মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানে নির্বাচিত সরকারকে অপসারণ করে ক্ষমতা দখলের পর এখন সর্বত্র একটাই আলোচনা চলছে, কেন স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চিকে হটিয়ে সেনাবাহিনী নিজেই ক্ষমতা দখল করল? যেখানে সু চি সম্পর্কে বলা হচ্ছিল, সেনাবাহিনী সু চির নীতি গ্রহণ করেনি, বরং সু চি নিজেই সেনাবাহিনীর নীতি গ্রহণ করে ক্ষমতায় আছেন।
এ রকম একটি অবস্থায় সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল করার কয়েকটি কারণ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইয়াঙ্গুনে দীর্ঘ এক দশক ধরে বসবাসরত বাংলাদেশি ও একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান জানান, সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের সম্ভাব্য কয়েকটি কারণ থাকতে পারে বলে এবার ধারণা করা হচ্ছে।
প্রথমত, একটি রাজনৈতিক সরকার যদি দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকে তবে সামরিক বাহিনীর গুরুত্ব কমে যেতে পারে। এ রকম ধারণা করে থাকতে পারে সেনাবাহিনী।
দ্বিতীয়ত, এর ফলে জনগণের মনে এমন ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যেতে পারে যে, এখন আর সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ নয়, রাজনীতিবিদরাই গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে মিয়ানমারের সমাজ জীবনে সেনাবাহিনী তার গুরুত্ব হারাবে। এখনকার সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইয়াংয়ের অবসরের সময় হয়ে গেছে। তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মামলা চলছে।
অবসরে গেলে সু চির সরকার আন্তর্জাতিক আদালতে তার পক্ষে অবস্থান নাও নিতে পারে। এমন একটি আশংকা সম্ভবত তার ভেতরে তৈরি হয়েছে। সেনাবাহিনী ক্ষমতায় থাকলে আন্তর্জাতিক আদালতে তিনি সব রকমের সহায়তা পাবেন।
তৃতীয়ত, সেনাপ্রধান মিন অং অবসরের পর রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ক্ষমতায় আসতে চান বা প্রেসিডেন্ট হতে চান। সু চির রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকলে সেটা হওয়া কঠিন। গত নির্বাচনে সেনা সমর্থিত রাজনৈতিক দলটির ফলাফল অত্যন্ত শোচনীয় হয়েছে।
নির্বাচনে ৪১২টি আসনের মধ্যে ৩৪৬টি আসন পেয়েছে সু চির এনএলডি ও সেনা সমর্থিত ইউএসডিপি ৩৩টি আসন। ফলে অবসরের পর সু চির রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় তিনি পারবেন না। সে কারণেই রাজনৈতিক সরকারের পরিবর্তে সামরিক সরকারকে ক্ষমতায় রেখে তিনি অবসরে যেতে চাইছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) ভোরে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকেই রাজধানীতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। রাস্তায় সেনা বা পুলিশের টহল নজরে পড়ছে না। রাস্তায় মানুষের উপস্থিতি একেবারেই কম।
দেশটিতে ইন্টারনেটের গতি অত্যন্ত দুর্বল হয়ে এসেছে। বেসরকারি মোবাইল অপারেটর সেবা বন্ধ থাকলেও চালু হয়েছে সরকারি মোবাইল অপারেটর সেবা।
মিয়ানমারের জনগণের এখন কী করণীয়, সে সম্পর্কে সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।