বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রথম দফায় (ফার্স্ট জেনারেশন) যেসব করোনা ভাইরাসের টিকা এসেছে তা আগামী এক বছর বা তারও কম সময়ের মধ্যে অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। এ জন্য আধুনিকায়িত করে নতুন টিকার ফর্মুলা আনার প্রয়োজন। অর্থাৎ করোনা মোকাবিলা করতে হলে আগামী এক বছরের জন্য করোনার নতুন টিকা প্রয়োজন হবে।
মহামারি বিশেষজ্ঞ, ভাইরোলজিস্টস এবং সংক্রামক ব্যাধি বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা এক জরিপে এসব কথা বলেছেন। এ খবর দিয়েছে লন্ডনের অনলাইন গার্ডিয়ান। এতে আরো বলা হয়েছে যে, দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীরা বলে আসছেন, কোভিড-১৯ এর হুমকি সন্তোষজনকভাবে নিষ্ক্রিয় করার জন্য বৈশ্বিক টিকাদানের প্রচেষ্টা নিতে হবে। করোনা ভাইরাসের নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট দেখা দিয়েছে এবং তার বিস্তার ঘটেছে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে। এতে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠছে।
এর প্রেক্ষিতে বিজ্ঞানীরা ওইসব কথা বলেছেন। পিপলস ভ্যাক্সিন এলায়েন্সের জরিপে সাড়া দেয়া বিজ্ঞানীদের মধ্যে তিন ভাগের দুই ভাগই বলেছেন, এক বছর বা তার কম সময়ের মধ্যে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হবে। উল্লেখ্য, পিপলস ভ্যাক্সিন এলায়েন্ট একটি জোটবদ্ধ সংগঠন। এর মধ্যে রয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, অক্সফাম এবং ইউএনএইডস-এর মতো সংগঠন। তারা ২৮টি দেশের ৭৭ জন বিজ্ঞানীর ওপর ওই জরিপ চালায়।
এর মধ্যে তিন ভাগের প্রায় এক ভাগ বলেছেন, বর্তমান টিকার কার্যকারিতা ৯ মাস বা তারও কম সময় পর্যন্ত থাকবে। জরিপে অংশ নেয়াদের মধ্যে শতকরা ৮৮ ভাগ বলেছেন, অনেক দেশে এখনও টিকাদানের হার খুব কম। সেখানে ভাইরাসের রূপান্তরিত রূপ হানা দেয়ার পর পরিস্থিতি খারাপ হবে বলে মনে করেন তারা। এসব বিজ্ঞানী কাজ করেন জনস হপকিন্স, ইয়েল, ইমপেরিয়াল কলেজ, লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন এবং ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গে।
ইয়েল ইউনিভার্সিটির মহামারি বিষয়ের সহযোগী প্রফেসর গ্রেগ গনজালভেস বিবৃতিতে বলেছেন, প্রতিদিনই নতুন নতুন রূপান্তর ঘটছে করোনা ভাইরাসের। কখনো কখনো তারা উপযুক্ত পরিবেশ খুঁজে পাচ্ছে, যা তাদের পূর্ববর্তী প্রজন্মের চেয়ে বেশি উপযোগী। এইসব ভ্যারিয়েন্ট অত্যন্ত কার্যকরভাবে সংক্রমণ করতে পারে। কার্যকরভাবে আগের স্ট্রেইনের চেয়ে বেশি জোরালোভাবে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আক্রমণ করতে পারে। তিনি আরো বলেন, যদি আমরা সারা বিশ্বকে টিকা দিতে না পারি, তাহলে করোনা ভাইরাসকে বার বার রূপান্তরিত হওয়ার জন্য উন্মুক্ত মাঠ ছেড়ে দেবো। ফলে তাদেরকে মোকাবিলা করতে শক্তিশালী টিকা প্রয়োজন হবে।
বর্তমানে সারা বিশ্বের বিভিন্ন অংশে জরুরি ভিত্তিতে যেসব টিকা দেয়া হচ্ছে তা বিশ্বের পুরনো সংস্করণগুলোর একটি মিশ্রণ এবং প্রযুক্তির ব্যবহার। ওদিকে ফাইজার/বায়োএনটেক এবং মডার্নার মতো কোম্পানি যে টিকা আবিষ্কার করেছে তার দাম অনেক। এ জন্য দরিদ্র দেশগুলোর হাতের নাগলে থাকবে না এসব টিকা। এর দাম অনেক। তা ছাড়া এটাকে অনেক বেশি মাইনাস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এবং বৃটেনের মতো ধনী দেশ তার মোট জনসংখ্যার মাত্র এক চতুর্থাংশের কিছু বেশি মানুষকে টিকার প্রথম ডোজ দিয়েছে।
এ ছাড়া আরো লাখ লাখ ডোজ টিকা নিশ্চিত করেছে তারা। পক্ষান্তরে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং থাইল্যান্ডের মতো দেশ এখনও তাদের মোট জনসংখ্যার শতকরা এক ভাগ মানুষকে এই টিকা দিতে সক্ষম হয়নি। কিছু দেশ এখনও টিকার প্রথম ডোজই দিতে পারেনি। ২০২১ সালের মধ্যে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জনসংখ্যার শতকরা কমপক্ষে ২৭ ভাগকে টিকা দেয়ার আশা করা হচ্ছে কোভ্যাক্স কার্যক্রমের মাধ্যমে। এটা হলো জাতিসংঘের উদ্যোগে সারাবিশ্বে টিকাদান কর্মসূচি। অক্সফামের অসমতা বিষয়ক প্রধান এবং পিপলস ভ্যাক্সি এলায়েন্সের চেয়ারম্যান ম্যাক্স লসন করোনার টিকা আবিষ্কারকদেরকে তাদের প্রযুক্তি এবং বুদ্ধিবৃত্তিক তথ্য শেয়ার করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।