বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য এ বছরের মধ্যে করোনা টিকা বিনামূল্যে সরবরাহ করবে জাতিসংঘ শিশু তহবিল-ইউনিসেফ। ইতোমধ্যে ১ কোটি ৯ লাখ ৮ হাজার কোভ্যাক্স বিনামূল্যে সরবরাহ করা হবে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সহজশর্তে, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকা থেকে সংগ্রহ করা এই টিকার প্রথম ধাপ হিসেবে ২০ লাখ ডোজ আসছে। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে গত ৩ মার্চ স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সভায় এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।
প্রথম ধাপে ২০ লাখ ডোজ কোভেক্স ভ্যাকসিন উৎপাদন সংশ্লিষ্ট গ্যাভি দ্য ভ্যাকসিন এ্যালায়েন্স এবং ইউনিসেফের ক্রয় বিভাগের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে। এ ছাড়া ভ্যাকসিন শিপমেন্ট সংক্রান্ত কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান বলেন, আমরা আশা করেছিলাম, মার্চ মাসের শেষ দিকে কোভ্যাক্স থেকে ভ্যাকসিন আসবে। কিন্তু এখনই সেটি আসছে না। এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
সভায় জানানো হয়, বিশ্বব্যাংকের করোনা প্রকল্প তহবিল থেকে যে পরিমাণ অর্থ কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটির ভ্যাকসিন ও আনুষঙ্গিক মালামাল ক্রয়ের জন্য ব্যয় করার কথা ছিল তা প্রয়োজন হয়নি। প্রকল্পের ১৩৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে আরও টিকা কেনা যেতে পারে।
সভায় ইউনিসেফ প্রতিনিধি জানান, নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচির ভ্যাকসিন বরাবরই ইউনিসেফ ক্রয় করে আসছে। এমনকি কোভ্যাক্স থেকে সারাবিশ্বে যে টিকা প্রদান করা হচ্ছে, সেখানেও ইউনিসেফ ক্রয় বিভাগ কাজ করছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সরকার টিকা ক্রয়ের ক্ষেত্রে ইউনিসেফের ক্রয় বিভাগকে কাজে লাগাতে পারে। এ ক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্ত আরও ভ্যাকসিন ক্রয়ের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক দরখাস্ত আহ্বান (ইওআই) প্রদানের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নেবে।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারী-শিক্ষার্থীদের মধ্যে করোনা টিকা দিতে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, মাদ্রাসাসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তালিকা সংগ্রহ করা হবে। একইভাবে চরাঞ্চল, পাহাড়ি অঞ্চলগুলো প্রযুক্তিগতভাবে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্যে করোনা টিকা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রচার বাড়ানো জরুরি।
এসব এলাকায় জনগণকে ভ্যাকসিন গ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণ ও রেজিস্ট্রেশনে স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিসহ স্থানীয় ধর্মীয় প্রতিনিধি এবং বিদ্যমান এনজিওগুলোকে সম্পৃক্ত করা হবে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে কর্মরত ও অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের করোনা ভ্যাকসিনেশনের আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুযায়ী বাংলাদেশে অবস্থানরত কূটনীতিকদের তালিকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বা প্রকল্পে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের তালিকা ভাগ করে তাদের কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে পাঠাতে হবে।
সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিক, যারা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে (পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ, মেট্রোরেল প্রকল্প) অবস্থান করছেন, তাদের তালিকা নিজ নিজ বিভাগ দেবে।
করোনা ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সভা অনুযায়ী, করোনাকালে যেসব হোটেলে কোয়ারেন্টিন সেবা দিয়েছে বা এখনও চালু আছে, সেসব হোটেলে কর্মরত-কর্মচারীদের অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি করে তাদেরও টিকা দেওয়া হবে। একইভাবে অন্য ৫ তারকা হোটেলে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অগ্রাধিকার তালিকা প্রস্তুত করা হবে।
এ ছাড়া চলমান করোনা ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে কয়েকটি খাতে অর্থ সংস্থান বিষয়ে আলোচনা করা হয়। বিশেষ করে দেশব্যাপী স্বাস্থ্যকর্মী (চিকিৎসক, ভ্যাকসিন প্রদানকারী নার্স, স্বেচ্ছাসেবক, পরিসংখ্যানবিদ, এমটি-ইপিআই) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের সুবাদে ইনসেনটিভ/প্রণোদনা দেওয়া হবে।
ভ্যাকসিনেশন সনদপ্রাপ্তি নিয়ে আলাচনায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব প্রশাসন বলেন, করোনা ভ্যাকসিনেশনের দুই ডোজ প্রাপ্তির পর সুরক্ষা ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গ্রহীতাদের সনদ প্রদানের সুযোগ থাকার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত সফটওয়্যার আপডেট হয়নি। এ অবস্থায় আইসিটি বিভাগের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষ বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে।