হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐহিত্যের অনন্যতায় বারো মাসের তের পার্বণের এই দেশের সংস্কৃতির অন্যতম আনন্দদায়ক উপদান আবহমান গ্রাম-বাংলার পিঠা-পুলি। বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পিঠা পার্বণের সেই আনন্দধারায় শেষ হলো ‘চতুর্দশ জাতীয় পিঠা উৎসব ১৪২৭’।
বৃহস্পতিবার (৪মার্চ) দারুণ এক উৎসব মুখোর পরিবেশে শেষ হয় দশদিনের এই পিঠা উৎসব।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে বৃহস্পতিবার ছিল এই পিঠা উৎসবের শেষ দিন। এদিন বিকেল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নাগরিক জীবনের যান্ত্রিকতার মাঝে নির্মল আনন্দের খোরাক নিতে ছুটে আসে পিঠাপ্রেমীরা। উৎসবের পিঠা-পুলির বিভিন্ন স্টলে গিয়ে গিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের হরেক রকম পিঠা-পুলির স্বাদ নিয়ে উপভোগ করে গ্রামবাংলায় পিঠা খাওয়ার আনন্দ। সেই আনন্দে জল ঢেলে দিয়ে শেষ হলো এবারের এ পিঠা উৎসব। যার, মধ্য দিয়ে শুরু হলো একবছরের অপেক্ষা।
এর আগে এ একবছরের অপেক্ষা শুরুর বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় এবারের চতুর্দশতম পিঠা উৎসবের সমাপনী আয়োজন। এবারের এ আয়োজনে সেরা পিঠা শিল্পীর পুরস্কার পেলেন-নরসিংদীর পারিজাত পিঠাঘরের পিঠাশিল্পী জিন্নাত রায়হান সুমি।
দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন- রোদেলা বিক্রমপুর পিঠাঘরের তাহসিন ইসলাম তমা, তৃতীয় হয়েছেন- কুড়িগ্রাম পিঠাঘরের সাহিদা আক্তার ছন্দা, চতুর্থ হয়েছেন- নাবিলা ভৈরব পিঠাঘরের সালমা আক্তার বর্ষা এবং পঞ্চম স্থান অধিকার করেছেন- পিঠাবাড়ি ফরিদপুরের শিউলি আক্তার।
এছাড়াও এবারের পিঠা উৎসবে বিশেষ পুরস্কার পেয়েছেন-অজানা মাশরুম পিঠাঘরের জান্নাতুল ফেরদৌস, সাজিয়া ঢাকা পিঠাঘরের সাজিয়া রহমান ও বায়ান্ন বাজারের তামান্না আঁখি।
আলোচনা, বিজয়ী পিঠা-শিল্পীদের সম্মাননা প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দিয়ে সাজানো এ সমাপনী আয়োজনে পুরস্কার প্রাপ্ত পিঠাশিল্পীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন আয়োজনের অতিথিরা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. বদরুল আরেফীন। বিশেষ অতিথি ছিলেন- স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত বরেণ্য আবৃত্তিশিল্পী আশরাফুল আলম, একুশে পদক প্রাপ্ত সঙ্গীতজ্ঞ শেখ সাদী খান।
জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি নাট্যব্যক্তিত্ব ম. হামিদের সভাপতিত্বে এতে স্বাগত বক্তব্য দেন পিঠা শিল্পকলা একাডেমির সচিব উৎসব উদযাপন পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. নওসাদ হোসেন, ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও গ্রুপথিয়েটার ফেডারেশানের সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজীদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পরিষদের সদস্য সচিব খন্দকার শাহ্ আলম।
সমাপনী এ আয়োজনের আলোচনায় বক্তারা বলেন, বাঙালি সংস্কৃতির লোকজ ও নান্দনিক সংস্কৃতির পরিচয় বহন করে পিঠা-পুলি। আর গ্রামাঞ্চলে নতুন ধান ওঠার পর থেকেই পিঠা তৈরির আয়োজন হয়। শহরের মানুষের সেসব পিঠার স্বাদ গ্রহণ ও তাদের মধ্যে পরিচিত করে তুলতে এ পিঠা উৎসব যথেষ্ট ভ’মিকা পালন করছে।