ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ইন্টারনেট সেবার যেখানে যে দূর্বলতা আছে, তা আমরা চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। যেখানে যে দূর্বলতা পাচ্ছি, তা সমাধানের চেষ্টাও করছি। ইন্টারনেট সেবার দূর্বলতা প্রশ্নে আমরা জিরো টলারেন্সে আছি।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সর্বনিম্ন যে গতি বেঁধে দিয়েছে, সে অনুসারে ব্রডব্যান্ডের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ডাউনলোড গতি হবে ১০ মেগাবিট পার সেকেন্ড (এমবিপিএস)। আর আপলোডের গতি থাকতে হবে এক এমবিপিএস।
২০১৮ সালের নভেম্বরে বেঁধে দেয়া এই গতিসীমা এখনো কার্যকর হয়েছে কিনা বা কতখানি হয়েছে?- এই প্রশ্নের জবাবে মোবাইল ফোনে মন্ত্রী বুধবার (২৭ জানুয়ারি) সাননিউজকে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এই গতি বেঁধে দিয়েছে বিটিআরসি। তারা পরিসংখ্যান দিয়ে তা বলতে পারবে। তবে আমি এটি বলতে পারি যে, আমরা গুণগত মান বজায় রাখার চেষ্টা করছি। যেখানে যেই দূর্বলতা পাচ্ছি, সেখানে সে অনুসারে ব্যবস্থা নিচ্ছি। সর্বোচ্চ মান বজার রাখার ব্যবস্থা আমরা করবো।
আপনারা দূর্বলতা চিহ্নিতের চেষ্টা করছেন, চিহ্নিত করার পর সমস্যা সমাধানের দিকে যাবেন। তাহলে কবে নাগাদ এসব সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছেন?
এই প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফা জব্বার বলেন, এটি নির্দ্দিষ্ট করে বলা তো মুশকিল। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া (কন্টিনিউয়াস প্রসেস)। এটি একদিনে সমাধান হওয়ার বিষয় নয়। এমনকি যখন বলবেন যে, এখন অবস্থা ভালো, ভালো সেবা পাচ্ছি। তখনো এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
ইন্টারনেটের ধীরগতি সমস্যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানান সমালোচনা হচ্ছে। ইন্টারনেট সেবার জন্য যে পরিমাণ অর্থ নেয়া হচ্ছে সে মানের সেবা না দেয়াকে কেউ কেউ ‘রাষ্ট্রই ধোকাবাজি করছে বলে সামাজিক মাধ্যমে মন্তব্য করছেন। বিষয়টি নজরে আনলে মন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রকে প্রতিনিধিত্ব করছে সরকার। তা ঠিক আছে। তবে এভাবে যারা মন্তব্য করছেন, তাদের মধ্যে একটা বিভ্রান্তি কাজ করছে। কারণ এই সেবা সরকার দিচ্ছে না, টাকাও সরকার নিচ্ছে না। এই টাকা নিচ্ছে এবং সেবা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠান।
এটি দেখভালের দায়িত্ব সরকারের। সরকার সব পক্ষ থেকে (সেবা দাতা কোম্পানী এবং সেবাগ্রহীতা/ভোক্তা) ভ্যাট নিচ্ছে। আপনি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী।– বিষয়টি মনে করিয়ে দিলে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমরা দেখভাল করছি। সে কারণে ২০০৮ সালে যেখানে ৮ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করা হতো, এখন দেশে ২১০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করছে।
এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশের অর্থনীতি ‘লাঙ্গল জোয়াল’র ওপর বেশি নির্ভরশীল থাকলেও বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কতটা নির্ভরতা বেড়েছে সে বিষয়ে কথা বলেন। তাছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ না হলে মহামরি করোনার মধ্যে কী অবস্থা হতো- সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, মোবাইল ফোনের দুর্বল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেটের ধীরগতি সমস্যার সমাধান করে মানসম্মত নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে সম্প্রতি হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়েছে। রিটে গ্রাহকদের স্বার্থে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইন্টারনেটের গতিসম্পন্ন সেবা দিতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
গত ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জনস্বার্থে মোবাইল ফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ, ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের সদস্য মেহেদী হাসান ডালিম ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. রাশিদুল হাসানের পক্ষে আইনজীবী ইশরাত হাসান এই রিট করেন। এতে তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যানসহ মোবাইল নেটওয়ার্ক কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহীকে বিবাদী করা হয়েছে।
রিটটি বর্তমানে হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায় আছে বলে সাননিউজকে জানিয়েছেন আইনজীবী ইশরাত হাসান।
রিট আবেদনে বলা হয়েছে, দুর্বল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেটের ধীরগতির কারণে মোবাইল ফোন গ্রাহকরা মারাত্মক ভোগান্তিতে আছেন। গ্রাহকের কাছ থেকে যে পরিমাণ খরচ নেয়া হয় সে তুলনায় সেবার মান হতাশাজনক। মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বাড়লেও মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো সে অনুযায়ী সেবা দেয়নি। ফলে গ্রাহকদের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
২০২০ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, ডিজিটাল সেবার মান নিশ্চিতকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তালিকায় শেষ দিকে।
ইশরাত হাসান বলেন, দেশের ইন্টারনেট গতি এতটাই দুর্বল যে, দেশের অনেক জায়গায় মানুষ ইন্টারনেটের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমাদের যে টাকা দিয়ে নেট কেনা হয় তার মেয়াদ শেষ হলে আর ব্যাবহার করা যায় না। অথচ নির্দিষ্ট সময়ে ব্যবহার করতে না পারার অন্যতম কারণ হলো ধীরগতি। বছরে সাড়ে পাঁচ লাখ অভিযোগ জমা হয় বিটিআরসিতে, কিন্তু গ্রাহকরা এখনও ভোগান্তির শিকার।
এর আগে গত ২৭ নভেম্বর মোবাইল ফোনের দুর্বল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেটের ধীরগতি সমস্যার সমাধান করে মানসম্মত নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা নিশ্চিতে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশ পাওয়ার পরও এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নেয়ায় এ রিট দায়ের করা হয় বলে জানান আইনজীবী।