spot_img

সালামের উপকারিতা কী কী?

অবশ্যই পরুন

সালাম প্রচার-প্রসার করার ফীযলত ও উপকারিতা :

সালাম দেওয়া এবং প্রচার-প্রসার করার ব্যাপারে অনেক ফযীলত ও উপকারিতা রয়েছে, যেগুলো ছহীহ হাদীছ দ্বারা সাব্যস্ত।

(১) সালাম দেয়া সর্বোত্তম ইসলামী কাজ : হাদীছে এসেছে,

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو رضى الله عنهما أَنَّ رَجُلاً، سَأَلَ النَّبِيَّr أىُّ الإِسْلاَمِ خَيْرٌ قَالَ ‏تُطْعِمُ الطَّعَامَ، وَتَقْرَأُ السَّلاَمَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ وَمَنْ لَمْ تَعْرِفْ

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, ইসলামে কোন জিনিসটি উত্তম? তিনি বললেন, ‘তুমি খাদ্য খাওয়াবে ও চেনা-অচেনা সকলকে সালাম দিবে’।

(২) সালামের প্রসার জান্নাতে প্রবেশের অন্যতম মাধ্যম : হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

يَا أَيُّهَا النَّاسُ أَفْشُوا السَّلاَمَ وَأَطْعِمُوا الطَّعَامَ وَصَلُّوا بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ بِسَلاَمٍ.‏

‘হে লোকসকল! তোমরা পরস্পর সালাম বিনিময় করো, অভুক্তকে আহার করাও এবং রাতেরবেলা মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন ছালাত আদায় করো। তাহলে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে’।

এ ছাড়াও সালাম জান্নাতে প্রবেশকে আবশ্যক করে। আবু শুরাইহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَخْبِرْنِي بِشَيْءٍ يُوجِبُ الْجَنَّةَ، قَالَ: طِيبُ الْكَلَامِ، وَبَذْلُ السَّلَامِ، وَإِطْعَامُ الطَّعَامِ

‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে এমন আমল বলে দিন, যা জান্নাতে প্রবেশকে আবশ্যক করে। রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘মিষ্টি কথা, সালামের প্রসার এবং মানুষকে খানা খাওয়ানো’।

(৩) সালামের মাধ্যমে পারস্পরিক ভালোবাসা, সম্প্রীতি, অন্তরঙ্গতা বৃদ্ধি পায় : আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) বলেছেন,

لاَ تَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا وَلاَ تُؤْمِنُوا حَتَّى تَحَابُّوا.‏ أَوَلاَ أَدُلُّكُمْ عَلَى شَىْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوهُ تَحَابَبْتُمْ أَفْشُوا السَّلاَمَ بَيْنَكُمْ

‘ঈমানদার ছাড়া কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, আর তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না একে অন্যকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদেরকে তা বলে দিব না, কী করলে তোমাদের মাঝে পারস্পরিক ভালোবাসার সৃষ্টি হবে? তা হলো তোমরা পরস্পর বেশি সালাম বিনিময় করবে’।

(৪) সালামের প্রতি বাক্যে ১০টি ছওয়াব বরাদ্দ রয়েছে : ইমরান ইবনু হুছাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ.فَرَدَّ عَلَيْهِ السَّلاَمَ ثُمَّ جَلَسَ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم‏ عَشْرٌ.ثُمَّ جَاءَ آخَرُ فَقَالَ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ.فَرَدَّ عَلَيْهِ فَجَلَسَ فَقَالَ ‏”‏عِشْرُونَ”‏.ثُمَّ جَاءَ آخَرُ فَقَالَ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ.فَرَدَّ عَلَيْهِ فَجَلَسَ فَقَالَ ‏”‏ثَلاَثُونَ”‏‏.

এক লোক নবী (ছাঃ)-এর নিকট এসে বললেন, আস-সালামু আলাইকুম। তিনি তার জবাব দিলেন। লোকটি বসে পড়লেন। তিনি বললেন, ‘১০ নেকী’। এরপর আরেকজন এসে বললেন, আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নবী (ছাঃ) অনুরূপ জবাব দিলেন। লোকটি বসলেন। তিনি বললেন, ‘২০ নেকী’ অতঃপর আরেকজন এসে বললেন, আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। নবী (ছাঃ) তারও জবাব দিলেন। লোকটি বসলেন। তিনি বললেন, ‘৩০ নেকী’।

(৫) আগে সালাম দেওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক উত্তম ব্যক্তি এবং অহংকারমুক্ত হওয়া যায় : আবু উমামা প থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِنَّ أَوْلَى النَّاسِ بِاللَّهِ مَنْ بَدَأَهُمْ بِالسَّلاَمِ ‘মানুষের মধ্যে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক উত্তম ঐ ব্যক্তি যে আগে সালাম দেয়’।

আবু আইয়ূব আনছারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لاَ يَحِلُّ لِرَجُلٍ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلاَثِ لَيَالٍ، يَلْتَقِيَانِ فَيُعْرِضُ هَذَا وَيُعْرِضُ هَذَا، وَخَيْرُهُمَا الَّذِي يَبْدَأُ بِالسَّلاَمِ ‘কোনো লোকের জন্য বৈধ নয় যে, সে তার ভাইয়ের সাথে তিন দিনের অধিক এমনভাবে সম্পর্ক ছিন্ন রাখবে যে, দু’জনে দেখা হলেও একজন এদিকে আরেকজন ওদিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখবে। তাদের মধ্যে যে আগে সালাম দিবে, সেই উত্তম লোক’।

(৬) সালামের উত্তর দিলে মুসলিমের হক্ব আদায় করা হয় : আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,

حَقُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ خَمْسٌ رَدُّ السَّلاَمِ، وَعِيَادَةُ الْمَرِيضِ، وَاتِّبَاعُ الْجَنَائِزِ، وَإِجَابَةُ الدَّعْوَةِ، وَتَشْمِيتُ الْعَاطِسِ.

‘এক মুসলিমের প্রতি অপর মুসলিমের হক্ব পাঁচটি- (১) সালামের জবাব দেওয়া (২) অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া (৩) জানাযার পশ্চাদানুসরণ করা (৪) দাওয়াত কবুল করা এবং (৫) হাঁচিদাতাকে খুশি করা তথা ‘আল-হামদুলিল্লাহ’র জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলা’।

(৭) সালামের পর মুছাফাহা করলে ছাগীরা গুনাহ তথা ছোট ছোট গুনাহ মাফ হয়ে যায় : আল-বারাআ‘ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَا مِنْ مُسْلِمَيْنِ يَلْتَقِيَانِ فَيَتَصَافَحَانِ إِلاَّ غُفِرَ لَهُمَا قَبْلَ أَنْ يَفْتَرِقَا ‘দু’জন মুসলিম পরস্পর মিলিত হয়ে মুছাফাহা করলে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হওয়ার পূর্বেই তাদের ক্ষমা করে দেওয়া হয়’। এজন্যই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর উম্মতকে বারবার সালামের ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন, এমনকি একই ব্যক্তির সাথে ক্ষণেক পরপর দেখা হলেও তাকে সালাম দিতে বলেছেন।

আবু হুরায়রা (ছাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, إِذَا لَقِيَ أَحَدُكُمْ أَخَاهُ فَلْيُسَلِّمْ عَلَيْهِ فَإِنْ حَالَتْ بَيْنَهُمَا شَجَرَةٌ أَوْ جِدَارٌ أَوْ حَجَرٌ ثُمَّ لَقِيَهُ فَلْيُسَلِّمْ عَلَيْهِ أَيْضًا ‘তোমাদের কেউ যখন তার ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে, তখন সে যেন তাকে সালাম দেয়। অতঃপর দু’জনের মাঝে যদি গাছ, দেয়াল বা পাথর আড়াল হয়ে যায় এবং তারপর আবার সাক্ষাৎ হয়, তাহলেও যেন তাকে সালাম দেয়’।

(৮) সালাম আদান-প্রদানের জন্য ছাহাবীগণ লোক সমাগমে, এমনকি বাজারে পর্যন্ত চলে যেতেন : হাদীছে এসেছে,

عَنْ إِسْحَقَ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِي طَلْحَةَ أَنَّ الطُّفَيْلَ بْنَ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ أَخْبَرَهُ : أَنَّهُ كَانَ يَأْتِي عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ فَيَغْدُو مَعَهُ إِلَى السُّوقِ قَالَ فَإِذَا غَدَوْنَا إِلَى السُّوقِ لَمْ يَمُرَّ عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ عَلَى سَقَاطٍ وَلَا صَاحِبِ بِيعَةٍ وَلَا مِسْكِينٍ وَلَا أَحَدٍ إِلَّا سَلَّمَ عَلَيْهِ قَالَ الطُّفَيْلُ فَجِئْتُ عَبْدَ اللهِ بْنَ عُمَرَ يَوْمًا فَاسْتَتْبَعَنِي إِلَى السُّوقِ فَقُلْتُ لَهُ وَمَا تَصْنَعُ فِي السُّوقِ وَأَنْتَ لَا تَقِفُ عَلَى الْبَيِّعِ وَلَا تَسْأَلُ عَنْ السِّلَعِ وَلَا تَسُومُ بِهَا وَلَا تَجْلِسُ فِي مَجَالِسِ السُّوقِ قَالَ وَأَقُولُ اجْلِسْ بِنَا هَاهُنَا نَتَحَدَّثُ قَالَ فَقَالَ لِي عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ يَا أَبَا بَطْنٍ وَكَانَ الطُّفَيْلُ ذَا بَطْنٍ إِنَّمَا نَغْدُو مِنْ أَجْلِ السَّلَامِ نُسَلِّمُ عَلَى مَنْ لَقِيَنَا

ইসহাক্ব ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আবু তালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তুফাইল ইবনে উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ) সকাল সকালে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) এর নিকট আসতেন এবং তাঁর সঙ্গে বাজারে গমন করতেন। তুফাইল (রাঃ) বলেন, আমরা বাজারে পৌঁছলে ইবনে ওমর (রাঃ) যেকোনো মামুলী জিনিস বিক্রেতাকে, যেকোনো দোকানদারকে, যেকোনো মিসকীনকে, এমনকি প্রত্যেককে সালাম দিতেন। তুফাইল (রাঃ) বলেন, একদা আমি আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) এর নিকট গেলাম। পরে তিনি আমাকে বাজারে নিয়ে যেতে চাইলেন। আমি বললাম, আপনি বাজারে যেয়ে কী করবেন? বেঁচা-কেনার নিকটে আপনি যান না, কোনো বস্তু সম্বন্ধে কিছু জিজ্ঞেস করেন না, কোনো জিনিসের দামও জিজ্ঞেস করেন না কিংবা বাজারের কোনো মজলিসেও বসেন না। এর চাইতে এখানে বসে থাকুন এবং আমরা পরস্পর আলাপ-আলোচনা করি। অতঃপর আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বললেন, হে ভুঁড়িওয়ালা! (তুফাইলের পেট মোটা ছিল বলে এই রকম বললেন) আমি সালাম করার জন্যই বাজারে যাই, যার সাথে সাক্ষাৎ হয় তাকে সালাম করি।

এটি স্বয়ং আল্লাহর সম্ভাষণ :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, سَلاَمٌ قَوْلاً مِنْ رَبٍّ رَحِيمٍ ‘অনন্ত শান্তি পরম দয়ালু প্রভুর পক্ষ থেকে সম্ভাষণ’ (ইয়াসিন, ৫৮)। এটি নবী-রাসূলগণের সুন্নাত, খাঁটি মুমিনদের বৈশিষ্ট্য। যা আদম (আঃ) থেকে শুরু করে ক্বিয়ামত পর্যন্ত বিদ্যমান থাকবে। আল্লাহ তা‘আলা সর্বপ্রথম আদম (আঃ)-কে সালামের শিক্ষা দেন। আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করার পর আল্লাহ তা‘আলা তাকে ফেরেশতাদের সালাম দেওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি সালাম দিলে ফেরেশতারাও এর উত্তর দেন। এ বিষয়ে নবী‎ করীম (ছাঃ) বলেন,

خَلَقَ اللَّهُ آدَمَ وَطُولُهُ سِتُّونَ ذِرَاعًا، ثُمَّ قَالَ: اذْهَبْ فَسَلِّمْ عَلَى أُولَئِكَ مِنَ المَلاَئِكَةِ، فَاسْتَمِعْ مَا يُحَيُّونَكَ، تَحِيَّتُكَ وَتَحِيَّةُ ذُرِّيَّتِكَ، فَقَالَ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ، فَقَالُوا: السَّلاَمُ عَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللَّهِ ، فَزَادُوهُ: وَرَحْمَةُ اللَّهِ، فَكُلُّ مَنْ يَدْخُلُ الجَنَّةَ عَلَى صُورَةِ آدَمَ، فَلَمْ يَزَلِ الخَلْقُ يَنْقُصُ حَتَّى الآنَ

‘আল্লাহ তা‘আলা আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করলেন। তাঁর দেহের দৈর্ঘ্য ছিল ষাট হাত। অতঃপর তিনি (আল্লাহ) তাঁকে (আদমকে) বললেন, যাও, ঐ ফেরেশতা দলের প্রতি সালাম করো এবং তাঁরা তোমার সালামের জবাব কীভাবে দেয় তা মনোযোগ দিয়ে শোনো। কারণ সেটাই হবে তোমার এবং তোমার সন্তানদের সালামের রীতি। অতঃপর আদম (আঃ) (ফেরেশতাদের) বললেন, ‘আস-সালামু আলাইকুম’। ফেরেশতাম-লী তার উত্তরে ‘আস-সালামু আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ’ বললেন। ফেরেশতারা সালামের জবাবে ‘ওয়া রহমাতুল্লাহ’ শব্দটি বাড়িয়ে বললেন। যারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন, তারা আদম (আঃ)-এর আকৃতিবিশিষ্ট হবেন। তবে আদম সন্তানের দেহের দৈর্ঘ্য সর্বদা কমতে কমতে বর্তমান পরিমাপে এসেছে’।

এই সালামই হবে জান্নাতবাসীদের শুভেচ্ছা :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, تَحِيَّتُهُمْ يَوْمَ يَلْقَوْنَهُ سَلَامٌ وَأَعَدَّ لَهُمْ أَجْرًا كَرِيمًا ‘যেদিন তারা তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করবে সেদিন তাদের অভিবাদন হবে সালাম আর তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন সম্মানজনক প্রতিদান’ (আহযাব, ৪৪)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, لَا يَسْمَعُونَ فِيهَا لَغْوًا وَلَا تَأْثِيمًا – إِلَّا قِيلًا سَلَامًا سَلَامًا ‘তারা সেখানে (জান্নাতে) শুনতে পাবে না কোনো বেহুদা কথা এবং না পাপের কথা; শুধু এই বাণী ছাড়া, সালাম, সালাম’ (ওয়াক্বি‘আ, ২৫-২৬)।

কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদেরকে সালাম প্রদানের নির্দেশ দিয়ে বলেন,يَا أَ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّى تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَى أَهْلِهَا ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ছাড়া অন্য কারও গৃহে প্রবেশ করো না, যতক্ষণ না তোমরা অনুমতি নেবে এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম দিবে’ (নূর, ২৭)।

সালামের উত্তর সালাম প্রদানকারীর চেয়ে উত্তম বাক্যে বা তার মতোই দেওয়ার ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَإِذَا حُيِّيتُمْ بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوا بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوهَا ‘আর যখন তোমাদেরকে সালাম দেওয়া হবে, তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম সালাম দেবে অথবা জবাবে তাই দেবে’ (নিসা, ৮৬)।

শুধু তাই নয়, আল্লাহ তা‘আলা সালামকে আল্লাহর পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ও বরকতের প্রতীক হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন, এমনকি নিজ ঘরে প্রবেশকালেও সালাম দিতে আদেশ করেছেন। তিনি বলেন, فَإِذَا دَخَلْتُمْ بُيُوتًا فَسَلِّمُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ تَحِيَّةً مِنْ عِنْدِ اللَّهِ مُبَارَكَةً طَيِّبَةً كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ ‘তবে তোমরা যখন কোনো ঘরে প্রবেশ করবে, তখন তোমরা নিজেদের উপর সালাম করবে, আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকতপূর্ণ ও পবিত্র অভিবাদনস্বরূপ’ (নূর, ৬১)।

রাসূল (ছাঃ) মদীনায় হিজরত করে প্রথম ভাষণেই তিনি সালাম প্রসারের আদেশ করেছেন। কারণ একটি রাষ্ট্রের নাগরিকদের মাঝে পরস্পর সম্প্রীতি, ভালোবাসা প্রতিষ্ঠায় সালামের ভূমিকা অতুলনীয়। আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

لَمَّا قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْمَدِينَةَ انْجَفَلَ النَّاسُ إِلَيْهِ.وَقِيلَ قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ فَجِئْتُ فِي النَّاسِ لأَنْظُرَ إِلَيْهِ فَلَمَّا اسْتَبَنْتُ وَجْهَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَرَفْتُ أَنَّ وَجْهَهُ لَيْسَ بِوَجْهِ كَذَّابٍ فَكَانَ أَوَّلَ شَىْءٍ تَكَلَّمَ بِهِ أَنْ قَالَ ‏ “‏ يَا أَيُّهَا النَّاسُ أَفْشُوا السَّلاَمَ وَأَطْعِمُوا الطَّعَامَ وَصَلُّوا بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ بِسَلاَمٍ ‏”‏.‏

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মদীনায় পদার্পণ করলে লোকেরা তাঁকে দেখার জন্যে ভিড় জমায় এবং বলাবলি হয় যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এসেছেন। আমিও লোকদের সাথে তাঁকে দেখতে গেলাম। আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর চেহারার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম যে, এ চেহারা কোনো মিথ্যাবাদীর চেহারা নয়। তখন তিনি সর্বপ্রথম যে কথা বললেন তা হলো, হে লোকসকল! তোমরা পরস্পর সালাম বিনিময় করো, অভুক্তকে আহার করাও এবং রাতেরবেলা মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন ছালাত আদায় করো। তাহলে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا بُنَيَّ إِذَا دَخَلْتَ عَلَى أَهْلِكَ فَسَلِّمْ يَكُنْ بَرَكَةً عَلَيْكَ وَعَلَى أَهْلِ بَيْتِكَ. قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ

রাসূল (ছাঃ) আমাকে বলেছেন, ‘হে বৎস! তুমি যখন তোমার পরিবারের নিকট প্রবেশ করবে, তখন তাদেরকে সালাম দিবে। তা তোমার জন্য এবং তোমার পরিবারের জন্য বরকত বয়ে আনবে’।

ক্বাতাদাহ (রাঃ) বলেন, তুমি যখন তোমার পরিবারের নিকট প্রবেশ করবে, তখন তাদেরকে সালাম দিবে আর বাড়ীতে কেউ না থাকলে, তুমি বলবে, السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ‏ (আস-সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লা-হিছ ছলিহীন) অর্থাৎ ‘সালাম আমাদের ও আল্লাহর নেক বান্দাদের উপর বর্ষিত হোক’।

সালামের ঐতিহাসিক পটভূমি

ইসলামপূর্বকালে আরবরা পরস্পরের সাক্ষাৎকালে একে অন্যকে ‘হাইয়্যাকাল্লাহ’, ‘আনআমা ছাবাহান’ ইত্যাদি সম্ভাষণে অভিবাদন জানাত। ইসলাম তাদের অভিবাদন পদ্ধতি পরিবর্তন করে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলার রীতি প্রচলন করেছে। এর অর্থ : ‘তুমি সব ধরনের কষ্ট ও বিপদাপদ থেকে নিরাপদ থাকো।’ কোনো কোনো মনীষীর মতে, ইসলামপূর্ব যুগের লোকেরা একে অন্যকে দেখে ভয় পেত। ফলে লোকেরা একে অন্যকে ‘হালিফ’ বা ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধু’ বানিয়ে নিত। এক গোত্র অন্য গোত্রকে ‘হালিফ’ বানিয়ে নিত। এমনি পরিবেশে ইসলাম গণমানুষের নিরাপত্তার ঘোষণা দিয়ে সালামের প্রচলন করেছে। কেননা সালাম শব্দের অর্থই হলো, শান্তি ও নিরাপত্তা।

ইসলামে সালামের ঐতিহ্য

মেরাজের রজনীতে আল্লাহ তায়ালা রাসুল (সা.)-কে যেসব বস্তু বা বিষয় উপহার দিয়েছেন, তার মধ্যে সালাম অন্যতম। তিনি বলেছেন, ‘আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু’। মুসলিমগণ জান্নাতে যাওয়ার সময় ফেরেশতারা বলবে, ‘তোমাদের প্রতি ‘সালাম’, তোমরা সুখী হও।’ (সুরা জুমার : ৭৩) এরপর জান্নাতেও সালামের প্রচলন থাকবে। “সেখানে তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম’।” (সুরা ইউনুস : ১০) এরপর জান্নাতে স্বয়ং রাব্বুল আলামিন জান্নাতিদের সালাম দেবেন। ‘সালাম, পরম দয়ালু প্রতিপালকের পক্ষ থেকে সম্ভাষণ।’ (সুরা ইয়াসিন, আয়াত ৫৮)

আল্লাহ তাআলা আদম আ. কে সৃষ্টি করার পর বললেন, “যাও অমুক স্থানে ফেরেস্তাদের একটি দল বসে আছে। তাদেরকে সালাম দাও আর তাঁরা তোমাদেরকে কি অভিবাদন করে তা শোন। তারা তোমাকে যে অভিবাদন করবে তাই হবে তোমার ও তোমার সন্তানদের অভিবাদন। আদম আ. গিয়ে ‘আস-সালামু আলাইকুম’ বলে ফেরেস্তাদের সালাম দিলেন। ফেরেস্তাগণ ‘ওয়া আলাইকুমস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলে উত্তর দিলেন। তাঁরা উত্তরে “ওয়া রাহমাতুল্লাহ” বাড়িয়ে বললেন। [বুখারি : ২/৯১৯] এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হলো, সালাম আল্লাহপ্রদত্ত এক মহা নিয়ামত। এত বড় নিয়ামত, যা পরিমাপ করা সম্ভব নয়। অন্য এক হাদীসে সালামের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, “তোমরা জান্নাতে যেতে পারবেনা যাবত মুমিন না হবে। আর মুমিন হতে পারবেনা যাবত একে অপরকে মুহাব্বাত না করবে। আমি কি তোমাদের এমন একটি আমলের কথা বলে দিবনা যা করলে তোমাদের পরস্পরের মাঝে ভালবাসা সৃষ্টি হবে? (সেটি হলো) তোমরা তোমাদের পরপস্পরের মাঝে ব্যাপকভাবে সালামের প্রচলন করবে।” [মুসলিম : ১/৫৪ তিরমিযি : ২/৭] অপর বর্ণনায় এসেছে, “হযরত আব্দুল্লাহ বিন সালাম বলেন, আমি রাসুলুল্লাহকে সা. বলতে শুনেছি, হে লোক সকল! তোমরা সালামের ব্যাপক প্রচলন কর, (ক্ষুর্ধাতদের) আহার করাও, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখ এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামায পড়, তাহলে তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে নিরাপদে। [তিরামিযীঃ ২/৭৫; মুসনাদে আহমাদ : ৫/৪৫১] অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, জনৈক ব্যক্তি নবী কারিম সা. -এর নিকট এসে বলল, ‘আস্-সালামু আলাইকুম” তিনি তার সালামের উত্তর দিলেন। এরপর সে ব্যক্তি বসলে নবী কারিম সা. বললেন, “দশ” অর্থাৎ তার আমলনামায় দশটি নেকী লেখা হয়েছে। এরপর আরেক ব্যক্তি এসে বলল, “আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমুতুল্লাহ”। তিনি তার সালামের উত্তর দিলেন। এরপর সে ব্যক্তি বসলে তিনি বললেন, বিশ অর্থাৎ তার আমল নামায় বিশটি নেকি লেখা হয়েছে। তারপর অপর আরেক ব্যক্তি এসে বলল, আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমুতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। তিনি তার সালামের উত্তর দিলেন। এরপর সে বসলে তিনি বললেন, “ত্রিশ” অর্থাৎ তার আমল নামায় ত্রিশটি নেকি লেখা হয়েছে। [আবু দাউদ : ২/৭০৬]

সালামের মধ্যে রয়েছে ৩টি দোয়া-১. শান্তির দোয়া ২. রহমতের দোয়া ৩. বরকতের দোয়া। একবার যদি সালামের এই দোয়াগুলো কবুল হয়, তাহলে আমাদের অন্তর হবে নিষ্কলুষ এবং দুনিয়া ও আখেরাতের সমূহ সফলতা করবে পদচুম্বন। এই অমূল্য নিয়ামত অন্যান্য জাতির অভিবাদন পদ্ধতিতে কখনও পাওয়া যাবে না। অথচ এই মহা নিয়ামতকে ছেড়ে আমরা আমাদের সন্তানদের শিক্ষা দিচ্ছি “গুডমর্নিং” আর “গুডইভেনিং”। এর চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর কি হতে পারে? এগুলোতে না আছে দুনিয়ার ফায়দা, না আছে আখেরাতের ফায়দা। এর বিপরীতে সালামের প্রতিটি শব্দ দুনিয়া ও আখেরাতের সমূহ কল্যাণ ও সফলতায় ভরপুর।

সূত্রঃগুগল।

সর্বশেষ সংবাদ

ইসি গঠনে সার্চ কমিটিকে ছয়জনের নাম দিলো গণঅধিকার পরিষদ

নির্বাচন কমিশন গঠনে যোগ্য ব্যক্তি খুঁজতে সার্চ কমিটির কাছে নিজেদের মনোনীত নাম জমা দিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ। বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর)...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ