ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বিদেশি নাগরিক অ্যালেক্স মার্টিনের বিরুদ্ধে সামিয়া রহমানের করা মামলাটি তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেন। গবেষণা চুরির অভিযোগ করায় বিদেশী এই নাগরিকের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমান।
মামলাটি তদন্ত করে সিআইডিকে ২০ মে’র মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক। গণমাধ্যমকে বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) ট্রাইব্যুনালের পেশকার শামীম আল মামুন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে বুধবার (৩১ মার্চ) ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালতে সামিয়া রহমান বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, মিথ্যা ও বানোয়াট ইমেইল আইডির ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে গবেষণা চুরির ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। আসামি উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তার নামে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য প্রচার ও প্রকাশ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অপরাধ করেছেন। তিনি আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন।
মামলাসূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে মামলার বাদী সামিয়া রহমানের বিরুদ্ধে প্লেইজারিজমের (একাডেমিক গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি) অভিযোগ আনা হয়। যার অভিযোগ তদন্ত নম্বর-৩৩২৯৬। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়বস্তু ছিল- ‘আপনি (সামিয়া রহমান) এবং অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান লিখিত ‘A new dimension of Colonialism and Pop Culture : A Case Study of the Cultural Imperialism’ প্রবন্ধে প্রকাশিত ‘The subject and power by michel foucault’ রচিত প্রবন্ধের কিছু অংশ প্লেইজারিজম করায় সেই জার্নালের অ্যাডমিনিস্ট্রেট অ্যাসিস্ট্যান্ট আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
জানা গেছে, তদন্ত কমিটি শিকাগো জার্নালের ২০১৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর করা ই-মেইলের ভিত্তিতে বাদীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ‘সহযোগী অধ্যাপক’ হতে পদাবনতি দিয়ে ‘সহকারী অধ্যাপক’ করার যে শাস্তির সুপারিশ করেছে, সেই ই-মেইলটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভুয়া, বানোয়াট এবং সৃজিত। যেহেতু ২০১৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর শিকাগো জার্নাল থেকে অফিসিয়ালি বাদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে কোনো ই-মেইল কখনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ই-মেইল আইডিতে পাঠানো হয়নি। আলেক্স মার্টিন বলে শিকাগো জার্নালে কখনই কেউ কাজ করেননি। এমনকি শিকাগো প্রেসেও আলেক্স বলে কোনো ব্যক্তি নেই।
সামিয়া রহমান তার ফেসবুক আইডি থেকে শিকাগো জার্নালের অফিসিয়াল এডিটর ক্রেইজ ওয়াকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে অভিযুক্তের তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে জানতে চান। ক্রেইজ ওয়াকার জানিয়েছেন, এলেক্স মার্টিন বলে কেউ কখনও শিকাগো জার্নালে ছিল না, কেউ নেইও। এখন পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেই মেইলের কোনো সফট কপি সামিয়া রহমানকে দেয়াও হয়নি। মিথ্যা ও বানোয়াট মেইল আইডি থেকে পাঠানো বার্তার ওপর ভিত্তি করেই সামিয়া রহমানকে ‘চৌর্যবৃত্তির’ মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।
জানা গেছে, গত ২৮ জানুয়ারি ঢাবির সিন্ডিকেট সভায় গবেষণা জালিয়াতির দায়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমানের পদাবনতি করে ‘সহকারী অধ্যাপক’ করা হয়।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১৬ সালের ২ ডিসেম্বর সামিয়া রহমান ও অপরাধবিজ্ঞান (ক্রিমিনোলজি) বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের ‘A new dimension of Colonialism and Pop Culture : A Case Study of the Cultural Imperialism’ নামক আট পৃষ্ঠার একটি গবেষণা প্রবন্ধ সোশ্যাল সাইন্স রিভিউ জার্নালে প্রকাশিত হয়, যা ১৯৮২ সালে শিকাগো জার্নালে প্রকাশিত মিশেল ফুকোর ‘Subject and Power’ প্রবন্ধ থেকে প্রায় পাঁচ পৃষ্ঠা হুবহু নকল করা।
২০১৭ সালে এক লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ চুরির অভিযোগের কথা জানিয়েছে ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস। ওই অভিযোগের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমেদকে প্রধান করে দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরে কমিটির প্রতিবেদন ও সুপারিশের ভিত্তিতে সিন্ডিকেট তার পদাবনতির সিদ্ধান্ত নেয়।
সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের পর থেকেই সামিয়া রহমান দাবি করে আসছেন, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাকে ফাঁসানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সামিয়া রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে অভিযোগে তাকে শাস্তি দেয়া হয়েছে, যার পরিচয় (শিকাগো ইউনিভার্সিটির জার্নাল ‘ক্রিটিক্যাল ইনকোয়ারি’র অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যালেক্স মার্টিন পরিচয়ধারী) দিয়ে ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস থেকে চিঠি এসেছে, সেই অ্যালেক্স মার্টিন বলে তো ওই জার্নালে কেউ নেই এবং তারা এ ধরনের চিঠি পাঠায়নি।’