বাইরের দেশগুলোতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকা রফতানির ওপর সাময়িক স্থগিতাদেশ দিয়েছে ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সম্প্রতি ভারতে করোনা সংক্রণ আকস্মিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা সাময়িক স্থগিতাদেশ। আভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থগিতাদেশ কার্যকর থাকবে।’
গত ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ভারতে করোনায় দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যু অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে তা আবার বাড়তে শুরু করে। বুধবার একদিনেই ভারতে করোনায় নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে, মৃত্যু হয়েছে ২৭৫ জনের।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি নাগাদ সারা বিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকেই এ রোগে সবচেয়ে পর্যুদস্ত দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে ভারত। দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ১৭ লাখ ৮৭ হাজার ১৩ জন এবং মারা গেছেন মোট ১ লাখ ৬০ হাজার ৭২৬জন। যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত ওয়েবসাইট করোনা ওয়ার্ল্ডোমিটারে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যুর দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের পরই তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারত।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার ডোজগুলোর অধিকাংশই তৈরি করছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (এসআইআই), যার অবস্থান ও সদর দফতর ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের পুনে জেলায়। বিশ্বের ৭৬ টি দেশে ইতোমধ্যে এসআইআইয়ের প্রস্তুতকৃত অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার ৬ কোটি ডোজ রফতানি করেছে ভারত।
টিকার ডোজ রফতানি বিষয়ক সাম্প্রতিক স্থগিতাদেশের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে কোভ্যাক্স ইনিশিয়েটিভ প্রকল্প। দরিদ্র ও অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর দেশগুলোর টিকা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে ২০২০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং গ্যাভি টিকা বিতরণ সংস্থার যৌথ উদ্যোগে গঠন করা হয় এই প্রকল্প।
তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একান্ত বাধ্য হয়েই এই পদক্ষেপ নিয়েছেন তারা। বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পরিস্থিতি অন্তত কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত এটা (টিকার ডোজ রফতানি) সম্ভব হচ্ছে না। আমরা একেবারেই নিরুপায়।’
এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানতে ভারতের স্বাস্থ বিভাগ ও এসআইআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল বিবিসি, কিন্তু কোনো পক্ষই মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
গত ১৬ জানুয়ারি থেকে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে ভারত। ইতোমধ্যে এক কোটিরও বেশি মানুষকে টিকার আওতায় আনা হয়েছে। আগামী ১ এপ্রিল ৪৫ বছরের বেশি বয়স্ক মানুষদের টিকা দেওয়া শুরু হবে দেশটিতে।
সূত্র: বিবিসি