বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দু’দিনের সফরে আজ ঢাকায় আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আমন্ত্রণে আসছেন তিনি। তাকে বরণে সরকারের তরফে বর্ণাঢ্য প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। হাই প্রোফাইল ওই সফর ঘিরে বিরোধিতা থাকায় তা সরকারের তরফে নিরাপত্তা এবং শৃঙ্খলায় বেশ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোদির সফরকে সার্থক করতে ঢাকার প্রস্তুতি কোনো কমতি নেই। ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী এবং যুদ্ধবন্ধু ভারতের সরকার প্রধানের এবার সফরটি সেরিমনিয়াল হলেও সফরকালে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হবে। সফরকালে প্রেসিডেন্ট মো. আব্দুুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। প্রস্তাবিত সূচি মতে, শুক্রবার সকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছলে তাকে স্বাগত জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর আনুষ্ঠানিকতা সেরে তিনি সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। ২৬শে মার্চ বিকালে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে স্বাধীনতা দিবসের জাতীয় অনুষ্ঠানে তিনি যোগ দেবেন। করোনাকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এটাই প্রথম বিদেশ সফর। ওই সফর প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মোদির সফরে অন্তত ৬টি সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তবে কোনো চুক্তি হচ্ছে না। সফর বিষয়ে একটি যৌথ ঘোষণা সই হবে, যাতে আগামী পথচলার নির্দেশনা থাকবে। সফরকালে মুজিবনগর স্বাধীনতা সড়ক, ঢাকা-জলপাইগুড়ি যাত্রীবাহী ট্রেন সার্ভিস, বঙ্গবন্ধু-বাপু মিউজিয়াম উদ্বোধন হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যৌথভাবে এসব উদ্বোধন করবেন। ভারতের সরকার প্রধানের সফরে কানেকটিভিটি, বাণিজ্য, কোভিড প্রতিরোধ, পানিবণ্টন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা, বিদ্যুৎ সহযোগিতা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। দু’দিনের সফরের দ্বিতীয় দিনে ২৭শে মার্চ সাতক্ষীরা ও গোপালগঞ্জ যাবেন মোদি। তিনি সাতক্ষীরার শ্যামনগরে যশোরেশ্বরী মন্দিরে প্রার্থনা করবেন। একই সঙ্গে হিন্দু সমপ্রদায়ের লোকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। সাতক্ষীরা সফর শেষে তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় যাবেন। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। টুঙ্গিপাড়ায় তাকে স্বাগত জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখান থেকে কাশিয়ানীর ওড়াকান্দিতে মতুয়া সমপ্রদায়ের মন্দির পরিদর্শন করবেন। এই মন্দির পরিদর্শন শেষে মতুয়া সমপ্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। সেখান থেকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় ফিরবেন। ওই দিনই তার দিল্লি ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে।
মোদির সফর নিয়ে শ্রিংলা যা বললেন: এদিকে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, করোনা মহামারি সত্ত্বেও ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। এই সম্পর্ককে অনুকরণ করতে চাইবে অন্য দেশগুলো। বুধবার নয়াদিল্লিতে তিনি এসব কথা বলেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে শ্রিংলা বলেন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সঙ্গে স্থল সীমান্ত নিয়ে বিশেষত্ব আছে ভারতের। রোহিঙ্গাদের যখন আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ তখন তাদের অবদানের স্বীকৃতি দিয়েছে ভারত এবং বাংলাদেশকে সাহায্য সহযোগিতা দিয়েছে। শ্রিংলা আরো বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন উন্নয়ন পরিকল্পনার অধীনে তাদের (রোহিঙ্গা) জন্য আমরা বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছি। ওদিকে, বৃহস্পতিবার আলাদা এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সহযোগিতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়ে আমরা একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছি।
ভারত থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কিনতে বাংলাদেশকে ৫০ কোটি ডলারের ঋণ দিয়েছি আমরা। এছাড়া আমরা যৌথ সামরিক মহড়া, প্রশিক্ষণ এবং নিয়মিত সক্ষমতা বৃদ্ধি বিষয়ে চর্চা করেছি। উভয় দেশের সেনা প্রধানরা নিয়মিত সফর করেছেন। আমাদের সেনাবাহিনীর প্রধানদের বাংলাদেশ এবং ভারত সফর নিয়মিত চর্চায় পরিণত হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও এএনআই। বুধবার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, বৃহস্পতিবার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান। এতে যোগ দিতে বাংলাদেশ সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ সময়ে তিনি ওই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন এবং দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। শ্রিংলার মতে, প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন ছাড়াও জোট নেতা, বিরোধী দলীয় নেতাদের সঙ্গে এবং মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন গ্রুপের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা প্রধানমন্ত্রী মোদির। এছাড়া তিনি বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান গোপালগঞ্জ সফরে যাবেন।