মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে চলমান বিক্ষোভে নিহত এক তরুণীর লাশ কবর থেকে তুলে নিয়ে গেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। বুধবার (৩ মার্চ) দেশটির মান্দালয় এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে চীনা বংশোদ্ভূত কায়ল সিনের (১৯) মৃত্যু হয়। ওই তরুণীর লাশ সমাহিত করার একদিন পর শুক্রবার (৫ মার্চ) বিকেলে মিয়ানমারের সৈন্যরা কবর থেকে তুলে নিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বুধবার মান্দালয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে শুরু হলে ওই তরুণীর মাথায় গুলি লাগে। এ সময় পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সত্যিকারের গোলাবারুদ ব্যবহার করেছিল পুলিশ।
চীনা বংশোদ্ভূত ওই তরুণীকে আয়ে ইয়াইক নেইন নামক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, শুক্রবার দুপুর ৩টার দিকে সৈন্যরা ট্রাক নিয়ে কবরস্থানে উপস্থিত হয়ে এর প্রবেশপথ বন্ধ করে দেয়। এরপর সেখানকার কর্মীদের বন্দুকের মুখে আটকে রেখে তারুণীর লাশ তুলে নিয়ে যায়।
এর আগে শুক্রবার সকালে দেশটির রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদপত্রগুলো জানিয়েছিল, নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ওই নারীর মারা যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে, সত্যি যদি তার মাথায় আসল গুলি লাগত তবে তার চেহারা ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যেত।
এ সংবাদ প্রকাশের পরই দেশটির সেনাবাহিনী ওই নারীর লাশ নিয়ে যায়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ওই নারীর মৃত্যুর মূল কারণ অনুসন্ধান করবেন বলে জানানো হয়েছে।
গত মাসেও নেইপিদোতে সেনা শাসনবিরোধী বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে মাথায় গুলি লেগে এক তরুণীর মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট দেখিয়ে দেশটির সেনাবাহিনী ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে। সেনাবাহিনী থেকে বলা হয়, ওই নারীর মাথায় যে গুলি লেগেছিল তা নিরাপত্তা বাহিনীর নয়।
এদিকে আজ শুক্রবারও মান্দালয় শহরে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি ছুড়েছে পুলিশ। এতে একজন নিহত হয়েছেন। অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৫৪ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। গত বুধবার এক দিনে ৩৮ জন বিক্ষোভকারী নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হন।
গত ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সু চির সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। এ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশটির সর্বময় ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং। এসময় স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টকে গ্রেফতার করা হয়। অভ্যুত্থানের পর থেকে এর বিরুদ্ধে রাজপথে বিক্ষোভ করে আসছেন হাজারো মানুষ।
সূত্র: রয়টার্স ও দ্য ইরাবতি