প্রায় তিন বছর সৌদি আরবের কারাগারে বন্দি থাকার পর গত বুধবার মুক্তি পেয়েছে দেশটির নারী অধিকারকর্মী লুজাইন আল হাতলুল। তবে কারাগারে থাকাকালীন তার ওপর যৌন নির্যাতন করা হতো বলে অভিযোগ করেছেন তারা বোনরা।
বৃহস্পতিবার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এমন দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলন থেকে তারা লুজাইনের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিতের দাবি জানান।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়, ৩১ বছর বয়সী লুজাইন আল হাতলুল সৌদির পুরুষ অভিভাবকত্ব ব্যবস্থার সমাপ্তি এবং নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতির জন্য ক্যাম্পেইন করেন। সৌদি কর্তৃপক্ষ ২০১৮ সালের মার্চ মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে তাকে আটক করে। পরে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সেখান থেকে সৌদিতে আনা হয়। গত ডিসেম্বর মাসে সৌদি কর্তৃপক্ষ সাইবার ক্রাইম এবং সন্ত্রাসবাদ আইনে লুজাইনের পাঁচ বছর আট মাসের কারাদণ্ড দেয়।
প্রায় তিন বছর কারাগারে রাখার পর গত বুধবার সৌদি কর্তৃপক্ষ তাকে মুক্তি দেয়। তবে তার ওপর পাঁচ বছরের বিদেশ ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং লুজাইনের পরিবার দাবি করছে, কারাগারে লুজাইনকে বৈদ্যুতিক শক, ওয়াটার বোডিং, বেত্রাঘাত এবং যৌন নির্যাতন করা হয়েছে। তবে বুধবার সৌদির একটি আপিল কোর্ট প্রমাণ না থাকার কারণে লুজাইনের ওপর নির্যাতনের দাবি খারিজ করে দিয়েছে। সৌদি কর্মকর্তারা কিংবা সৌদি গণমাধ্যম লুজাইনের দণ্ডাদেশ, মুক্তি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি।
ব্রাসেলসে সংবাদ সম্মেলনে লুজাইন হাতলুলের বোন লিনা আল হাতলুল বলেন, আমরা সত্যিকারের ন্যায় বিচার চাই। ন্যায়বিচার বলতে তিনি লুজাইনের সম্পূর্ণ নিঃশর্ত মুক্তিকে বোঝান। সংবাদ সম্মেলনে লুজাইন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে লড়াই করবে বলে জানান তিনি। তার বাবা-মা বিদেশ ভ্রমণ করতে পারছে না বলেও তাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লুজাইনের আরেক বোন আলিয়া বলেন, লুজাইন এখন বাবা-মা’র সঙ্গে বাড়িতে অবস্থান করছে। বাড়ি ফিরতে পেরে সে খুব আনন্দিত। কারাগার থেকে বাড়ি ফিরে তাদের সঙ্গে কথা বলার পর লুজাইন সুপার মার্কেটে আইসক্রিম খেতে যান বলে জানান তিনি।’ বুধবার লিনা টুইটারে লুজাইনের একটি ছবি শেয়ার করেন। সেখানে ধূসর চুলে তাকে হাসতে দেখা যায়। কিন্তু আগের থেকে তাকে পাতলা দেখা যায়। লুজাইনের বোনরা বলেন, কারাগারে বিভিন্ন শর্তের কারণে লুজাইন অনশন করেছিলেন। এ কারণে সে ওজন হারিয়েছে। বোন আলিয়া জানান লুজাইন খুবই শক্ত।
তিনি বলেন, আমি তার উচ্চ বাসনার ক্ষমতায় গর্বিত। অধিকার পেতে লুজাইন সৌদিতে বিদ্যমান সকল আইনের আশ্রয় নেবেন।
লুজাইনের বোনরা জানায়, কারাগার থেকে ফোনে কথা বলার সময় লুজাইন তার ওপর কি ধরনের নির্যাতন করা হয়েছে সেটা বলতে পারেনি। কথা বলার সময় নিরাপত্তারক্ষী তার কানের কাছে বৈদ্যুতিক শক দেয়ার যন্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাকে নির্যাতনের হুমকি দেয়া হয়। আটক, নির্যাতন এবং জীবনের নাটকীয় সময়কে লুজাইন কখনও ভুলতে পারবে না বলে তার বোনরা মন্তব্য করেন।