গত এক দশকে বিজ্ঞাপন না পেয়ে বন্ধ হয়ে গেছে কয়েকশ’ সংবাদপত্র। মূলত বিজ্ঞাপনের বাজারে বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রবেশ এ বাজারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। বিপাকে পড়ে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হয় বহু সংবাদপত্রকে। এমনকি বেশির ভাগ সময়ই মতের মিল না হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট আর রিপাবলিকানরাও স্বীকার করেছে, এসব প্রতিষ্ঠানের হাত থেকে স্থানীয় সাংবাদিকতাকে বাঁচানো প্রয়োজন। খবর দ্য ভার্জ।
গুগল ও ফেসবুক কীভাবে সংবাদ পরিবেশন করে গত শুক্রবার মার্কিন সিনেটের জুডিশিয়ারি সাবকমিটির শুনানিতে সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়। গত সপ্তাহে আনা এ-সংক্রান্ত নতুন একটি বিল এরই মধ্যে রিপাবলিকানদের সমর্থন পেয়েছে।
সিসিলাইন বিল হিসেবে পরিচিত বিলটির শিরোনাম, ‘জার্নালিজম কম্পিটিশন অ্যান্ড প্রিজারভেশন অ্যাক্ট অব ২০২১’। বিলে বলা হয়েছে, সংবাদ সংস্থাগুলো একসঙ্গে মিলে ফেসবুক-গুগলের মতো প্লাটফর্মের সঙ্গে আলোচনা করবে। এর মাধ্যমে এসব প্লাটফর্ম অনলাইনে কীভাবে খবর বিতরণ করবে সেই পথ ঠিক করা হবে। এরই মধ্যে অ্যামি ক্লোবাচার, জন কেনেডি ও কেন বাকের মতো সিনেটররা বিলের পক্ষে সই করেছেন।
শুক্রবার ক্যাপিটল হিলে শুনানির শুরুতে সিনেটর ও এ-সংক্রান্ত অনুসন্ধান কমিটির প্রধান ডেভিড সিসিলাইন বলেন, মার্কিন সাংবাদিকতার জগতে যে দুর্যোগ এসেছে, তা আদতে গণতন্ত্র ও নাগরিক সমাজের জন্য দুর্যোগ। প্রতিযোগিতায় অসম কোনো আচরণের কারণে বড় এসব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো সংবাদপত্র ও ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে এ কমিটি গঠন করা হয়।
কেন বাক বলেন, ডিজিটাল প্লাটফর্মে যারা রাজা হয়ে আছে, তাদের সিংহাসনচ্যুত করার জন্য এ বিল সঠিক পথ দেখাবে। তিনি বলেন, এটি সংবাদ সংস্থাগুলোর জন্য ভর্তুকি নয়, বরং গণতন্ত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য একটি সমান বিচরণ ক্ষেত্র তৈরি করবে।
গত জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়া থেকে নিজেদের সার্চ ইঞ্জিন সরিয়ে নেওয়ার হুমকি দেয় গুগল। কারণ গুগল বা ফেসবুকে খবর বা খবরের অংশ প্রকাশের জন্য সংবাদ সংস্থাকে অর্থ দিতে হবে বলে আইন প্রস্তাব করে অস্ট্রেলিয়া। ফেব্রুয়ারিতে বিলটি পাস হয় এবং নিউজ করপোরেশন ও অন্য প্রকাশকদের সঙ্গে চুক্তি রদ করে গুগল।
যখন এসব হচ্ছিল, সেই সময় মাইক্রোসফট একটি বিবৃতি দেয়। সেখানে প্রকাশকদের রক্ষায় অস্ট্রেলিয়ার প্রচেষ্টাকে সমর্থন জানানো হয়। গত মাসে দেয়া ওই বিবৃতিতে মাইক্রোসফটের প্রধান ব্র্যাড স্মিথ বলেন, ‘একটি বিষয় পরিষ্কার যে অন্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে যাওয়ার হুমকি দিলেও মাইক্রোসফট কখনো এমন হুমকি দেবে না।’
শুক্রবারের শুনানিতে স্মিথকে ডাকা হয় সাক্ষী হিসেবে। তিনি সিসিলাইন বিলের প্রতি নিজের সমর্থন জানান।
তবে শুনানি শুরুর আগে মাইক্রোসফটের বিরুদ্ধে কঠোর বিবৃতি দেয় গুগল। যদিও এ বিলে গুগলের ভয় পাওয়ার মতো যথেষ্ট কারণ আছে। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার ঘটনার পর। কারণ সিসিলাইন বিলে দুই দলেরই সমর্থন আছে। আবার বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর একচ্ছত্র আধিপত্যের বিরুদ্ধে এটি সাবকমিটির প্রথম পদক্ষেপ। পুরো ক্ষেত্রটি সংস্কারের জন্য কমিটি আর কী কী পদক্ষেপ নেয় সেটা এখন দেখার বিষয়।