যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় উপস্থাপিকা অপরাহ উইনফ্রের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ‘বোমা ফাটিয়েছিলেন’ ব্রিটিশ রাজপরিবারের ছোট পুত্রবধূ মেগান মার্কেল। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, তার সন্তানের শরীরের ত্বক ঠিক কতোটা কালো হবে, তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যরা। একইসঙ্গে রাজপরিবারের সদস্যরা এটা নিয়ে পেছনে পেছনে কথাও বলতেন।
তবে অপরাহ উইনফ্রে জানিয়েছেন, মেগান মার্কেলের ছেলে আর্চির গায়ের রং নিয়ে বিদ্বেষমূলক মন্তব্যকারী ব্যক্তি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ বা তার স্বামী ডিউক অব এডিনবার্গ নয় বলে নিশ্চিত করেছেন প্রিন্স হ্যারি।
স্থানীয় সময় সোমবার (৮ মার্চ) মার্কিন গণমাধ্যম সিবিএস নিউজকে উইনফ্রে বলেন, বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্যকারী ব্যক্তি রানি বা ডিউক অব এডিনবার্গ না হলেও অভিযুক্ত ব্যক্তি রাজপরিবারের কে- সে বিষয়টি আমাকে বলেননি হ্যারি।
উইনফ্রে বলেন, ‘অভিযুক্ত ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি প্রিন্স হ্যারি। তবে তিনি এতটুকু নিশ্চিত করেছেন যে, তার দাদি বা দাদা ওই ধরনের কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেননি।’
এ বিষয়ে আরও জিজ্ঞাসা করা হলে জনপ্রিয় এই উপস্থাপিকা বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিটি আসলে কে; এটা জানতে ক্যামেরার সামনে জিজ্ঞাসা করার পাশাপাশি ক্যামেরা বন্ধ থাকার সময়ও ব্যক্তিগত ভাবে জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রিন্স আমার কাছে অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেননি।
এর আগে অপরাহ উইনফ্রের সঙ্গে প্রিন্স হ্যারি ও মেগান মার্কেলের সাক্ষাৎকার মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল সিবিএস-এ প্রচারিত হলে সারা বিশ্বে আলোড়ন পড়ে যায়। সাক্ষাৎকারে মেগান মার্কেল বলেন, ‘তার সন্তান আর্চি জন্ম নেওয়ার আগেই তার গায়ের রং ঠিক কতোটা কালো হবে, তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যরা। আর তাদের এই ‘দুশ্চিন্তাই’ স্পষ্ট করে দেয় যে, তার ছেলেকে কেন প্রিন্স উপাধি দেওয়া হয়নি।’
এছাড়া বিয়ের পর (রাজপরিবারের) কারও কাছ থেকে কোনো ধরনের সাহায্য বা সহযোগিতা না পেয়ে নিজের ক্ষতি করার, এমনকি আত্মহত্যা করার কথাও তিনি চিন্তা করতে শুরু করেছিলেন বলে জানান ব্রিটিশ রাজপরিবারের এই ছোট পুত্রবধূ।
সাক্ষাৎকারে মেগান বলেন, ‘(আমার গর্ভে সন্তান আসার পর) তারা কেউই তাকে প্রিন্স বা প্রিন্সেস হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চাচ্ছিলেন না। এমনকি ছেলে হবে না মেয়ে; রাজপরিবারের কেউ এটাও জানতেন না। অর্থাৎ এটা প্রটোকলের বাইরে এবং বুঝতে পারি- জন্মের পর আমার সন্তান (প্রটোকল অনুযায়ী) নিরাপত্তা পেতে যাচ্ছে না।’
‘‘আমার প্রেগন্যান্সির সবগুলো মাসজুড়ে এই একই পরিস্থিতি চলছিল। অনাগত সন্তানের বিষয়ে ভেতরে ভেতরে কী কী কথাবার্তা চলছে সেগুলোও আমরা শুনতে পারছিলাম- ‘তাকে কোনো নিরাপত্তা দেওয়া হবে না, রাজপুত্র বা রাজকুমারী উপাধিও দেওয়া হবে না’। এমনকি আমার সন্তানের গায়ের রং ঠিক কতোটা কালো হবে- সে বিষয়েও আমাদের পেছনে তাদেরকে আলোচনা করতে শুনতে পেতাম।’’
এর আগে ব্রিটিশ রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যের দায়িত্ব থেকে বেরিয়ে আর্থিকভাবে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য কাজ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রিন্স হ্যারি এবং মেগান মার্কেল। ব্যক্তিগত খরচ চালানোর জন্য অনেক আগেই রাজকোষ থেকে ভাতা নেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছিলেন তারা।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে হ্যারি-মেগান দম্পতি ব্রিটিশ রাজপরিবারের প্রতিনিধিত্ব আর না করার সিদ্ধান্তের কথা জানান। স্বাধীন জীবনযাপন করতে তারা রাজপরিবার থেকে বেরিয়ে যান। বর্তমানে এই দম্পতি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাস করছেন।