ইরান ও বিশ্বের পরাশক্তি দেশগুলোর মধ্যে ২০১৫ সালে সম্পাদিত পরমাণু চুক্তি পুনরুজ্জীবনে আলোচনার অংশ হিসেবে আগামী মঙ্গলবার অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় বৈঠকে বসছেন চুক্তিতে অংশ নেয়া পক্ষগুলোর প্রতিনিধিরা। শুক্রবার চুক্তির অংশীদার পক্ষগুলোর মধ্যে এক ভার্চুয়াল বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
এদিকে ইরান দেশটির ওপর থেকে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আগে চুক্তিতে ফিরে আসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যেকোনো প্রকার বৈঠকের সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিয়েছে তেহরান।
ইরান ও বিশ্বশক্তির মধ্যে পরমাণু চুক্তি নিয়ে অচলাবস্থার সমাধানে দুই মাসের মধ্যে মীমাংসায় পৌঁছানোর অংশ হিসেবে ভিয়েনায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে জানান ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক কর্মকর্তা।
শুক্রবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের আহ্বানে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল বৈঠকে জয়েন্ট কম্প্রেহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) চুক্তির অংশীদার ইরান, চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি ও ব্রিটেনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাওয়াদ জারিফ টুইট বার্তায় বলেন, মঙ্গলবার ভিয়েনায় অপর পাঁচ দেশের সাথে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে ইরান। দেশটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য ইরানি সরকারের জন্য পদক্ষেপ চূড়ান্ত করার বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
টুইট বার্তায় জাওয়াদ জারিফ আরো বলেন, ‘অপ্রয়োজনীয় কোনো ইরান-যুক্তরাষ্ট্র বৈঠক হবে না।’
এদিকে শুক্রবারের ভার্চুয়াল বৈঠকের পর ভিয়েনায় যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যেকোনো প্রকার বৈঠককে প্রত্যাখ্যান করেছে ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী আব্বাস আরাকচির উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইরানের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত কোনো বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র অংশ নেবে না, এমনকি চুক্তি আলোচনার যৌথ বৈঠকেও এবং এটিই চূড়ান্ত।’
ইরানি রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল প্রেস টিভি চুক্তি সংশ্লিষ্ট এক সূত্রের বরাত দিয়ে জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর থেকে সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তেহরান ওয়াশিংটনের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো আলোচনাতেই আসবে না।
এতে বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্র যেমন কোনো আলোচনা ছাড়াই জেসিপিওএ ছেড়ে গিয়েছে এবং ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তেমনিভাবে তাকে অবশ্যই এখন আলোচনা ছাড়াই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে।’
এতে আরো বলা হয়, ‘এটি তাদের বিষয় যে চুক্তির অন্য অংশীদাররা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক আলোচনা করবে…ভিয়েনায় বা অন্য কোথাও। ইরানি প্রতিনিধিরা কোনো পর্যায়েই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সাথে আলোচনায় যাচ্ছে না।’
ইরানের প্রত্যাখ্যানের ভিত্তিতে ইউরোপীয় পক্ষগুলো বলছে, তারা ভিয়েনায় ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পৃথক বৈঠকে মিলিত হবে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এক ইউরোপীয় কূটনীতিক বলেন, ‘ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র একই শহরে থাকবে কিন্তু একই কক্ষে নয়।’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস এই উদ্যোগকে ‘বড় ধরনের অগ্রগতি’ হিসেবে উল্লেখ করে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সামনে থাকা কঠিন আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কোনো তাৎক্ষণিক সাফল্য প্রত্যাশা করছি না।’
তিনি আরো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে এই প্রক্রিয়ায় সরাসরি কোনো আলোচনা হবে এমন প্রত্যাশা আমরা বর্তমানে করছি না, যদিও যুক্তরাষ্ট্র তাদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে।’
২০১৫ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় ভিয়েনায় ইরানের সাথে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স ও জার্মানি পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর করে। জয়েন্ট কম্প্রেহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন বা সংক্ষেপে জেসিপিওএ নামে পরিচিত এই চুক্তির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর থেকে সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। এর বিনিময়ে ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করতে সম্মত হয়।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দেন। যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে ইরান চুক্তি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে সীমিত পরমাণু কর্মসূচি জোরদার করে।
বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও তিনি জানিয়েছেন, ইরানকে আগে তার পরমাণু কর্মসূচি থেকে সরে আসতে হবে। অপরদিকে ইরান আগে দেশটির ওপর থেকে সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি করছে।
সূত্র : রয়টার্স, আলজাজিরা, প্রেস টিভি