জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কেবল দেশে নয়, বিদেশেও বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ভাষার দাবি শুধু রাজনৈতিক নয়, বাঁচার দাবি হওয়ায় আমরা বাংলা ভাষার স্বকীয়তা বজায় রেখেছি। আজ বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতার ভূমিকা’ শীর্ষক তৃতীয় স্মারক বক্তৃতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৫২ সালের মে মাসে করাচিতে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষার করার দাবি তোলেন। একই বছরে তিনি নয়াচীনে গিয়ে সেখানেও বাংলা ভাষায় বক্তৃতা করেছেন। ৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে গিয়ে প্রথমবার বাংলায় বক্তব্য দিয়েছেন। একবারই তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। ভাষার দাবি শুধু রাজনৈতিক দাবি নয়, এটা বাঁচার দাবি। একুশে ফেব্রুয়ারিতে আন্দোলনের ফলেই আমরা আমাদের স্বকীয়তা বজায় রেখেছি। ভাষা আন্দোলন হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতার পূর্বসুরি। সেই থেকেই যে চেতনার সৃষ্টি হয়, সেই চেতনা ধরেই আমরা স্বাধীনতার সংগ্রামের দিকে অগ্রসর হই। স্বাধীনতাও সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, একেবারেই তাজ্জব বিষয়! যে লোক (বঙ্গবন্ধু) ভাষার জন্য সংগ্রাম করেন, আমাদের স্বাধীনতার চেতনা, স্বকীয়তার চেতনা, স্বাধিকারের চেতনায় উন্মোচিত করেন। সেই লোকই (বঙ্গবন্ধু) আবার ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সংগ্রামে আন্দোলনের চাবিকাঠি, মুক্তির আন্দোলন শুরু করেন। দুটোর ক্ষেত্রেই বঙ্গবন্ধুর অবদান অবিস্মরণীয়।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেই ক্ষান্ত হননি। তিনি জীবনভর মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করেছেন। মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করার কারণেই তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের কারণে জীবনের অধিকাংশ সময় তাকে জেলে থাকতে হয়েছে। তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিল মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করা। বঙ্গবন্ধুর থেকে শিক্ষা নিতে হবে যে, মানুষের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করলে জনগণ সবসময় আপনাকে সম্মান করবে। আমাদের স্কুল, কলেজ ও শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠ্যপুস্তকে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসগুলো তুলে ধরতে হবে। এজন্য ঐতিহাসিক কিংবা গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাওয়া দরকার। শিক্ষকদের দায়িত্ব হবে শিক্ষার্থীরা যা যা দেখবেন তার ওপর ক্লাসে এসে প্রবন্ধ লিখে দেবে। এতে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের পরিধি বাড়বে। এই মুজিবনগর বলেন, ৩২ নম্বর বলেন, টুঙ্গিপাড়া বলেন এসব জায়গায় যেন একটি সিস্টেমেটিক উপায়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তাহলে শিক্ষার্থীরা আমাদের ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। ‘ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতার ভূমিকা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্ট্রি মফিদুল হক। প্রবন্ধের ওপর বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। সমাপনী বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন।