সেনাবাহিনীর গত মাসের অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের বিভিন্ন শহর এবং উপশহর থেকে পালিয়ে দেশটির শত শত নাগরিক প্রতিবেশি থাইল্যান্ডের সীমান্তের দিকে ছুটছেন। থাই সীমান্তের কাছে মিয়ানমারের জাতিগত মিলিশিয়াদের নিয়ন্ত্রণাধীন কিছু এলাকায় এই নাগরিকদের ঢল শুরু হয়েছে।
থাইল্যান্ডের সীমান্ত এলাকার একটি মিলিশিয়া গোষ্ঠীর একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে। কয়েক দশক ধরে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইরত দেশটির বিদ্রোহীগোষ্ঠী কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়নের (কেএনইউ) একজন কর্মকর্তা বলেছেন, কেএনইউ নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডে প্রায় এক হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
মিয়ানমারের স্থানীয় মানবাধিকার গোষ্ঠী অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) বলেছে, অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তাবাহিনীর কঠোর অভিযানে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২১৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
কেএনইউর পররাষ্ট্র কল্যাণবিষয়ক প্রধান প্যাডোহ স্য ট্য নি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘শত শত মানুষ এখন আমাদের এলাকায় রয়েছে।’ তিনি বলেন, তাদের মধ্যে কেউ আন্দোলনের নেতা, কেউ নাগরিক অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং সরকারি কর্মী…। এছাড়া অনেকে পুলিশ ও সামরিক বাহিনী থেকে পলাতক কর্মকর্তা ও কয়েকজন সংসদ সদস্য এবং চিকিৎসকও সীমান্তে আশ্রয় নিয়েছেন।
কেএনইউর এই কর্মকর্তা বলেন, জাতিগত অপর একটি গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রিত শান রাজ্যের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তেও অল্প কিছু মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।
মিয়ানমারের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় দুই ডজনের বেশি জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে। তাদের মধ্যে কেএনইউ-ও রয়েছে। এই গোষ্ঠীটি দেশে সামরিক বাহিনীর অভ্যুত্থানের নিন্দা জানানোর পাশাপাশি প্রতিরোধ আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছে।
প্যাডোহ স্য ট্য নি বলেন, অভ্যুত্থানের আগে সরকারের সঙ্গে একটি অস্ত্রবিরতি চুক্তি হয়েছিল; বর্তমানে তা থমকে গেছে। আমরা জনগণের বিক্ষোভ-সমাবেশ এবং নাগরিক অসহযোগ আন্দোলন দৃঢ়ভাবে সমর্থন করছি। মিয়ানমারকে গণতান্ত্রিক ফেডারেশন হিসেবে গড়ার ডাক দিয়েছেন তিনি।
এসব বিষয়ে জানতে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারের একজন মুখপাত্রকে টেলিফোন করা হলেও কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
এদিকে, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে সীমান্তে পাড়ি জমানো শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে থাইল্যান্ড কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে দেশটির মায়ে সোট জেলার একটি এলাকায় ৪৩ হাজারের বেশি মিয়ানমারের শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করছে থাইল্যান্ড। এ সংক্রান্ত থাই সরকারের একটি পরিকল্পনার নথি দেখতে পেয়েছে রয়টার্স।
থাইল্যান্ডের সামরিক বাহিনীর কর্নেল প্রসান হেনপ্রাসার্ট বলেন, সীমান্তে টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেখানে যদি সংঘর্ষ হয় তাহলে আমাদের পরিস্থিতি মূল্যায়ন এবং এলাকা প্রস্তুত করতে হবে।