ভারতের স্থানীয় প্রতিষ্ঠান ভারত বায়োটেকের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা কোভ্যাক্সিন তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় ৮১ শতাংশ কার্যকর বলে দাবি করা হয়েছে। বুধবার শেষ ধাপের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে ভারতীয় এই কোম্পানি বলেছে, আগে সংক্রমিত না হয়ে থাকলে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর তাদের তৈরি ভ্যাকসিন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ৮১ শতাংশ কার্যকর।
গত বছরের নভেম্বরে দেশটির ২৫টি স্থানে ২৫ হাজার ৮০০ জনের শরীরে কোভ্যাক্সিনের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের দুই দলে বিভক্ত করে এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চালানো হয়। এই স্বেচ্ছাসেবীদের এক দলকে ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন এবং অন্য দলকে প্ল্যাসেবো দেওয়া হয়। তবে পরীক্ষায় যাদের শরীরে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল; তাদের মধ্যে অন্তত সাতজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।
ভারত বায়োটেক বলছে, তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার অন্তর্বর্তীকালীন ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভ্যাকসিনের তীব্র এবং মাঝারি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মাত্রা কম ছিল।
ভারতীয় এই কোম্পানি বলেছে, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির বিশ্লেষণ অনুযায়ী— ভ্যাকসিনটি করোনাভাইরাসের ব্রিটিশ এবং অন্যান্য অতি-সংক্রামক ধরনের বিরুদ্ধেও অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম।
তবে এখনও কোভ্যাক্সিনের শেষ ধাপের পরীক্ষার অন্তর্বর্তীকালীন এই ফল কোনও পিয়ার-রিভিউড জার্নালে প্রকাশ করা হয়নি। কোম্পানিটি বলছে, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই এবং বিজ্ঞানের জন্য ভ্যাকসিনের আবিষ্কার আজ গুরুত্বপূর্ণ এক মাইলফলক।
ভারত বায়োটেকের চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. কৃষ্ণ ইলা বলেন, তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের আজকের ফলাফল আমাদের করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ধাপের প্রায় ২৭ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।
গত ৩ জানুয়ারি ভারত সরকার দেশটিতে করোনাভাইরাসের দু’টি টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমতি দেয়। এরমধ্যে একটি ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন এবং অন্যটি ব্রিটেনের ওষুধপ্রস্তুতকারক কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি কোভিশিল্ড। দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কোভিশল্ডের কার্যকারিতার হার ৭০ শতাংশ বলে জানিয়েছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা।
সুরক্ষা এবং কার্যকারিতা নিয়ে তীব্র উদ্বেগের মধ্যেও শেষ ধাপের পরীক্ষার তথ্য করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আমাদের ভ্যাকসিনের সাফল্যের পরিমাপ করে।
ভারত বায়োটেকের চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. কৃষ্ণ ইলা
শেষ ধাপের পরীক্ষার ফল প্রকাশের আগেই কোভ্যাক্সিনের জরুরি প্রয়োগের অনুমোদন দেওয়ার পর জানুয়ারির শুরুর দিকে দেশটির ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই) প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে পড়ে। তবে সেই সময় প্রথম এবং দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় ভ্যাকসিনটি করোনার বিরুদ্ধে সুরক্ষা এবং অ্যান্টিবডি তৈরিতে সক্ষম বলে দাবি করে ডিসিজিআই।
এদিকে, দেশজুড়ে দ্বিতীয় ধাপে টিকাদান শুরুর পর সোমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারত বায়োটেকের তৈরি কোভ্যাক্সিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ভারতে এখন পর্যন্ত এক কোটি ৫৬ লাখ ২০ হাজার ৭৪৯ জনকে করোনা টিকা দেওয়া হয়েছে।
সূত্র: এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া।