নাশকতার এক মামলায় ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ দিকে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য কাদের মির্জার ভাগ্নে মাহবুবুর রশীদ মঞ্জু কাদের মির্জার গ্রেফতার দাবি করেছেন।
শুক্রবার দুপুর ১টায় নোয়াখালী জুডিশিয়াল কোর্টের বিচারক সোয়েব উদ্দিন খাঁন নাশকতার একটি মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। এ ছাড়া আরো তিনটি মামলায় বাদলের জামিনের আবেদন নাকচ হয়।
নোয়াখালী ডিবির (ওসি) হোসাইন আহম্মদ জানান, একটি নাশকতা মামলায় বৃহস্পতিবার বিকেলে আটকের পর আইনানুগভাবে শুক্রবার দুপুরে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। শুনানি শেষে বিচারক জামিনের আবেদন নাকচ করে বাদলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীপক জ্যোতি খীসা জানান, গ্রেফতারকৃত মিজানুর রহমান বাদলকে চাপরাশিরহাট পূর্ব বাজারে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেফতার দেখিয়ে নোয়াখালী বিচারক সোয়েব উদ্দিন খানের আদালতে পাঠানো হলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।
মাহবুবুর রশীদ মঞ্জু তার মামা কাদের মির্জাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বিগত দিনের কোম্পানীগঞ্জের অপরাজনীতির হোতা। সংবাদকর্মী বোরহান উদ্দিন মুজাক্কির এবং যুবলীগকর্মী আলাউদ্দিন হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জাকে এখনো পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়নি। নিহত আলাউদ্দিনের পরিবারের করা মামলা থানায় এখনো নথিভুক্ত করেনি। শুক্রবার সকাল ১০টায় নিজের ফেসবুক পেইজ থেকে লাইভে এসে তিনি এসব কথা বলেন।
মাহবুবুর রশীদ মঞ্জু কাদের মির্জার আপন বড় বোনের ছেলে। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে কাদের মির্জা বিরোধী বলয় থেকে মির্জা কাদেরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিস্ফোরক মন্তব্য করছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা একজন সংবাদকর্মী হারিয়েছি। আমরা দলের একজন নেতাকে হারিয়েছি। দুটো তাজা প্রাণ এ অপরাজনীতির হোতা (কাদের মির্জার) কারণে ঝরে গেছে। আমরা কোম্পানীগঞ্জের প্রশাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কোম্পানীগঞ্জের মানুষকে আজকের জিম্মি দশা থেকে মুক্ত করতে হলেই, একটিই পথ রয়েছে। সেটা হচ্ছে এ খুনি আবদুল কাদের মির্জাকে গ্রেফতার করা।’
মঞ্জু আরো বলেন, যেহেতু মিজানুর রহমান বাদলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাহলে কার ইঙ্গিতে, কাদের ইঙ্গিতে, কিসের ইঙ্গিতে কোনো উদ্দেশ্য, এখনো পর্যন্ত নিরাপত্তা দিয়ে আবদুল কাদের মির্জাকে বসুরহাট পৌরসভার এখানে এ পাগলকে শুয়ে রাখা হয়েছে। আজকে আমাদের প্রশ্ন। আমাদের কর্মী আলাউদ্দিনের পরিবারের করা মামলা দ্রুত সময়ের মধ্যে নথিভুক্ত করার জন্য কোম্পানীগঞ্জ থানাকে অনুরোধ জানান এবং মামলায় দেয়া আসামিদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতারের আহ্বান জানান।
অন্যথায় কোম্পানীগঞ্জে লাগাতার আন্দোলন এবং উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতির জন্য এ প্রশাসনকে দায়ী থাকতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
অন্য দিকে শুক্রবার সকালে থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো বসুরহাট বাজারের বিভিন্ন পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান করতে দেখা গেছে। কাদের মির্জা পৌর ভবনের ভেতরে অবস্থান করছেন। ভবনের চারপাশ পুলিশ ঘেরাও করে রেখেছে।
আবারো কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ও বিশৃঙ্খলা এড়াতে নোয়াখালীর পুলিশ সুপার ছাড়াও চট্টগ্রাম রেঞ্জের একজন এসপি, সার্বক্ষণিক দু’জন এএসপি এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়। এ ছাড়াও প্রায় ৩০ জন পুলিশ পরিদর্শকের নেতৃত্বে তিন শতাধিক পুলিশ, ডিবি পুলিশ ও র্যাবের দুটি টিম মোতায়েন রয়েছে।
এ বিষয়ে নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন জানান, ‘কোম্পানীগঞ্জে আর কোনোভাবে বিশৃঙ্খলা আমরা হতে দিবো না। সে লক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে মাঠে রয়েছে।’