spot_img

ভারতে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ

অবশ্যই পরুন

ভারতে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় সংক্রমণের ধাক্কা ভেঙে দিচ্ছে সব রেকর্ড। সংক্রমণের জাতীয় গড় পাঁচ শতাংশের কাছাকাছি হলেও, শুধু মহারাষ্ট্রেই সাপ্তাহিক সংক্রমণের হার প্রায় ২৩ শতাংশ। উদ্বেগজনক পরিস্থিতি পাঞ্জাব, দিল্লি, ও মধ্যপ্রদেশে। রাজ্যগুলোতে এই হারে সংক্রমণ ঘটলে ভারতের করোনা পরিস্থিতি অচিরেই হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন দেশটি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

মঙ্গলবার নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) বিনোদ পল স্বীকার করে নিয়েছেন, গত কয়েক সপ্তাহে পরিস্থিতি খারাপ থেকে আরো খারাপ হয়েছে। করোনাভাইরাস প্রবলভাবে সক্রিয় আছে ভারতের বিস্তীর্ণ প্রান্তে। যখনই মনে করা হচ্ছে সংক্রমণকে কাবু করা গেছে, ঠিক তার পরেই সংক্রমণ প্রবল শক্তি নিয়ে ফিরে এসেছে। তবে ভারতে যে নতুন ধরনের করোনাভাইরাসের স্ট্রেন পাওয়া গেছে, তা নিয়ে বেশি আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই বলেই মনে করছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ধাক্কার শিকার হয়েছে মূলত মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাব, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, দিল্লির মতো রাজ্যগুলো। স্বাস্থ্যকর্তাদের চিন্তায় রেখেছে সংক্রমণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকা মৃত্যুর সংখ্যাও। তাই মঙ্গলবার সমস্ত রাজ্যের মুখ্যসচিবদের পাঠানো চিঠিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ সংক্রমিতদের মৃত্যুহার কমানোর ওপরে বিশেষভাবে জোর দিয়েছেন।

চিঠিতে বলা হয়েছে, যে এলাকা ও হাসপাতালগুলো থেকে মৃত্যুর তথ্য বেশি আসছে, প্রশাসনকে সেগুলোকে প্রথমেই চিহ্নিত করতে হবে। পরবর্তী ধাপে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে পর্যালোচনা করে দেখতে হবে, কেন মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হচ্ছে। রাজেশ ভূষণের বক্তব্য, সংক্রমিত ব্যক্তিকে দেরিতে হাসপাতালে নিয়ে আসার কারণে মৃত্যু ঘটছে কি না, তা সবার আগে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। যদি তা-ই হয়, তা হলে ধরে নিতে হবে, নজরদারি চালানোর প্রশ্নে গাফিলতি রয়েছে রাজ্যের। সংক্রমিতকে দেরিতে হাসপাতালে ভর্তির অন্য একটি কারণ হলো, চিকিৎসকদের তরফে দেরিতে সুপারিশ। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা যথাযথ প্রোটোকল মেনে চলছেন কি না, সংক্রমিত ব্যক্তি হাসপাতালে ঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন কি না, বিশেষ করে এক জন করোনা রোগীর চিকিৎসার প্রশ্নে ন্যূনতম যে প্রোটোকলগুলো- যেমন অক্সিজেন, শয্যা, অক্সিজেনযুক্ত শয্যা ইত্যাদি রয়েছে কি না, নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে ওষুধ দেয়া হচ্ছে কি না, এ সবই পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে।

সংক্রমণের হার কমাতে বিশেষভাবে জোর দেয়া হয়েছে টিকাকরণে। আগামী ১ এপ্রিল থেকে ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বে সমস্ত ভারতবাসী কোভিডের টিকা নিতে পারবেন। যে জেলাগুলোতে সংক্রমণের হার বেশি, সেখানে ৪৫ বছরের বেশি বয়সীদের ১০০ শতাংশ টিকাকরণ নিশ্চিত করতে বলেছে কেন্দ্র। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রুখতে বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে কন্টেনমেন্ট জোন গঠনের উপরে।

ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রতিটি কন্টেনমেন্ট জোনকে পরিবর্তনশীল হতে হবে, প্রয়োজনে যাতে তার আকার বড় বা ছোট করা সম্ভব হয়। প্রতিটি কন্টেনমেন্ট জোনে সংক্রমিত এলাকার যথাসম্ভব বেশি সংখ্যক বাড়িকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে অন্তত ১৪ দিন কন্টেনমেন্ট জোনে অপ্রয়োজনীয় গতিবিধি নিষিদ্ধ করতে হবে। কন্টেনমেন্ট জোন ও তার বাইরের এলাকায় রোজ কত নতুন সংক্রমণ হচ্ছে, সেই তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে রাজ্যগুলোকে। যদি কন্টেনমেন্ট জোনের বাইরে সংক্রমণ বেশি থাকে, সে ক্ষেত্রে তার পরিধি বড় করার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্র। জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তারা ছাড়া সংক্রমিত এলাকায় আর কারো ঢোকা-বেরোনো বন্ধ করায় নজর দিতেও বলা হয়েছে রাজ্যগুলোকে।

উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্যসচিব চিঠিতে জানিয়েছেন, বহু জেলায় গত অগস্ট-নভেম্বরে করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়েছিল। ওই জেলাগুলোতে আবার সংক্রমণ বাড়ছে। একইসাথে এ যাত্রায় সংক্রমণের শিকার হয়েছে নতুন-নতুন জেলা, যেখানে প্রথম পর্বে সংক্রমণ পৌঁছয়নি। এই প্রবণতায় রাশ টানতে রোগী-পিছু অন্তত ২৫-৩০ জনকে চিহ্নিত করার উপরে জোর দিয়েছে কেন্দ্র। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণের কথায়, ‘‘এখানে সংক্রমিতের পরিবারের লোকেরা ছাড়াও তিনি কার সঙ্গে চা খেয়েছেন, কার সঙ্গে গল্প করেছেন, কোন দোকান থেকে আনাজ-দুধ কিনেছেন- তাদেরও খুঁজে বার করতে হবে সংক্রমণের তিন দিনের মধ্যে। এদের চিহ্নিত করা না-গেলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া আটকানো কঠিন।’’

কোনো রাজ্যের কোনো বিশেষ প্রান্ত বা এলাকা থেকে সংক্রমিত রোগী বেশি আসছেন কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য ম্যাপিং করতে বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য, এর ফলে সংক্রমণের কারণ খুঁজতে সুবিধা হবে রাজ্যের। করোনা পরীক্ষা, বিশেষ করে আরটি-পিসিআর পরীক্ষার অনুপাত বাড়ানো, মাস্ক পরা-সহ কোভিড সতর্কতাবিধি মেনে চলার উপরে জোর দেয়া হয়েছে। মাস্ক না-পরলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আর্থিক জরিমানার মতো কড়া পদক্ষেপ করার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্র।

অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যার নিরিখে ভারতের প্রথম দশ জেলার তালিকা মঙ্গলবার প্রকাশ করেছে কেন্দ্র। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, সেই তালিকায় দিল্লিকে একটি জেলা হিসেবেই ধরা হয়েছে। তালিকার শীর্ষে রয়েছে পুণে (৫৯,৪৭৫)। তার পরে যথাক্রমে মুম্বই, নাগপুর, ঠাণে, নাশিক, আওরঙ্গাবাদ, বেঙ্গালুরু (নগর), নান্দেড়, দিল্লি ও আহমেদনগর। দশের মধ্যে আটটিই মহারাষ্ট্রের। বৃহন্মুম্বই পুরসভার কমিশনার ইকবাল চহালের আর্জি, বাড়ি-বাড়ি গিয়ে টিকাকরণের বিষয়টিতে কেন্দ্রের ছাড়পত্র আদায় করুক মহারাষ্ট্র সরকার। যদিও এই বিষয়টি এখনই হয়তো সম্ভব হবে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এই ব্যাপারে আমাদের কাছে কোনো নির্দিষ্ট খবর নেই।’
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

সর্বশেষ সংবাদ

আইপিএলের নিলামে এক বছরে ‘৪৯ সেঞ্চুরি’ করা ১৩ বছর বয়সী বৈভব

সময়ের সেরা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। যেখানে দেখা মেলে, হালের অন্যতম সেরা তারকাদের। অনেকের মতে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ