সকল ক্ষেত্রে নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
তিনি বলেছেন, ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিটি কাজে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সকলকে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ‘মুজিব চিরন্তন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন রাষ্ট্রপতি।
জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে আয়োজিত ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার শেষদিন আজ শুক্রবার। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সভাপতিত্ব করছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আজকের দিনটি আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দ, গর্ব ও সম্মানের। ১৯৭১ সালে মার্চের এ দিনের প্রথম প্রহরেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু এ স্বাধীনতা একদিনে বা হঠাৎ করে আসেনি। অনেক ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ নয়মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।
এর আগে বক্তৃতার শুরুতেই বঙ্গবন্ধু, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, জাতীয় চার নেতাকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন রাষ্ট্রপতি।
আবদুল হামিদ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। এই শুভ মুহূর্তে আমি দেশ ও দেশের বাইরে অবস্থানরত বাংলাদেশের সকল নাগরিককে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। আজ আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও তার প্রিয় স্বদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী একসঙ্গে উদযাপন করছি। বাংলাদেশ ও বাঙালির ইতিহাসে এ এক অপূর্ব মিলনক্ষণ।
রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশ ও জনগণের উন্নয়ন রাজনৈতিক নেতৃত্বের একক দায়িত্ব নয়। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে এটা আমাদের সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য। স্বাধীনতা মানুষের অধিকার। অধিকারকে অর্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে তা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলেই স্বাধীনতা অর্থবহ হয়ে উঠে। আবার অধিকারের অপপ্রয়োগ স্বাধীনতাকে খর্ব করে। স্বাধীনতা ও স্বেচ্ছাচারিতাকে এক করে দেখলে চলবে না।
বঙ্গবন্ধু শুধু বঙ্গের বন্ধু হয়েই থাকেননি, তিনি বিশ্ববন্ধু হয়ে উঠেছেন উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু সারাবিশ্বের নিপীড়িত নির্যাতিত মানুষের আপনজন। ১৯৭৩ সালে ন্যাম সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “বিশ্ব আজ দু’ভাগে বিভক্ত। শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে”।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে জানা ও বুঝার জন্য জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে এ উদযাপনকে আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে আমাদের নতুন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে বঙ্গবন্ধুর জীবন-কর্ম এবং তার নীতি ও আদর্শ সম্পর্কে জানতে পারে সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাভাষা ছাড়াও বিদেশি বিভিন্ন ভাষায়ও যাতে বঙ্গবন্ধুকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যথাযথভাবে তুলে ধরা যায়, সে উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে গবেষক, ইতিহাসবিদ ও রাজনীতিবিদদের অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের স্মৃতি স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন ও সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ আমার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অর্জন। মুক্তিযুদ্ধকালীন দীর্ঘ নয়মাস আমি ভারতে অবস্থানকালে সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অভ্যর্ত্থনা, ক্যাম্প স্থাপনসহ তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি রিফিউজি ক্যাম্পের দেখাশোনার কাজও করেছি। মুজিববাহিনী (বিএলএফ) এর সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবেও আমি দায়িত্ব পালন করি।
স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে আবদুল হামিদ বলেন, আমি প্রত্যক্ষভাবে দেখেছি মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত কীভাবে আমাদের সমর্থন ও সহযোগিতা করেছে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে এক কোটি মানুষ ভারতের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয়। ভারতের তৎকালীন সরকার ও জনগণ আমাদের এক কোটি লোককে আশ্রয় দিয়েছিল, খাবারের ব্যবস্থা করেছিল। তারা মু্ক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে, অস্ত্র দিয়েছে, বহির্বিশ্বে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমর্থন আদায়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছে, মিত্রবাহিনীর অনেক সদস্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। মহানুভবতা ও মানবিকতার ইতিহাসে এটি একটি নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত। মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতা ও সমর্থনের কথা বাংলাদেশের জনগণ সবসময়ই কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষের মাহেন্দ্রক্ষণে আমি নিজে এবং বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে ভারত সরকার ও জনগণকে আবারও ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।