শব-ই-বরাত এবং আসন্ন রমজানকে পুঁজি করে সব ধরনের মুরগি, মাছ-মাংস, ভোজ্যতেল, চিনি ও তরল দুধের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শব-ই-বরাত ও রোজা সামনে রেখে প্রতিদিনই কোন না কোনও অযুহাতে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে এসব পণ্য।
দাম বাড়ার পেছনে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেটের কারসাজি রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
দু’মাসের বেশি সময় ধরে সব মুরগির দাম বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে কক জাতের লাল ও হলুদ বর্ণের মুরগির দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। আকারভেদে প্রতিকেজি কক জাতের লাল ও হলুদ বর্ণের মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৫০ টাকা। আর মাঝারি সাইজের প্রতিপিস মুরগি কিনতে ২৫০-২৬০ টাকা ক্রেতাকে ব্যয় করতে হচ্ছে।
প্রতিকেজি গরুর মাংসে ৩০-৫০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়ে ৫৮০-৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। অনেক মাংস বিক্রেতা ভাল গরুর কথা বলে পরিচিত ক্রেতার কাছ থেকে ৬২০-৬৩০ টাকা পর্যন্ত দাম নিচ্ছেন। বাজারে বেড়ে গেছে সব ধরনের মাছের দাম। এছাড়া হালুয়া, রুটি তৈরিতে ব্যবহার এমনসব নিত্যপণ্য বিশেষ করে চিনি, বুটের ডাল, তরল দুধ এবং সুজির দামও বেড়ে গেছে।
জানা গেছে, শব-ই-বরাত ও রোজা সামনে রেখে এবার একমাস আগে থেকে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি শুরু হয়। এ কারণে প্রায় বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দাম চড়া। শীতের সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে বাজারে হঠাৎ করে সব ধরনের শাক-সবজির দাম বেড়ে গেছে।
কাঁচা সবজি ধুঁদল, চিচিঙ্গা, সজনেডাঁটা, টমেটোসহ কোনও সবজিই ৭০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে বাজারে কিছুটা কমেছে চালের দাম। দাম কমেছে আলুর। আদা, রসুন, জিরাসহ সব ধরনের মসলার দাম বেড়ে গেছে।
সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল। গত এক মাসে কেজিতে ১০ টাকার বেশি বেড়েছে চিনির দাম। প্রতিকেজি খোলা চিনি ৭০ এবং প্যাকেটজাত চিনি ৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। প্রতিলিটার তরল দুধ আগে ৭০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ক্রেতাকে ব্র্যান্ডভেদে ৭৫-৮০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে।
রোজা ও শব-ই-বরাত সামনে রেখে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কাপ্তানবাজারের জামশেদ স্টোরের কর্মকর্তা মোঃ আবুল হোসেন বলেন, শব-ই-বরাতের আগে এবার জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। বিশেষ করে চিনি ও ভোজ্যতেল কয়েক মাস ধরেই একটু একটু করে বেড়েছে।
এখন আর কমছে না। এছাড়া শব-ই-বরাত সামনে রেখেও কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে বলে জানান তিনি। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মুরগি ও মাছ-মাংস। মুরগির গায়ে যেন হাত দেয়াই যায় না। পবিত্র শব-ই-বরাতের চাহিদাকে সামনে রেখে সব ধরনের মুরগির দাম আরেক দফা বেড়েছে।
কাপ্তানবাজারের মুরগি ব্যবসায়ী হাবিব বলেন, প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করা হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়। এ ছাড়া লাল লেয়ার মুরগি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, পাকিস্তানী কক মুরগির পিস ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দামে বিক্রি করছি। তিনি বলেন, কয়েক মাস ধরেই মুরগির দাম চড়া। শব-ই-বরাত সামনে রেখে দাম আরও বেড়েছে।
কাওরানবাজারের মুরগি ব্যবসায়ী সাহেব আলী বলেন, এবার রোজার অনেক আগেই দাম বাড়তি। রোজার সময় গরুর মাংসের চাহিদা বেশি থাকে। কিন্তু গরুর মাংসের দাম অনেক বেশি হওয়ায় এবার মুরগির চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু সে তুলনায় মুরগির সরবরাহ নেই বাজারে।
সম্প্রতি যান চলাচল ব্যাহত হওয়ায় রাজধানীর বাজারগুলোয় মুরগির সরবরাহে তারতম্য ঘটেছে। তাই পাইকারিতে দাম বেড়ে গেছে। মাছের বাজারও চড়া। দেশি জাতের সব ধরনের মাছের দাম কেজিতে ৫০-১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
এছাড়া ভোগ্যপণ্যের বাজারে তরল দুধ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। তরল দুধের সুপরিচিত ব্র্যান্ড মিল্ক ভিটা লিটারে ৫ টাকা বাড়িয়েছে। নতুন দাম লিটারপ্রতি ৭৫ টাকা। তবে বিক্রেতা এই দামের চেয়েও বেশি দামে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।