শরীয়তপুর জেলা জজ আদালতের সাবেক পিপি হাবীবুর রহমান ও তার ভাই মনির হোসেন হত্যা মামলার রায়ে ছয়জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত।
একই সঙ্গে সাতজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও ৩৯ জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। ২০ বছর পর রোববার (২১ মার্চ) দুপুর ২টার দিকে শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. শওকত হোসাইন এ রায় দেন।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ২৬ জন আসামিকে প্রিজনভ্যানে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আনা হয়। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন শহীদ কোতায়াল, শহীদ তালুকদার, সোলায়মান সরদার, মজিবুর তালুকদার, সফিক কোতায়াল ও শাহিন কোতোয়াল।
বিষয়টি নিশ্চিত করে শরীয়তপুর জেলা জজ আদালতের পিপি মীর্জা মো. হযরত আলী বলেন, এ মামলায় ১৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ছয়জনকে ফাঁসি দিয়েছেন আদালত। রায়ে আমরা খুশি নই। কারণ অনেক অপরাধী খালাস পেয়েছেন। এজন্য উচ্চ আদালতে আপিল করব।
সাবেক পিপি হাবীবুর রহমানের ছেলে জেলা জজ আদালতের এপিপি ও পৌরসভার মেয়র পারভেজ রহমান বলেন, বাবা ও চাচার হত্যার বিচারের রায়ে খুশি হইনি। যাদের বিরুদ্ধে বাবা ও চাচা হত্যার প্রমাণ রয়েছে তাদের অনেকেই খালাস পেয়েছেন। এজন্য উচ্চ আদালতে আপিল করব।
আসামিপক্ষের আইনজীবী মাসুদুর রহমান মাসুদ বলেন, আদালত যে রায় দিয়েছেন তার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব আমরা।
মামলার এজাহার ও বাদীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন জাজিরা উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মোবারক আলী সিকদার। স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গ। তখন আওরঙ্গের পক্ষে অবস্থান নেয় স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ।
১ অক্টোবর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জাজিরা উপজেলার কয়েকটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত হয়। স্থগিত হওয়া নির্বাচন নিয়ে ৫ অক্টোবর শহরে হাবীবুর রহমানের বাসভবনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে সভা চলছিল। সেখানে হামলা চালান আওরঙ্গ সমর্থক যুবলীগের সাবেক নেতা সরোয়ার হোসেন বাবুল তালুকদারের লোকজন। তার ভাই মন্টু তালুকদার সেখানে গুলিবিদ্ধ হন। কিছুক্ষণ পর ওই বাসভবনে আবার হামলা চালানো হয়। তখন হাবীবুর রহমান ও তার ভাই মনির হোসেন খুন হন। হাবীবুর রহমান তখন আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মনির হোসেন ছিলেন পৌরসভা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
এ ঘটনায় হাবীবুর রহমানের স্ত্রী জিন্নাত রহমানের করা হত্যা মামলায় আওরঙ্গকে প্রধান আসামি করা হয়। মোট ৫৫ ব্যক্তিকে আসামি করেন তিনি। পুলিশ তদন্ত শেষে আওরঙ্গের নাম বাদ দিয়ে ২০০৩ সালে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। মামলার বাদী তখন আদালতে নারাজি দেন। ওই আবেদন নামঞ্জুর করেন আদালত।
এরপর জিন্নাত রহমান উচ্চ আদালতে রিট করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে জিতে এমপি হয়েছিলেন আওরঙ্গ। তিনি নানাভাবে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। ২০১৩ সালের ৩ আগস্ট সড়ক দুর্ঘটনায় আওরঙ্গ মারা যান। এরপর উচ্চ আদালত মামলাটি পুনরায় তদন্ত করে পুলিশকে অভিযোগপত্র দাখিলের নির্দেশ দেন। ২০১৩ সালের অক্টোবরে আদালতে ৫৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। আওরঙ্গ ছাড়াও মামলার এজাহারভুক্ত আসামি শাহজাহান মাঝি ও স্বপন কোতোয়াল মৃত্যুবরণ করেছেন। মামলার চার আসামি পালিয়ে বিদেশ চলে যান।
চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে আসামিপক্ষ। এরপর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১৩ আসামিকে জামিন দেন। ২৬ আসামির জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠান। মামলার প্রধান আসামি সরোয়ার হোসেন বাবুল তালুকদারসহ ১৩ আসামি আদালতে হাজির না হওয়ায় ওই দিন তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।