দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে নিউ জিলান্ড। স্বাগতিকদের আমন্ত্রণে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ ৬ উইকেটে ২৭১ রান তোলে। জবাবে অধিনায়ক টম ল্যাথামের সেঞ্চুরিতে জিতে যায় নিউ জিল্যান্ড। ক্রাইস্টচার্চে বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টায় ম্যাচটি শুরু হয়।
ক্রাইস্টচার্চে আগের ম্যাচের বেহাল দশা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ২৭১ রান এসেছিল বোর্ডে। পঞ্চাশতম ফিফটি তুলে তুমিম করেন ৭৮ রান। মাত্র ৫৩ বলে ৭৩ করেন মোহাম্মদ মিঠুন। পরে বল হাতে জেতার পরিস্থিতি তৈরি করেও বাংলাদেশ হেরেছে ৫ উইকেটে। তামিমদের পুড়িয়ে স্বাগতিক অধিনায়ক ল্যাথামই বনেছেন নায়ক। ৫৮ রানে জীবন পেয়ে দলকে জিতিয়ে তিনি করেছেন ১১০ রান। ৩ রানে জীবন পাওয়া নিশাম অপরাজিত পরে আউট হন ৩৪ বলে ৩০ রান করে। গুরুত্বপূর্ণ কিছু শটে খেলা করে দিয়ে যান সহজ। এই জয়ের সঙ্গে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজও নিশ্চিত করেছে স্বাগতিকরা।
উইকেটে বল একটু ধরছিল। ২৭১ রানের পুঁজি থাকায় এই ধরনের কারণেই আশা ছিল বাংলাদেশের। কিউই দুই ওপেনার হেনরি নিকোলস আর মার্টিন গাপটিল আনেন সতর্ক শুরু। কিন্তু মোস্তাফিজ তাদের ভোগাচ্ছিলেন ভালই।
গাপটিল কাবু হন ফিজের কাটারেই। দলের ২৮ রানে সোজা ক্যাচ তুলে দেন উপরে। উইকেটের মন্থরভাব দেখে ৮ম ওভারেই স্পিনার ডাকেন তামিম। স্লিপে ফিল্ডার রেখে বাড়ান চাপ। সেই চাপে কাবু হয় নিউজিল্যান্ড। শেখ মেহেদীর এসে পর পর হেনরি নিকোলস, উইল ইয়ংকে আউট করে দেন। নিকোলস স্লগ সুইপ করতে গিয়ে হোন বোল্ড। পেছনের দিকে রান বের করতে গিয়ে একই দশা হয় ইয়ংয়ে। ৫৩ রানে ৩ উইকেট তুলে বাংলাদেশে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণে আসে।
এরপর অধিনায়ক টম ল্যাথামের সঙ্গে জমে উঠে ডেভন কনওয়ের জুটি। জুটি ভাঙ্গতে অবশ্য সহজ রান আউটের সুযোগ হাতছাড়া করেন তাসকিন। শেখ মেহেদীর বলে একবার ক্যাচ উঠিয়েও ফাঁকায় পড়ায় রক্ষা হয় কনওয়ের।
শতরানের জুটিতে তারা আশা ফিকে করে দিচ্ছিলেন বাংলাদেশের। এই জুটি ভাঙতে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রথমবার বল করতে আসেন মোহাম্মদ মিঠুন। তাতেও কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত অধিনায়ক তামিমই ভেঙ্গেছেন জুটি। ৩৪তম ওভারে তাসকিনের বলে মিড অফে ঠেলে এক রান নিতে চেয়েছিলেন কনওয়ে। সেখানে দাঁড়ানো তামিম বল ধরে দারুণ থ্রোতে ভেঙ্গে দেন স্টাম্প। ৯৩ বলে ৭২ করে ফেরেন কনওয়ে।
এরপরই বাংলাদেশের বাজে ফিল্ডিংয়ের সেই হতাশার গল্প। পুরো ম্যাচে অনেকগুলো বল হাত ফসকে বেরিয়ে রান বেরিয়েছে। মাহমুদউল্লাহ সহজ চার ধরতে পারেননি, আরেকবার তার হাতে রেখে ব্যাটসম্যানরা নিয়েছে ২ রান। হাত ফসকে ৪ দিয়েছেন শেখ মেহেদীও।
মোস্তাফিজ শেষের স্পেলে নিশামকে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ বানিয়েছিলেন। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ল্যাথাম পরে ১০১ বলে বাউন্ডারি মেরে পুরো করেন সেঞ্চুরি। আর কোন শঙ্কা থাকেনি কিউইদের
টস হেরে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের ইনিংস এর আগে রাঙিয়েছিলেন তামিম আর মিঠুন। লিটন দাস দ্রুত ফিরে যাওয়ার পর সৌম্য সরকারকে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ৮১ রানের জুটি আনেন তিনি। শুরুতে ধুঁকেও পরে থিতু হওয়া সৌম্য ইতিবাচক কিছুর আভাস দিচ্ছিলেন। কিন্তু তার আউটেই ভাঙ্গে জুটি।
ফিফটির ফিফতি করে তামিম হয়েছেন আরও দুর্বার। নিশামের ফুটবল স্কিলে দুর্ভাগ্যজনক রানআউটে কাটা পড়ে হাতছাড়া করেন সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের বাকি ইনিংসে নায়ক ছিলেন একজনই। মোহাম্মদ মিঠুন। ঝড়ো ফিফটিতে দলকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার পুরো কৃতিত্ব তার।
মুশফিক যখন নামেন তখন ছিল কেবল রান বাড়ানোর তাড়া। এমন অবস্থায় বলে-রানে ভারসাম্য রাখতে মুশফিক কিছুটা ভুগছিলেন। কিছুটা বাড়তি ডটবলের চাপ বাউন্ডারিতে কমান। কিন্তু পুরোটা পুষিয়ে দেওয়ার আগে ফিরতে হয়েছে তাকে। ৪১তম ওভারে স্যান্টনারের বল পেটাতে গিয়ে ক্যাচ যায় মিড অনে। ৫৯ বল খেলে ৩৪ করেন মুশফিল। মোহাম্মদ মিঠুন শুরু থেকেই ছিলেন সাবলীল। বল নষ্ট না করে রান আনতে থাকেন তিনি। ৪৩ বলে ছক্কা মেরে পুরো করেন ফিফটি।
শেষের ঝড়ের প্রত্যাশা ছিল আরেকজনের ব্যাটে। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ ঠিক সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি। ৪৮তম ওভারে জেমিসনের বলে ক্যাচ উঠিয়ে ফেরার সময় তার রান ছিল ১৭ বলে ১৬।
মিঠুন আর হাল ছাড়েননি। একদম শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন। ইনিংসের শেষ বলেও মেরেছেন বাউন্ডারি। তার ৫৭ বলে ৬ চার, ২ ছক্কার তার ৭৩ রানের ইনিংসটাই বাংলাদেশকে দিয়েছিল অক্সিজেন। কিন্তু তা আর কাজে লাগানো গেল কই!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৭১/৬ (তামিম ৭৮, লিটন ০, সৌম্য ৩২, মুশফিক ৩৪, মিঠুন ৭৩*, মাহমুদউল্লাহ ১৬, শেখ মেহেদী ৭, সাইফুদ্দিন ৭* ; বোল্ট ১/৪৯, হেনরি ১/৪৮, জেমিসন ২/৩৬, নিশাম ০/৭৩, স্যান্টনার ২/৫১, মিচেল ০/৮)
নিউজিল্যান্ড: ৪৮.২ ওভারে ২৭৫/৫ (গাপটিল ২০, নিকোলস ১৩, কনওয়ে ৭২, ইয়ং ১, ল্যাথাম ১১০*, নিশাম ৩০, মিচেল ১২*; মোস্তাফিজ ২/৬২, তাসকিন ০/৬৭, শেখ মেহেদী ২/৪২, সাইফুদ্দিন ০/৪৩, মিরাজ ০/৩৮, মিঠুন ০/১২, সৌম্য ০/৭)
ফল: নিউজিল্যান্ড ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: টম ল্যাথাম।
সিরিজ: ১ ম্যাচ বাকি রেখে নিউজিল্যান্ড ২-০ ব্যবধানে জয়ী।