চলতি মাসের ২৭ তারিখ থেকে শুরু হতে চলা পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন ২০২১ অন্যান্য নির্বাচনগুলোর তুলনায় আনন্দময় ও উপভোগ্য হবে বলে মন্তব্য করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য সরকারে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।
শুক্রবার কলকাতার কালীঘাটে নিজ বাড়ির দপ্তর থেকে বিধানসভা নির্বাচনে দলের চুড়ান্ত প্রার্থীতালিকা প্রকাশ অনুষ্ঠানে মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘ যেমনটা আমি কথা দিয়েছিলাম, সে অনুযায়ী নন্দীগ্রাম থেকেই (এবারের নির্বাচনে) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব; আর ভবানীপুরে (বর্তমান আসন) এবার তৃণমূলের প্রার্থী হবেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়।’
‘আশা করি, এবারের নির্বাচন খুবই উপভোগ্য ও আনন্দময় হবে।’ হাস্যোজ্জল কণ্ঠে বলেন তৃণমূল সভানেত্রী।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারে ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে আসীন সিপিএম সরকার পতনে ২০০৭ সালে যে আন্দোলন শুরু করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস, তার উৎস বা আঁতুড়ঘর ছিল সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম।সে বছর ভারতীয় গাড়ি প্রস্তুকারী প্রতিষ্ঠান টাটার ন্যানো গাড়ির কারখানার জমি অধিগ্রহণবিরোধী আন্দোলন আর রসায়নশিল্প গড়ার জন্য প্রস্তাবিত জমি অধিগ্রহণবিরোধী আন্দোলনে সিঙ্গুর আর নন্দীগ্রাম উত্তাল হয়ে উঠেছিল।
আর ওই আন্দোলনের জেরে ২০১১ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে ৩৪ বছরের বাম শাসনের ভরাডুবি হয়। নির্বাচনে জিতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন তৃণমূল কংগ্রেস সভানেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।
মমতা বন্দোপাধ্যায় যে এবার নন্দীগ্রাম থেকে নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছেন, দু’দিন আগেই সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তার গুঞ্জন ছড়িয়েছিল। রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন— নন্দীগ্রামে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিজের নাম ঘোষণার মাধ্যমে মমতা বন্দোপাধ্যায় দলের সাবেক ‘হেভিওয়েট’ নেতা শুভেন্দু অধিকারীর চ্যালেঞ্জের জবাব দিলেন।
গত ডিসেম্বরে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া শুভেন্দু অধিকারী এবারের বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রাম থেকে অংশগ্রহণ করতে চান। বৃহস্পতিবার এক জনসভায় তিনি বলেন, নন্দীগ্রামে তৃণমূল নেত্রীকে অন্তত ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারানোর ক্ষমতা রয়েছে তার।
নন্দীগ্রাম থেকে বিজেপি এবার শুভেন্দু অধিকারীকে মনোনয়ন দেবে কিনা, এখনো তা চুড়ান্ত হয়নি; তবে নির্বাচনকে ঘিরে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিকদের যে ব্যাপক দলবদল হয়েছে, সেখানে শুভেন্দুকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিক হিসেবে বিবেচনা করছে বিজেপি।
মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘নন্দীগ্রাম বরাবরই আমার জন্য সৌভাগ্য বয়ে এনেছে। সেখানকার মানুষদের আশীর্বাদ সবসময়েই আমার সঙ্গে ছিল এবং আমার বিশ্বাস, এবারও নন্দীগ্রাম মা-মাটি-মানুষের পক্ষেই ভোট দেবে।’
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ২৯৪ আসনের মধ্যে ২৯১টিতে প্রার্থী দিচ্ছে তৃণমূল। যে আসনগুলোতে প্রার্থী দেওয়া হয়নি সেগুলো হলো দার্জিলিং, কালিম্পং এবং কার্শিয়াং, অর্থাৎ রাজ্যের পাহাড়ী এলাকার তিনটি আসন। বাকি ২৯১ জনের মধ্যে নারী প্রার্থীর সংখ্যা ৫১ জন, মুসলিম সম্প্রদায় থেকে ৩৫ জন, তফসিলি জাতি থেকে ৭৯ জন, যাদের মধ্যে ১১ জন এমন আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, যেগুলো তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত আসন নয়। এ ছাড়া তফসিলি উপজাতি থেকে প্রার্থী হবেন ১৭ জন, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি থেকে ১৯ জন।
এবারের নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ চিত্রজগতের একঝাঁক তারকা তৃণমূলে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। রাজ্যের বিভিন্ন আসন থেকে তারাও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এদের মধ্যে ব্যারাকপুর আসনে তৃণমূলের ব্যানারে লড়বেন চিত্র পরিচালক রাজ চক্রবর্তী, দক্ষিণ আসানসোলে অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ, বাঁকুড়ায় অভিনেত্রী সায়ন্তিকা বন্দোপাধ্যায়, চণ্ডীপুরে অভিনেতা সোহম চক্রবর্তী, উত্তরপাড়ায় অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক, রাজারহাটে কীর্তন শিল্পী অদিতি মুন্সি, ঝাড়গ্রামে সাঁওতালি অভিনেত্রী বীরবাহা হাঁসদা এবং হাওড়া শিবপুরে ক্রিকেটার মনোজ তিওয়ারি।
আগামী ২ মে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
সূত্র: এনডিটিভি