সম্প্রতি অপরাহ উইনফ্রের সাথে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে অংশ নেন ব্রিটিশ রাজপুত্র হ্যারি এবং তার স্ত্রী মেগান। সাক্ষাৎকারে রাজপরিবারের অভ্যন্তরীণ বিষয়সহ মেগান এবং হ্যারি তাদের ব্যক্তিগত জীবনের নানা দিক তুলে ধরেন।
রাজ পরিবারের এই দম্পতির বক্তব্যে উঠে আসা ১২টি বিষয়ের উল্লেখ করা হল:
১. মানসিক স্বাস্থ্য সংকট
রাজপরিবারের সাথে থাকাকালীন নিজের আত্মহত্যা প্রবণতার কথা উল্লেখ করেন সাবেক ডাচেস অব সাসেক্স- মেগান মার্কল। তিনি বলেন, “আমি আর বাঁচতে চাইতাম না। বিষয়টি বেশ স্পষ্ট, বাস্তব এবং ভয়াবহভাবে সার্বক্ষণিক এক চিন্তা ছিল। এবং আমার মনে আছে, কীভাবে হ্যারি আমাকে সামলে নিত।” তিনি দাবি করেন বিষয়টি রাজবাড়িতে জানানো হলেও তারা তা আমলে নেয়নি।
২. বর্ণবাদের অভিযোগ
মেগান দাবি করেন, তার প্রথম সন্তান গর্ভে থাকাকালীন সন্তানের গায়ের রং নিয়ে রাজপরিবারে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়। তবে তিনি কারও নাম উল্লেখ করেননি। নাম প্রকাশ সম্পর্কে মেগান বলেন, “আমার মনে হয় এর ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।”
৩. কেটের সাথে বিবাদ
মেগান এবং হ্যারির বিয়ের আগে হ্যারির ভাই উইলিয়ামের স্ত্রী ডাচেস অব ক্যামব্রিজ কেটকে কাঁদিয়েছিলেন বলে মেগানের বিরুদ্ধে পত্রিকায় যে অভিযোগ উঠেছিল- তা মেগান পুরোপুরি উড়িয়ে দেন। মিডিয়ার সাথে সেই সময় তার সম্পর্কের পট-পরিবর্তন ঘটে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। কেটকে সত্যিই কাঁদিয়েছিলেন কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে মেগান বলেন, “বরং উল্টোটাই ঘটেছিল।”
৪. মেগানকে চুপ করানো হয়েছিল
“যে মুহূর্ত থেকে আমার আর হ্যারির বিষয়ে সবাই জানল, প্রত্যেকে আমাকে ‘মন্তব্য নেই’ বলতে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল।”
মেগান জানান, তিনি মনে করতেন রাজপরিবার থেকে তাকে সুরক্ষা দেওয়া হবে।
“যখন আমাদের বিয়ে হল, তখনই সবকিছু আরও বেশি খারাপ হওয়া শুরু করল। আমি বুঝলাম, আমাকে কেবল নিরাপত্তা দেওয়া হবে না, তা নয়… তারা হ্যারি এবং আমাকে নিরাপত্তা প্রদান না করার বিষয়টি জানাতেও চাইছিল না।”
এছাড়া, হ্যারির সাথে প্রণয়ের পর নিজে থেকে চুপ করে থাকেননি, বরং তাকে চুপ করানো হয়েছিল বলে অপরাহকে জানান মেগান মার্কল।
৫. হ্যারির ফোন ধরতেন না প্রিন্স চার্লস
হ্যারি জানান, তার বাবা প্রিন্স চার্লস রাজকার্য থেকে অব্যাহতির বিষয়ে ফোন ধরাই বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তবে, রানিকে অন্ধকারে রাখার বিষয়টি নাকচ করে দেন হ্যারি। তিনি বলেন, “আমার সাথে দাদীর তিনবার কথা হয়েছিল। বাবার সাথেও এবিষয়ে দু’বার কথা হয়, কিন্তু তারপর তিনি ফোন ধরা বন্ধ করে দেন। বাবা বলেছিলেন, তুমি কি সব কথা লিখিতভাবে দিতে পারবে?”
৬. প্রিন্স হ্যারির খরচ
হ্যারি জানান, ২০২০ সালের শুরু থেকেই তিনি রাজ পরিবার থেকে তার জন্য অর্থ বরাদ্দ বন্ধ হয়ে যায়। তিনি জানান, নিজের নিরাপত্তার খরচ যোগাতেই তারা নেটফ্লিক্সসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে আকর্ষণীয় চুক্তিতে যান।
এর বাইরে হ্যারির কাছে কেবল প্রিন্সেস ডায়ানার রেখে যাওয়া অর্থ বাকি ছিল। তবে, মেগান জানান অপরাহ’র ইন্টারভিউ এর জন্য তারা কোনও অর্থ নেননি।
৭. গোপনে বিয়ে
মেগান জানান ২০১৮ সালের ১৯ মে জনসম্মুখে তাদের বিয়ের অনুষ্ঠানের তিন দিন আগেই তারা গোপনে বিয়ে করেছিলেন। মেগান জানান, বাড়ির পেছনের প্রাঙ্গনে কেবলমাত্র তারা দুইজন ক্যান্টারবারির আর্চবিশপের সামনে প্রতিশ্রুতি বিনিময় করেন।
৮. দ্বিতীয় সন্তানের লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশ
হ্যারি এবং মেগান জানান তাদের দ্বিতীয় সন্তানটি মেয়ে হতে চলেছে। হ্যারি বলেন, “আগে এক ছেলে আর এখন মেয়ে, এর বেশি আপনি আর কি চাইবেন, আমাদের পরিবার পূর্ণাঙ্গ।”
এই দম্পতি আরও জানান, এটাই তাদের শেষ সন্তান।
৯. বাইরে যাওয়ার অনুমতি মিলত না মেগানের
মেগান জানান, তিনি ঘর থেকে বেরোনোর জন্য সচরাচর অনুমতি পেতেন না। কেননা, রাজবাড়ির মানুষ সর্বদা “বিষয়টি কেমন দেখাবে” – তা নিয়ে চিন্তির থাকত।
১০. হ্যারির আটকে পড়া
অপরাহ হ্যারিকে জিজ্ঞেস করেছিলেন হ্যারি মেগানের জন্যই রাজকার্য থেকে অব্যাহতি নিয়েছিলেন কি না। হ্যারি মেগানের বিষয়টি উড়িয়ে দেন। হ্যারি জানান, তিনি আটকা পড়েছিলেন, কিন্তু আগে তা বুঝতে পারেননি।
অপরাহ বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, “প্রাচীন ঐতিহ্যের বেড়াজালের ভেতর আটকে পড়া, ঠিক যেমন ভাবে আমার পরিবারের অন্য সদস্যরা আটকে আছেন।”
১১. রানি ছিলেন ‘অসাধারণ’
তবে, রাজবাড়ির পুরো সময়টা খারাপ ছিল না। মেগান জানান, রানি সবসময়ই ‘দারুণ’ ছিলেন। তিনি এক ট্রেন ভ্রমণের কথা স্মরণ করে জানান রানি তাকে মুক্তোর কানের দুল আর নেকলেস উপহার দিয়েছিলেন। সেবার রানির সাথে মেগান কম্বলও ভাগাভাগি করে নিয়েছিল।
প্রিন্স হ্যারি জানান, দাদীর সাথে তার সম্পর্ক দারুণ। “উনি আমার কমান্ডার-ইন-চিফ” বলেন হ্যারি।
১২. মুরগি উদ্ধার
অপরাহ এই দম্পতির সান্তা বারবারার বাড়িতে তাদের সাক্ষাৎকার নেন। পুরো সাক্ষাৎকারকালেই চারপাশে একদল মুরগি ঘোরাঘুরি করছিল। মুরগিগুলো এক খামার থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। মুরগির এই দলের নাম ‘আর্চি’স চিক ইন।’
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান