পররাষ্ট্রন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, আগামীকাল থেকে শুরু হতে যাওয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পাঁচটিরও বেশি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সমঝোতা স্মারকের সংখ্যা কম-বেশি হতে পারে, তবে পাঁচটির বেশি (স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে)।’
শনিবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ভারতীয় সমকক্ষ মোদির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর স্বাক্ষর হতে যাওয়া সমঝোতা স্মারকের ব্যাপারে ঢাকা ও নয়াদিল্লি এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মোদির সফরটি মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা জানানোর উদ্দেশ্যে। তবে মোমেন বলেন, যেহেতু দুই দেশের শীর্ষ নেতারা দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বসবেন। সেহেতু বৈঠকে সব প্রধান বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শুক্রবার সকালে দু’দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে এখানে আসার কথা রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ মোদির এ সফরকে স্বাগত জানায় এবং তারা এই সফরে খুশি। খুব কম লোকই এই সফরের বিরোধী হতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন যে এটি ‘কোনোভাবেই’ এই সফরে প্রভাব ফেলবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি… বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ যেখানে বাকস্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।’
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাাহিম মোহাম্মদ সলিহ, নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যাদেবী ভান্ডারী, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে এবং ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ড. লোটে শেরিং ইতোমধ্যে ১৭ মার্চ থেকে শুরু হওয়া দশ দিনব্যাপী সশরীরে এই বিশেষ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন।
রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ, পোপ ফ্রান্সিস, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ওয়াল্টার স্টেইনমিয়ার এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ অনেক বিশ্বব্যাপী নেতা এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে ভিডিও বার্তা প্রেরণ করেছেন। বাংলাদেশের মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার আগামীকাল স্বাধীনতার পঞ্চাশতম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ভার্চ্যয়ালি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের একটি চিঠি পাঠ করবেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুক্রবার সকালে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (এইচএসআইএ) পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে স্বাগত জানাবেন। বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতার পরে মোদির পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সরাসরি সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাওয়ার কথা রয়েছে। এর অল্প সময় পর তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা জানাতে ধানমন্ডির ৩২ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন।
বিকেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন হোটেল সোনারগাঁওয়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করবেন। পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সম্মানিত অতিথি হিসেবে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করবেন।
সন্ধ্যায় মোদির বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে যৌথভাবে ‘বঙ্গবন্ধু-বাপু জাদুঘর’ উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। তিনি তার সম্মানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া এক রাষ্ট্রীয় ভোজসভায় অংশ নেবেন।
শনিবার সফরের দ্বিতীয় দিন সকালে নরেন্দ্র মোদি বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাতে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাবেন। তার গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ওরাকান্দি মন্দির এবং সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগরের ঈশ্বরীপুরে যশোরেশ্বরী দেবী মন্দির পরিদর্শন করার কথা রয়েছে।
বিকেলে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। এ সময় দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিভিন্ন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে এবং ভার্চ্যুয়ালি বেশ কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন করা হবে।
পরে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সাথে সাক্ষাৎ করবেন। নরেন্দ্র মোদি ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় নয়াদিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন।
সূত্র : বাসস