করোনাভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে শ্রীলঙ্কায় মৃত্যু হওয়া মুসলমানদের দাহ করার নীতিতে জাতিসঙ্ঘে অভিযোগ জানিয়েছে ব্রিটেনের মুসলমানরা। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির এই নীতিকে ‘অন্যায় ও বৈষম্যমূলক’ হিসেবে উল্লেখ করে শিগগির তা প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান তারা।
শুক্রবার শ্রীলঙ্কায় করোনা সংক্রমণে স্বজন হারানো মুসলিম পরিবারগুলোর পক্ষে ব্রিটিশ মুসলিম সংগঠন মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন (এমসিবি) যুক্তরাজ্যভিত্তিক আইনি প্রতিষ্ঠান বাইন্ডম্যানসের সহায়তায় জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে (ইউএনএইচআরসি) এই অভিযোগ দায়ের করে।
গত বছরের মার্চে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রথম শনাক্তের পর শ্রীলঙ্কায় ভাইরাস সংক্রমণে বা সংক্রমণের সন্দেহ থাকা মৃতদের বাধ্যতামূলকভাবে দাহ করার আদেশ দেয়া হয়।
মৃতকে দাহ করার এই নীতিতে মুসলমানরা ছাড়াও লাশ দাফন করায় অভ্যস্ত দেশটির সংখ্যালঘু খ্রিস্টান সম্প্রদায় অসন্তুষ্ট হয়েছে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণে মৃতদের দাফনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) নির্দেশনা থাকলেও শ্রীলঙ্কায় লাশ দাহ করার বাধ্যতামূলক নীতিতে দেশটির মুসলিম সম্প্রদায়ের সাথে সাথে খ্রিস্টানরাও ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছে।
এমসিবির সাধারণ সম্পাদক জারা মোহাম্মদ সোমবার এক বিবৃতিতে শ্রীলঙ্কায় দাহ করার নীতিকে বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে বলেন, ‘অন্য কোনো দেশই এই ধরনের অন্যায় ও পক্ষপাতমূলক পদক্ষেপ নেয়নি।’
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করবো শ্রীলঙ্কান সরকার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে তার নীতির পরিবর্তন করবে।’
এমসিবি ও শ্রীলঙ্কায় স্বজন হারানো মুসলিম পরিবারের পক্ষের আইনজীবী তাইয়াব আলী এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমাদের মক্কেলরা এরমধ্যেই করোনাভাইরাস সংক্রমণে তাদের পরিবারের সদস্য হারিয়ে ব্যথিত। এই অবস্থায় শ্রীলঙ্কান সরকারের অপ্রয়োজনীয়ভাবে প্রিয়জনদের লাশ দাহ করতে বাধ্য করার মাধ্যমে এই ব্যথা বাড়ানো সত্যিই নিষ্ঠুরতা।’
তাইয়াব আলী ইউএনএইচআরসিকে অভিযোগরে ভিত্তিতে দাহ করার নীতি স্থগিত করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান।
শ্রীলঙ্কান কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, করোনা সংক্রমণে মৃত লাশ দাফন করা হলে ভূগর্ভস্থ পানির মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণ অব্যাহত থাকবে।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা এই দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে বলছেন, পরিকল্পনামাফিক দাফন করা হলে লাশ থেকে ভুগর্ভস্থ পানিতে ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে।
এই বছরের জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়োগপ্রাপ্ত এক বিশেষজ্ঞ প্যানেল জানিয়েছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণে মৃতের লাশ যথাযথ সতর্কতার সাথে দাফন করা যাবে।
জাতিসঙ্ঘ এর আগে দুই দফা শ্রীলঙ্কার সরকারের কাছে দেশটির বাধ্যতামূলক দাহ করার নীতি পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছে।
জানুয়ারিতে সর্বশেষ বার্তায় জাতিসঙ্ঘ জানায়, শ্রীলঙ্কার সরকারের এই নীতির মাধ্যমে দেশটিতে অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে পারে।
অন্যদিকে হু জানিয়েছে, লাশ দাহ করলেই যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়াবে না, তার কোনো প্রমাণ নেই।
শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের বিরোধীরা বলছেন, দেশটির সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়কে নিয়ন্ত্রণে মহামারীকে ব্যবহার করছেন তিনি। দেশটির দু্ই কোটি ১১ লাখ জনসংখ্যার প্রায় ১০ ভাগ মুসলমান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ তদারক করা জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি অব মেডিসিনের করোনাভাইরাস রিসার্চ সেন্টারের তথ্যানুসারে, ভাইরা সংক্রমণে শ্রীলঙ্কায় ৭১ হাজার ২১১ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং মৃত্যু হয়েছে তিন শ’ ৭০ জনের।
সূত্র : আলজাজিরা