকের কাছেই প্রশ্ন সরকার তাহলে এভাবেই জনগণের আত্মত্যাগের পুরস্কার দিল!
এ ব্যাপারে রুশ বিশেষজ্ঞ সের্গেই জেন্ট মার্কুস বলেছেন, আজারবাইজান হচ্ছে একটি মুসলিম রাষ্ট্র তাই সেখানে হিজাব নিষিদ্ধ করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এ ধরণের পদক্ষেপে এর চেয়ে খারাপ আর কিছু হতে পারে না।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আজারবাইজানের মতো একটি মুসলিম রাষ্ট্রে হিজাব নিষিদ্ধ করার ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যকার ঐক্যে যেমন বিনষ্ট হবে তেমনি সেদেশের মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসেও চরম আঘাত হানা হবে। এমনকি আমরা রুশরাও ধর্ম বিরোধী এ ধরনের পদক্ষেপ মেনে নিতে পারি না। শুধু তাই নয় বিশাল এ দেশটির মুসলিম ও অর্থোডক্স খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সহযোগিতা ও প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক বজায় রয়েছে।
আজারবাইজানের জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে হিজাব নিষিদ্ধ করে সরকারের নেয়া পদক্ষেপ সেদেশের সংবিধানেরও লঙ্ঘন। কেননা সংবিধানে হিজাবের ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপের কোনো বিধান নেই। দেশটির সংবিধান অনুযায়ী মুসলিম প্রধান জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি সম্মান দেখানো ও এক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা দেয়া সরকারের দায়িত্ব।
বাস্তবতা হচ্ছে, মুসলিম প্রধান আজারবাইজানে হিজাব নিষিদ্ধ করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। কারণ এটা ধর্মনিরপেক্ষতা ও মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর সরাসরি আঘাত। যেহেতু সংবিধানে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে সে কারণে সরকারের দায়িত্ব সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের বিশ্বাসের প্রতি সম্মান দিয়ে চলা।
মোটকথা আজারবাইজানে হিজাব নিষিদ্ধের বিষয়ে বলা যায়, ওই দেশটির মোট জনসংখ্যার ৯৮ ভাগ হচ্ছে মুসলিম এবং এদের মধ্যে ৮০ শতাংশই হচ্ছে শিয়া মুসলিম সম্প্রদায়। এ রকম একটি দেশের সরকার একদিকে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে অন্যদিকে ইসরায়েলের সঙ্গেও তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রয়েছে।-পার্স ট্যুডে।