নতুন করে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আবারও অনির্দিষ্টকালের জন্য বিধিনিষেধ আরোপ করল কাতার। বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকে এ বিধিনিষেধ কার্যকর করা হয়।
বিধিনিষেধ আরোপ করায় আবারো ক্ষতির মুখে প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। তবে দেশটির প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই, জরিমানা হাত থেকে বাঁচতে বিধিনিষেধ মেনে চলার আহ্বান প্রবাসীদের।
সারাবিশ্বে করোনার দ্বিতীয় ডেউ শুরু হলেও কাতারের করোনা পরিস্থিতি ছিল নিয়ন্ত্রণের মধ্যে। স্বাভাবিক ছিল জনজীবনের চলাফেরা, ছিল না কোনো বিধিনিষেধ। শুধু নাগরিকদের রাস্তায় বের হলে মাস্ক পরা ছিল বাধ্যতামূলক।
তবে সপ্তাহ জুড়ে প্রতিদিন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আবারও অনির্দিষ্টকালের জন্য আরোপ করা হলো বিধিনিষেধ। সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের উপস্থিতির সংখ্যা ৮০% বেশি হওয়া যাবে না। বন্ধ ঘোষণা করা হলো পাবলিক পার্ক, সমুদ্র সৈকত, টুরিস্ট ইয়ট, কার্নিশ সাগরের ভাড়াকৃত নৌকা। রেস্টুরেন্ট, সেলুনসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপর জারি করা হয়েছে বিধিনিষেধ, বিধিনিষেধ অমান্য করলে জেলসহ গুনতে হবে জরিমানা।
কাতারে সরকারি সেক্টরে মোট শ্রমিকের ৮০% অফিসে কাজ করবেন। বাকি কর্মীরা পরিস্থিতি অনুসারে বাড়িতে বসে দূর থেকে কাজ করে। সরকারি ও বেসরকারি অফিস বা প্রতিষ্ঠানে ১৫ জনের বেশি লোক সংখ্যা মিটিংয়ে অংশ নিতে পারবেন না। কাতারের স্থানীয় নাগরিক ও অভিবাসীরা মাস্ক ছাড়া রাস্তায় বাহির হলে গুনতে হবে জরিমানা। রাস্তায় বাহির হলে স্মার্টফোনে এহতেরাজ অ্যাপ্লিকেশনটি চালু রাখতে হবে।
টয়লেট ও অজুখানা বন্ধ রেখে সব মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও জুমার নামাজ আদায় অব্যাহত থাকবে। কাতারে কোনো আবদ্ধ জায়গায় ৫ জনের বেশি লোক ও খোলা জায়গায় ১৫ জনের বেশি লোক উপস্থিত হতে পারবে না।
পাবলিক পার্ক, সমুদ্র সৈকত, কার্নিশে খেলার জায়গা এবং ক্রীড়া সরঞ্জাম বন্ধ থাকবে। একসাথে ১৫ জনের বেশি জমায়েত হওয়া যাবে না। গাড়িতে এক পরিবারের সদস্য না হলে চালকসহ চারজনের বেশি ছড়া যাবে না। বাসের মাধ্যমে যাতায়াতকারী লোকের সংখ্যা মোট যাত্রীর অর্ধেক হতে হবে।
কাতারের মেট্রোরেল ও পাবলিক ট্রান্সপোর্টগুলোতে ধারণক্ষমতার শতকরা ৩০ ভাগ যাত্রীর বেশি ছড়া যাবে না। ড্রাইভিং স্কুলগুলির ধারণ ক্ষমতার ২৫ ভাগ ব্যবহার করা যাবে। সিনেমা ও থিয়েটারগুলোতে ধারণ ক্ষমতার ১৫ ভাগ ব্যবহার করা যাবে। তবে ১৮ বছরের কম বয়সীদের প্রবেশের অনুমতি নেই।
শিক্ষাকেন্দ্র, বেসরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সক্ষমতা শতকরা ৩০ ভাগ কমিয়ে আনা হবে। নার্সারি, শিশুকেন্দ্রে ধারণ ক্ষমতার শতকরা ৩০ ভাগ ব্যবহার করা যাবে। জাদুঘর গ্রন্থাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার অর্ধেক ব্যবহার করা যাবে।
পেশাদার ক্রীড়া দলগুলোর প্রশিক্ষণ খোলা জায়গায় হলে সর্বোচ্চ ৪০ জন এবং আবদ্ধ জায়গায় হলে সর্বোচ্চ ২৯ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে এবং সেখানে দর্শকদের উপস্থিতি নিষিদ্ধ। যে কোনো প্রদর্শনী, সম্মেলন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পূর্ব অনুমোদন নিতে হবে।
শপিং কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে সব সাধারণ রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকবে। রেস্তোরাঁগুলোকে শুধু বাইরের অর্ডার সরবরাহের অনুমতি থাকবে। বিভিন্ন সুকে মোট ধারণক্ষমতার অর্ধেক ব্যবহার করা যাবে।
পাইকারি বাজারের সক্ষমতা শতকরা ৩০ ভাগে কমিয়ে আনা হবে। হেয়ারড্রেসিং, বিউটি পার্লার, সেলুনে ধারণক্ষমতার ৩০ ভাগ ব্যবহার করা যাবে।
বন্ধ জায়গাগুলোতে অভ্যন্তরীণ কমপ্লেক্সে সব বিনোদন পার্ক এবং বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকবে। তবে উন্মুক্ত জায়গায় হলে ধারণক্ষমতার ত্রিশ ভাগ ব্যবহার করে কাজ করা যাবে। বিভিন্ন হেলথ ক্লাব এবং শারীরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে মোট ধারণ ক্ষমতার শতকরা ৩০ ভাগ ব্যবহার করা যাবে।
সব ইনডোর সুইমিং পুল এবং ইনডোর ওয়াটার পার্ক বন্ধ থাকবে। তবে আউটডোর সুইমিং পুল এবং আউটডোর ওয়াটার পার্কগুলি ধারণক্ষমতার শতকরা ৩০ ভাগ ব্যবহার করতে পারবে। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো সব ধরণের সেবা অব্যাহত রাখতে পারবে।
কাতারে করোনায় চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা বর্তমানে ৬ হাজারের বেশি, আর দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনায় মৃত্যুবরণ করেছে ২৪৯ জন, আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৫২ হাজারের বেশি মানুষ, দেশটিতে এরই মধ্যে মানুষের দেহে শুরু হয়েছে ভ্যাকসিন প্রয়োগ।