যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মিত্র ও বেসরকারি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ব্ল্যাকওয়াটারের প্রতিষ্ঠাতা এরিক প্রিন্স অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে লিবিয়ায় জাতিসঙ্ঘ সমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধবাজ নেতা খলিফা হাফতারের সহায়তায় বিদেশি ভাড়াটে সৈন্য ও অস্ত্র সরবরাহ করেছেন। শুক্রবার জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে পেশ করা এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।
নিরাপত্তা পরিষদে উপস্থাপিত গোপন এই প্রতিবেদনটি পূর্ণাঙ্গভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকা নিউ ইয়র্ক টাইমস ও ওয়াশিংটন পোস্ট লাভ করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসঙ্ঘ সমর্থিত লিবিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের গভর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল অ্যাকোর্ড সরকারের পতনে ২০১৯ সালে দুই দফা চেষ্টা করেছিলেন প্রিন্স।
এছাড়া ভাড়াটে সৈন্যদের নিয়ে হাফতারবিরোধী লিবিয়ার নেতাদের হত্যার জন্য গুপ্তঘাতক দল তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।
মার্কিন নেভি সিলের সাবেক সদস্য ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের শিক্ষা উপদেষ্টা বেটসি ডাভোসের ভাই এরিক প্রিন্সের বেসরকারি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ব্ল্যাকওয়াটারের প্রধান হিসেবে নিন্দা কুড়িয়েছেন। ২০০৭ সালে বাগদাদে নিরস্ত্র ইরাকি নাগরিকদের গুলি করে হত্যার জন্য সংস্থাটির চার কর্মীকে আদালতের কাঠগড়ায় পর্যন্ত দাঁড়াতে হয়।
গত বছর অভিযুক্ত এই চার কর্মীকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাধারণ ক্ষমার আওতায় মুক্তি দেন।
জাতিসঙ্ঘে এই অভিযোগ প্রিন্সকে ভ্রমণসহ জাতিসঙ্ঘের সম্ভাব্য বিবিধ নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি করতে পারে বলে সংবাদে জানায় নিউইয়র্ক টাইমস।
জাতিসঙ্ঘের এই তদন্তে প্রিন্স কোনো সহায়তা করেননি এবং তার আইনজীবীও এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন বলে পত্রিকাটি জানিয়েছে।
জ্বালানি তেলসমৃদ্ধ লিবিয়ায় ২০১১ সালে আরব বসন্তের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষ চার দশক দেশটি শাসন করা একনায়ক মুয়াম্মার গাদ্দাফির পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। গাদ্দাফি সামরিক পন্থায় বিক্ষোভকারীদের দমন করতে চাইলে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। গৃহযুদ্ধের এক পর্যায়ে বিদ্রোহীদের হাতে গাদ্দাফি নিহত হলেও দেশটিতে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে। বিবাদমান পক্ষগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ থেকে নতুন করে দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০১৪ থেকে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে দেশটি ত্রিপোলিকেন্দ্রীক পশ্চিম ও তবরুককেন্দ্রীক পূর্বাঞ্চলীয় সরকারের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
২০১৯ সালের এপ্রিলে পূর্বাঞ্চলীয় যুদ্ধবাজ নেতা খলিফা হাফতার জাতিসঙ্ঘ সমর্থিত পশ্চিমাঞ্চলের সরকারের কাছ থেকে রাজধানী ত্রিপোলির নিয়ন্ত্রণ নিতে হামলা চালায়। দীর্ঘ ১৪ মাস সংঘর্ষের পর তার এই হামলা ব্যর্থ হয়।
তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ থাকা জেনারেল হাফতারের প্রশংসা করে বলেছিলেন, হাফতার লিবিয়ায় সন্ত্রাসবাদের মোকাবেলায় প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছেন।
গত বছরের অক্টোবরে জাতিসঙ্ঘ উভয়পক্ষকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত করে এবং দেশটির সংকট সমাধানে বিবাদমান পক্ষগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপের সূচনা করে।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি দীর্ঘ সংলাপের পর সুইজারল্যান্ডে বিবাদমান পক্ষগুলো দেশটিতে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে। অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকার বছরের শেষে ২৪ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী গণতান্ত্রিক সরকার গঠনে সাহায্য করবে।
জেনারেল খলিফা হাফতার অন্তর্বর্তী সরকারে তার সমর্থন জানিয়েছেন।
সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি ও আলজাজিরা