পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দিনের ভোটে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে বিজেপি, অন্যদিকে ভোটে অনিয়মের অভিযোগ এনেছে তৃণমূল কংগ্রেস। শনিবার পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং বাঁকুড়া—৫ জেলার ৩০ টি আসনে ভোট হয়েছে।
ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপি বলছে, গত চার দশকের মধ্যে এদিনই সব থেকে শান্তিতে ভোট হয়েছে – ভোট জালিয়াতিও সব থেকে কম হয়েছে এদিনই।
ভোটের আগের দিন পর্যন্তও যেখানে বিজেপি বেশ কয়েকবার নির্বাচন কমিশনের কাছে তাদের আশঙ্কার কথা জানিয়েছিল যে তৃণমূল কংগ্রেস নানা ভাবে জালিয়াতি করতে পারে বা দুষ্কৃতিদের সাহায্য নিতে পারে, সেখানে ভোটের প্রথম দিন দেখা গেছে তাদের একেবারেই বিপরীত সুরে কথা বলতে।
দুপুরবেলাতেই বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাশ বিজয়বর্গীয় কলকাতায় মুখ্য নির্বাচন অফিসারের সঙ্গে দেখা করার পরে সংবাদ মাধ্যমকে জানান যে ৯০ শতাংশ জায়গায় খুব শান্তিতে ভোট হয়েছে।
“এরকমটা রাজ্যে গত চার দশকেও হয়নি। দশ শতাংশ জায়গায় বুথ দখল বা তাদের কর্মী-সমর্থকদের মারধরের ঘটনা ঘটেছে। দ্বিতীয় দফা থেকে কমিশন আরও যদি কঠোর হয়, তাহলে ওইটুকু অশান্তিও হবে না।”
অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা বিজেপির বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ করে বলেছেন, শনিবার ৫ জেলার ভোটকেন্দ্রগুলোতে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে বিজেপি; কোথাও বিজেপি কর্মীরা তাদের বুথ এজেন্টকে ঢুকতে বাধা দিয়েছে, কোথাও ইভিএম যন্ত্রে তৃণমূলকে ভোট দিলে তা বিজেপিতে চলে যাচ্ছে, আবার কোথাও সাধারণ মানুষ যাতে ভোট না দিতে পারেন তার জন্য বুথ জ্যাম করেছে বিজেপি কর্মীরা।
এছাড়াও কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী কোনও কোনও জায়গায় বিজেপিকে সহায়তা করছে এমন অভিযোগও করেছেন তৃণমূল নেতারা। তৃণমূল কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের অন্যতম নেতা ও লোকসভার এমপি ডেরেক ও ব্রায়েন ইতোমধ্যে অভিযোগগুলো সুনির্দিষ্ট করে নির্বাচন কমিশন বরাবর চিঠিও দিয়েছেন।
এরই মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি দুটি টেলিফোন আলাপের রেকর্ডিং সামনে এনেছে, যা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে জোরেশোরে আলোচনা চলছে। এই দুটি রেকর্ডিং নিয়ে এখন রাজ্য রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
দ্বিতীয় দফায় পশ্চিমবঙ্গে ভোট গ্রহণ হবে পয়লা এপ্রিল। সেদিন যেসব কেন্দ্রে ভোট নেয়া হবে তার মধ্যে রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রাম যেখান থেকে প্রার্থী হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। ওই আসনে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাবেক ‘হেভিওয়েট’ নেতা ও মমতা বন্দোপাধ্যায়ের এক সময়কার ‘ডানহাত’ বলে পরিচিত শুভেন্দু অধিকারী।
শুভেন্দু অধিকারী নন্দীগ্রামেরই বিদায়ী এমএলএ। গত ডিসেম্বরে তৃণমূল কংগ্রেস ত্যাগ করে তিনি এখন বিজেপির বড় নেতা।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, তামিলনাড়ু ও আসাম— ভারতের এই চার রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পদুচেরিতে বিধানসভা নির্বচনের তফসিল ঘোষণা করে ভারতের নির্বাচন কমিশন। কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী ২৭ মার্চ থেকে এই রাজ্যগুলো ও পদুচেরিতে ভোটগ্রহণ শুরু হবে, ফলাফল ঘোষণা হবে আগামী ২ মে।
ভারতের নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ২৯৪টি আসনে আট দফায় ভোট হবে। শনিবার ছিল তার প্রথম দফায় ৩০ টি আসনে ভোট হয়েছে। ভারতের বেসরকারি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থাসমূহ ও সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, শনিবার ৩০ টি নির্বাচনী এলাকার ৮০ শতাংশ ভোটার এই দিন ভোট দিয়েছেন।
সূত্র: বিবিসি বাংলা