স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দেশে যেসব স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিকৃত চাল আসছে সেসব বন্দর দিয়ে যাতে চালের ট্রাক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আসতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অফিস কক্ষে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চালের ট্রাক নির্বিঘ্নে বাংলাদেশে প্রবেশে প্রয়োজনীয় করণীয় সম্পর্কে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ নির্দেশ দেন।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালককে টেলিফোনে এ বিষয়ে ভোমরা, হিলি, বুড়িমারী, বাংলাবান্ধা, শেওলাসহ যেসব স্থলবন্দর দিয়ে চাল দেশে আসছে সেসব বন্দর দিয়ে চালের ট্রাক যাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আসতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশনা দেন।
দেশে চাল যাতে দ্রুত নির্বিঘ্নে প্রবেশ করতে পারে সেজন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়াই তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
জানা গেছে, খাদ্যশস্যের বাজারমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রবণতা রোধ, নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠীকে সহায়তা ও বাজারদর স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে বেসরকারি পর্যায়ে চালের আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করে সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় খাদ্য মন্ত্রণালয় গত ২৭ ডিসেম্বর বেসরকারিভাবে চাল আমদানির জন্য বৈধ আমদানিকারকদের প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্রসহ গত ১০ জানুয়ারির মধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে বলা হয়।
এদিকে দেশে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে বেসরকারিভাবে চাল আমদানির জন্য ৩২০টি প্রতিষ্ঠানের অনকূলে মোট আট লাখ ৭৩ হাজার ৫০০ টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। এছাড়া সরকারিভাবে চার লাখ মেট্রিক টন, জিটুজি পদ্ধতিতে দেড় লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানি করা হবে। একইসঙ্গে বাজার নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত বেসরকারিভাবে চাল আমদানি অব্যাহত রাখা হবে।
এরমধ্যে দেশে আসতে শুরু করেছে আমদানিকৃত চাল। গত ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভোমরা, দর্শনা, বেনাপোল, সোনা মসজিদ, হিলি, বুড়িমারী, বাংলাবান্দা, শেওলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে বেসরকারিভাবে মোট ৫৬ হাজার ৩ ৯১ মেট্রিক টন চাল দেশে পৌঁছেছে। এছাড়া সরকারিভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির আওতায় ৫৫ হাজার ১২৯ মেট্রিক টন চাল দেশে পৌঁছেছে। সর্বমোট এক লাখ ১১ হাজার ৫২০ মেট্রিক টন চাল দেশে পৌঁছেছে।
চাল আমদানির শর্তে বলা হয়েছে, বরাদ্দপত্র ইস্যুর সাতদিনের মধ্যে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে হবে। এ সংক্রান্ত তথ্য খাদ্য মন্ত্রণালয়কে তাৎক্ষণিক ই-মেইলে জানাতে হবে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা এক থেকে পাঁচ হাজার টন বরাদ্দ পেয়েছে তাদের এলসি খোলার ১০ দিনের মধ্যে ৫০ শতাংশ ও ২০ দিনের মধ্যে বাকি চাল বাজারজাত করতে হবে।
এছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান পাঁচ হাজার থেকে ১০ হাজার টন পর্যন্ত বরাদ্দ পেয়েছে তাদের এলসি খোলার ১৫ দিনের মধ্যে ৫০ শতাংশ ও ৩০ দিনের মধ্যে বাকি ৫০ শতাংশ চাল এনে বাজারজাত করতে হবে বলে শর্ত দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। বরাদ্দের অতিরিক্ত আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) ইস্যু করা যাবে না বলেও শর্ত দেওয়া হয়েছে।
পরবর্তীতে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির জন্য বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এলসি খোলার সময়সীমা গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এরপর গত ৩১ জানুয়ারি খাদ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক এক অফিস আদেশে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির জন্য বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান এলসি খোলার সময়সীমা আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়িয়ে নির্দেশনা জারি করা হয়।