তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আজ ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু এই ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর ২১ বছর এ ভাষণ বাজেনি। রাষ্ট্রীয় সমস্ত অনুষ্ঠানে এ ভাষণ নিষিদ্ধ ছিল, এমনকি বঙ্গবন্ধুর নামটিও নিষিদ্ধ ছিল।
‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ : বাঙালির মুক্তির সড়ক’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। রোববার (৭ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। প্রেসক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন এতে সভাপতিত্ব করেন।
তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের আবেদন ৫০ বছর আগে যেমন ছিল, আজ ৫০ বছর পর সেই একইরকম আবেদন আছে। এখনও মানুষ এ ভাষণ শুনে উদ্দীপ্ত হয়।
‘এ ভাষণ নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করেছিল তারা আজ ৭ মার্চ পালন করছে’ মন্তব্য করে হাছান মাহমুদ বলেন, কোনো দুরভিসন্ধি নিয়ে তারা আজ ৭ মার্চ পালন করছে জানি না। তবে তাদের আমি অনুরোধ জানাব, ইতিহাস বিকৃতি করে কোনো লাভ হয়নি। বঙ্গবন্ধুকে মানুষের মণিকোঠা থেকে মুছে ফেলা যায়নি বরং বঙ্গবন্ধু তার স্বমহিমায় নতুন প্রজন্মের মনের গভীরে প্রোথিত হয়েছেন।
সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সাড়ে সাত কোটি বাঙালির মনের কথা। তিনি তার ভাষণের মাধ্যমে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। এই ভাষণ শুধু বাঙালির মুক্তির পথ দেখায়নি, এ ভাষণ মানবমুক্তির পথও দেখিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, বিশ্বের অনন্য ভাষণের একটি বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন ভাষণ দিয়েছিলেন আমেরিকার গৃহযুদ্ধ বন্ধের জন্য আর বঙ্গবন্ধুর ভাষণ একটি দেশ স্বাধীন করার জন্য। সুতরাং বঙ্গবন্ধুর ভাষণ অনন্য।
তিনি আরও বলেন, যারা একসময় বঙ্গবন্ধুর ভাষণের বিরোধিতা করেছেন, তারা আজ নতুনভাবে পালন করছেন। তবে তারা সুযোগ পেলে ভবিষ্যতে আবার ইতিহাস বিকৃত করবে।
সিনিয়র সাংবাদিক অজিত কুমার সরকার সেমিনারের মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, বঙ্গবন্ধু ছিলেন উদার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী একজন মানুষ। ৭ মার্চের ভাষণেও আমরা এর প্রতিফলন দেখতে পাই। তিনি গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করেছেন। ১৯৭১ সালের মার্চে সশস্ত্ররূপ লাভের আগ পর্যন্ত আন্দোলনকে সহিংসরূপ নিতে তিনি দেননি। ন্যায্যতার প্রতি তিনি অবিচল আস্থাশীল ছিলেন।
প্রবন্ধে আরো উল্লেখ করা হয়, বঙ্গবন্ধু খুব ভালো করেই জানতেন পাকিস্তানি সামরিক কর্তৃপক্ষ জনগণের উপযুক্ত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। তাই ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে সামরিক কর্তৃপক্ষকে চারটি শর্ত জুড়ে দেন যা পাকিস্তানের অস্তিত্বকেই চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দেয়।
সাংবাদিক আইয়ুব ভুঁইয়ার সঞ্চালনায় সাংবাদিক নেতা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্বপন সাহা, সাবেক সভাপতি ও যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলমসহ প্রমুখ সাংবাদিক নেতা বক্তব্য দেন। এছাড়া প্রেসক্লাবের সিনিয়র সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।