বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের একাংশ বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে এই নিন্দা প্রকাশ করেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ব্যানারে শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সমিতির সম্পাদক ও বিএনপিপন্থী আইনজীবী নেতা রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা আইন বহির্ভূত। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নেই।
জামুকার ৭২তম সভায় গত মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানসহ বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি শরিফুল হক ডালিম, নুর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিন খানের মুক্তিযোদ্ধার খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
ওইদিন গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন সাবেক মন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও জামুকার সদস্য শাজাহান খান।
তিনি বলেন, জামুকার বৈঠকে জিয়াউর রহমান, শরিফুল হক ডালিম, নুর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিন খানের নামে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্মরণীয়-বরণীয় ব্যক্তিদের তালিকা থেকে খন্দকার মোশতাকের নাম বাতিল করা হয়েছে।
জানা গেছে, সরকারের খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট অনুসারে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ‘বীর উত্তম’, শরিফুল হক ডালিম ‘বীর উত্তম’, নূর চৌধুরী ‘বীর বিক্রম’, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিন খান ‘বীর প্রতীক’ ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় স্মরণীয়-বরণীয় ব্যক্তিদের তালিকায় ছিল খন্দকার মোশতাকের নাম।
তাদের মধ্যে শরিফুল হক ডালিম, নুর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিন খান স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি।
এসব খুনির মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করলেও রাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাদের মর্যাদা বাতিল করেনি। গত বছরের ১৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত জামুকার সভায় বঙ্গবন্ধুর খুনি মোসলেহ উদ্দিনের মুক্তিযোদ্ধার গেজেট বাতিল করার সুপারিশ করলে ৫ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত জামুকার বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মুক্তিযোদ্ধার খেতাব বাতিল করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়।
জামুকার সদস্য মেজর (অব.) ওয়াকার হাসান বীর প্রতীক বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের নামের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের খেতাব থাকতে পারে না। বিষয়টি নিয়ে জামুকার বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তাদের খেতাব বাতিল করার বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। আরও বৈঠক হবে, সভার কার্যবিবরণী সই হওয়ার পর এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে মন্ত্রণালয়। তাই এ নিয়ে এখনি কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
খেতাব বাতিলের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে ওয়াকার হাসান বলেন, রোহিঙ্গা গণহত্যার কারণে মিয়ানমারের নেত্রী সুচির নোবেল খেতাব কেড়ে নেয়া হয়েছে। পশ্চিমা বিশ্বে এ ধরনের আরও নজির রয়েছে। তাহলে জাতির পিতার হত্যাকারীদের নামের সঙ্গে কেন বীর মুক্তিযোদ্ধার খেতাব থাকবে।