এবার নিজেদের আকাশসীমায় বিমান চলাচলে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছে মিয়ানমার। সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দেশটির সিভিল এভিয়েশন এক চিঠিতে এই ব্যাপারে অবহিত করেছে বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশনকে।
ফলে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের আকাশসীমা ব্যবহার করে যেসব বিমান থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, চীন, ইন্দোনেশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যায় তারা মিয়ানমারের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল থেকে কোনো ধরনের রাডার সার্ভিস বা নির্দেশনা পাবে না।
এ প্রসঙ্গে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান, এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, রাডার ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সার্ভিস বন্ধের কোনো কারণ উল্লেখ করেনি দেশটি। আপাতত সব দেশের সঙ্গেই তারা বিমান চলাচল বন্ধ রেখেছে। এ পরিস্থিতিতে মিয়ানমার আকাশসীমা অতিক্রমকারী সব বিমানকে বাংলাদেশের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ইউনিট থেকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ইউনিটের সঙ্গে সমন্বয় করে সুষ্ঠু ও নিরাপদ এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সার্ভিস প্রদান করছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে অভ্যুত্থানের পর প্রথমবারের মতো জাতির উদ্দেশে ভাষণে মিয়ানমারের বর্তমান শাসক ও সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, শিগগিরই নতুন নির্বাচনের আয়োজন করে বিজয়ী দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে দেশটির সাধারণ মানুষ যখন ক্রমেই কঠোর আন্দোলনের দিকে যাচ্ছে, তখনই এমন ঘোষণা দিলেন তিনি।
সোমবার সরাসরি ভাষণ দেন সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং। এদিন গত বছরের নভেম্বরের অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ তোলেন তিনি।
ভাষণে মিন অং হ্লাইং বলেন, ‘আগের সময়ের চেয়ে এবারের সামরিক সরকার একেবারেই আলাদা। পূর্বের সামরিক শাসনের তুলনায় এই সামরিক সরকার ‘সত্য ও শৃঙ্খলাবদ্ধ গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করবে।’
গত ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান হয়। সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী দেশটির নির্বাচিত স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে। সামরিক বাহিনী দেশটিতে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করেছে। একই সঙ্গে তারা দেশটির সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ রাজনীতিক নেতাদের আটক করেছে।
সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকেই মিয়ানমারে বিক্ষোভ দানা বাধে। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে দেশটির সেনাবাহিনী ফেসবুক ও টুইটারের পর ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ করে দেয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও দেশটির মানুষ সেনাশাসনের বিরুদ্ধে রাজপথে নেমে আসেন।
এরই ধারাবাহিকতায় দেশটির সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গুনে সোমবার ১০ হাজারের বেশি মানুষ জান্তা সরকারবিরোধী বিক্ষোভ বের করেন। গণআন্দোলনের তৃতীয় দিনে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে জটিলের দিকে মোড় নিচ্ছে।
সু চি’র মুক্তি এবং সামরিক সরকার ক্ষমতা না ছাড়লে সামনে বড় ধরনের কর্মসূচির দিকে যাচ্ছে মিয়ানমারের নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সামরিক সরকারের অধীনে নতুন করে নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি এলো।