spot_img

বিশ্বজুড়ে আলোচিত হচ্ছে মিয়ানমারের ‘জেনারেশন জেড’

অবশ্যই পরুন

মিয়ানমারে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনে এ পর্যন্ত অন্তত ৫৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে অধিকাংশই তরুণ ও যুবক। তবে এ প্রাণহানিও আন্দোলনের গতি কমাতে পারেনি। প্রতিদিন ইয়াঙ্গুনসহ দেশটির বিভিন্ন শহরে চলছে বিক্ষোভ। জান্তা সরকারকে যেতেই হবে- এমন সংকল্প নিয়ে মাঠে নেমেছেন বিক্ষোভকারীরা।

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান নতুন কিছু নয়। দেশটির স্বাধীনতার ৭২ বছরে মাত্র ১৫ বছর শাসন করেছে বেসামরিক সরকার। বারবার সেনাশাসনের কবলে বিপর্যস্ত হয়েছে মিয়ানমার। তবে এবার ক্ষমতা দখল করে ভিন্ন এক পরিস্থিতির মুখে পড়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। নজিরবিহীন বিক্ষোভের মুখে পড়েছে তাদের জান্তা সরকার। দেশটির তরুণ-যুবকরা যেভাবে বন্দুকের সামনে রাস্তায় নেমেছেন তাতে রীতিমতো তটস্থ শাসকগোষ্ঠী। তরুণ-যুবকদের সমন্বয়ে ‘জেনারেশন জেড’ এর আন্দোলন এখন বিশ্বজুড়ে আলোচিত হচ্ছে।

বিবিসি বার্মিজের প্রতিবেদক নাইনে চাং আয়ে প্রথম থেকেই ইয়াঙ্গুন থেকে জান্তা সরকারের ক্ষমতা দখল ও তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের খবর সংগ্রহ করছেন। আন্দোলনে তরুণদের ভূমিকা বিবিসির এক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছেন তিনি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় এক মাস মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটির ক্ষমতা দখল করেছে। এ সময়ে ইন্টারনেট বন্ধ, দিন-রাতে তল্লাশি, অবৈধ গ্রেফতার, রাস্তায় মারধর, অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলির ঘটনা ঘটছেই। গেল এক সপ্তাহে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজন তরুণীও প্রাণ হারিয়েছেন। মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার সময়ে তার পরনে থাকা টিশার্টে লেখা ছিল ‘সবকিছু ঠিক থাকবে।’

ইয়াঙ্গুন ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় এখন কেবলই ধোঁয়ার গন্ধ। শিশুরা টিয়ারগ্যাস এবং বিস্ফোরকের গন্ধে অতিষ্ঠ। এটি ‘কিছুই না’ বলে বোঝানোর চেষ্টা ছাড়া তাদের মায়েরা কোনো উত্তর দিতে পারছেন না। প্রকাশ্যে গুলি, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারগ্যাস, জলকামান সবকিছুই চিনছে মিয়ানমারের শিশু-কিশোর-তরুণরা। গেল এক মাসে এর সবই দেখেছে তারা। তবুও প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ নতুন করে বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন। জান্তা সরকারের নৃশংসতায় দেশটির নাগরিকদের ক্ষোভ বাড়ছেই। তবে বিক্ষোভকারীরা এখনও বেশিরভাগই শান্তিপ্রিয়।

শিক্ষার্থী, সন্নাসী, নারী, সরকারি চাকরিজীবী, এমনকি পুলিশ কমকর্তারাও আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন। কিছু পুলিশ সদস্য জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথাও বলছেন। তারা বলছেন- ‘আমরা আর জান্তা সরকারের কর্মচারী নই।’ ফলে এখন পর্যন্ত বিরোধীরা সংগঠিত এবং তাদের অবস্থানে অনড়। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

বিক্ষোভে সাধারণত হাততালি কিংবা গান গেয়ে প্রতিবাদ করছে মানুষ। ‘সরোং’ (ঐতিহ্যবাহী পোশাক) পরেও রাস্তায় নামছেন বিক্ষোভকারীরা। তাদের ধারণা- সরোং পরিহিতদের দেখলে সেনারা ভয় পান এবং এটি তাদের আধ্যাত্মিক শক্তি দুর্বল করে দিতে পারে।

মূল সড়কের বিক্ষোভ ও অবস্থান খুব দ্রুত এবং সহজেই ছত্রভঙ্গ করে দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ জন্য বিক্ষোভকারীরা সড়কের আশপাশে নিজেদের অবস্থান নেয়ার জন্য জায়গা তৈরি করে নিচ্ছেন। আত্মরক্ষার্থে কেউ রাখছেন বালুর বস্তা কেউবা ডাস্টবিন সামনে রেখে অবস্থান নিচ্ছেন। তাদের মাথায় থাকছে হেলমেট। বিক্ষোভে অংশ নেওয়ারা একে-অপরকে সবসময় সহযোগিতা করছেন। তারা খাবার ভাগাভাগি করে খাচ্ছেন। লক্ষ্য একটাই- ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন সেনাশাসনের কবলে না পড়ে। তারা শেষপর্যন্ত এ আন্দোলন চালিয়ে যেতে চান।

রাতে তারা বাড়ির ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থালা-বাসন বাজাচ্ছেন এবং বিভিন্ন স্লোগানে জান্তা সরকারের অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদ করছেন। ঐতিহ্যগতভাবে তাদের বিশ্বাস- এটি সকল খারাপকে দূর করে। স্লোগানে তাদের বলতে শোনা যাচ্ছে- ‘পৃথিবীর শেষ পর্যন্ত আমরা ভুলব না’, ‘রক্তের শপথ’, ‘শেষ পর্যন্ত লড়ব’ ইত্যাদি।

জান্তা সরকারকে যেতেই হবে

তরুণ-তরুণীরা রাস্তাজুড়ে বিভিন্ন চিত্র এঁকে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। ইয়াঙ্গুনসহ বড় বড় শহরগুলোর সড়কে চোখে পড়ছে এসব পেইন্টিং। সেখানে লেখা- ‘আমরা গণতন্ত্র চাই’, ‘সেনাবাহিনীকে বর্জন কর’ ইত্যাদি। কিন্তু পরদিন সকালে তা আর রাস্তায় থাকছে না। মুছে দিচ্ছে সেনারা।

তবে বিক্ষোভে অংশ নেয়া তরুণরা বলছেন- আগের দিন করা তাদের পেইন্টিং যেমন পরদিন সকালে থাকছে না, জান্তা সরকারকেও সেভাবে বিদায় নিতে হবে।

প্রতিবাদকারীরা বেশিরভাগ সময়ই মুখে মাস্ক, চোখে গ্যাস থেকে বাঁচতে ভিন্ন ধরনের চশমা পরছেন। মাস্ক খুলে বিবিসিকে এক বিক্ষোভকারী জানান, ‘জান্তা সরকারের সমাপ্তি আমরাই দেখে যেতে চাই।’ তিনি তার হেলমেটে রক্তের ধরন এবং আত্মীয়ের নম্বর লিখেছেন।

‘জেনারেশন জেড’; যারা এ আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। তারা বলছেন- জান্তা সরকার রক্ত নিয়ে খেলছে। তবে এর মূল্য তাদেরকে দিতেই হবে। সহিংসতা ও সন্ত্রাস সহজে মুছে যায় না। জান্তা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে তা মুছবে বলে মনে করেন তরুণরা। এক কথায় তরুণ প্রজন্ম তাদের জান্তা সরকারের পতন ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে সংকল্প করেই যেন রাস্তায় নেমেছে। সকলের মুখে একই স্লোগান- ‘জান্তা সরকারের পতন আমাদের যুগেই হবে।’

সর্বশেষ সংবাদ

সশস্ত্রবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা বাড়লো আরও ৬০ দিন

বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ও এর ওপরের সমপদমর্যাদার কর্মকর্তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতার মেয়াদ আরো দুই মাস (৬০...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ