মনের ভেতর থেকে রাগ, হিংসা, লোভ, বিরক্তি, মোহ, আসক্তি, পরচর্চা বাদ দিতে না পারলে কলবে আল্লাহর মায়া আসবে না। শক্তিশালী মু’মিন হয় আত্মমর্যাদা সম্পন্ন ও পরিচ্ছন্ন অন্তরের অধিকারী। সে অহঙ্কার করে না বরং বিনয় ও নম্রতা তার চরিত্রের ভূষণ। সে অর্থলিপ্সু বা লোভাতুর হয় না। সে হীন চরিত্রের অধিকারী নয়। অর্থের প্রয়োজন হলেও তার আত্মমর্যাদা তাকে অর্থলিপ্সু বানায় না।
মহান আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, ‘যাদেরকে মনের লিপ্সা থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে তারাই সফলকাম।’ (সূরা আল হাশর : ৯)
শক্তিশালী মু’মিনের হৃদয় হয় ভালোবাসা, দয়া ও মায়া-মমতায় পূর্ণ। সে কৃতজ্ঞ চিত্তের অধিকারী। সে কারও প্রতি ব্যক্তিগত কারণে ঘৃণা-বিদ্বেষ পোষণ করে না বরং সে কাউকে ভালবাসলে বা ঘৃণা করলে তা হয় একমাত্র আল্লাহ তা’আলাকে কেন্দ্র করে।
শক্তিশালী ঈমানদারের একটি গুণ হল, ভুল হলে সে নির্দ্বিধায় স্বীকার করে। ভুল সংশোধন করে। সে আল্লাহর নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করে না। এটি সম্মানিত ব্যক্তিদের গুণ।
মহান আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়।’ (সূরা রা’দ: ২৮)
মহান আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, ‘যারা ঈমানদার, তারা এমন যে, যখন আল্লাহর নাম নেয়া হয় তখন তাদের অন্তর ভীত হয়ে পড়ে। আর যখন তাদের সামনে তার আয়াতগুলো পাঠ করা হয় তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপর ভরসা করে।’ (সূরা আনফাল: ২)
রাসূল (স.) বলেন, ‘মু’মিন তো সেই ব্যক্তি যার অন্তর নেক কাজে খুশি হয় আর পাপকাজে কষ্ট অনুভব করে।’ (সহীহুল জামে, হা/৬২৯৪, সহীহ)
সুদৃঢ় ঈমানের আলামত
– আল্লাহ এবং রাসূল যা ভালোবাসেন তা নিজের চাহিদা, রুচি এবং ভালোবাসার উপর অগ্রাধিকার দেয়া।
– আল্লাহর জন্য নিজের জান-মাল, সহায়-সম্পত্তি উৎসর্গ করা।
– আল্লাহ এবং তার রাসূল যাকে ভালবাসেন তাকে ভালবাসা আর তারা যাকে ঘৃণা করেন তাকে ঘৃণা করা।
– তকদীর তথা আল্লাহর ফয়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকা এবং যতই বিপদ আসুক না কেন মনঃক্ষুণ্ণ ও হতাশ না হওয়া।
– স্বতঃস্ফূর্তভাবে আল্লাহর ইবাদত করা এবং পাপাচার থেকে বেঁচে থাকা।
– আল্লাহর যিকিরের সময় মনে তৃপ্তি ও প্রফুল্লতা অনুভব করা।
– নেকির কাজে আনন্দ এবং গুনাহর কাজে অস্থিরতা অনুভব করা।
প্রতিটি কাজ যতই ছোট হোক না কেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অবিকল অনুসরণ নাফস আর শয়তানের বিরুদ্ধে আমাদেরকে বিজয়ী করে। তার চেয়েও বড় কথা, আমাদের মালিক আল্লাহর অপার সন্তুষ্টি আর ভালোবাসা এনে দেয়।
মহান আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদের।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২২২)
মহান রবের নিকট দু’আ করি, তিনি যেন আমাদেরকে সে ঈমান অর্জনের তাওফিক দান করেন যার উপর তিনি সন্তুষ্ট। তিনি যেন আমাদের দুর্বলতাগুলো শক্তিতে রূপান্তরিত করে দেন, অভাবগুলো মোচন করেন এবং গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন। নিশ্চয় তিনি সর্বশক্তিমান, পরম দয়ালু, দাতা ও ক্ষমাশীল।