করোনা ভাইরাসের টিকা নিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে কূটনীতি বেশ জমজমাট। এরই মধ্যে বাংলাদেশসহ নিকটতম প্রতিবেশীদের টিকা সরবরাহ করেছে ভারত। কিন্তু পাকিস্তান তাদের কাছে টিকার অনুরোধ করেনি বলে পাকিস্তানকে টিকা দিচ্ছে না দেশটি। তবে পাকিস্তানকে টিকা দিচ্ছে চীন। ফলে টিকাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে কড়া এক কূটনৈতিক লড়াই। সোমবার ভারতের সঙ্গে ভ্যাকসিন কূটনীতি নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা খাটো করে দেখেছে চীন। বিভিন্ন দেশে করোনার টিকা সরবরাহের ক্ষেত্রে ভারতকে বড় একটি প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখে থাকে চীন। কিন্তু চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, করোনার টিকা নিয়ে বিদ্বেষপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকা উচিত নয়।
এ নিয়ে তাদের মধ্যে সরাসরি কোনো বিরোধিতাও নেই। ভারতের সরকারি বার্তা সংস্থা পিটিআইসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এ নিয়ে একাধিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়াং সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আরো অধিক পরিমাণের মানুষের জন্য কার্যকর টিকা উৎপাদনে আরো অনেক দেশকে স্বাগত জানায় চীন। চীনের সরকারি সংবাদ মাধ্যমগুলো থেকে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল ভ্যাকসিন কূটনীতি নিয়ে বেইজিং এবং নয়াদিল্লির মধ্যে উদীয়মান প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে। এর জবাবে তিনি বলেন, প্রতিটি দেশেরই স্বাধীনভাবে তাদের উৎপাদিত টিকা ব্যবহারের স্বাধীনতা আছে। এ ইস্যুতে কোনো বিদ্বেষপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং স্পষ্ট বিরোধিতা থাকা উচিত নয়। তিনি আরো বলেছেন, কোন টিকা ব্যবহার করবে সে সিদ্ধান্ত নেবে প্রতিটি দেশ নিজে। এ নিয়ে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা বিরোধ থাকা উচিত নয়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং মালদ্বীপসহ ভারত উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে বেইজিংয়ের রয়েছে পর্যাপ্ত আকারের বিনিয়োগ। এসব দেশ ভারতীয় টিকা বেছে নেয়ায় বিস্মিত হয়েছে চীন। শুক্রবার ভারত ঘোষণা দিয়েছে তারা সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল এবং মরক্কো সহ বিভিন্ন দেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে করোনার ভ্যাকসিন সরবরাহ শুরু করছে। এখন পর্যন্ত সহযোগিতা বা সাহায্য হিসেবে এরই মধ্যে বাংলাদেশ, ভুটান, মালদ্বীপ, নেপাল, মিয়ানমার, মৌরিতিয়াস এবং সিসিলিসহ অনেক দেশকে করোনা ভাইরাসের টিকা সরবরাহ করেছে ভারত। তারা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জায়ের বোলসোনারোর অনুরোধে ব্রাজিলের কাছে এরই মধ্যে এস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ড আবিষ্কৃত টিকার ২০ লাখ ডোজ দ্রুততার সঙ্গে পৌঁছে দিয়েছে।
তবে নিজেদের ভ্যাকসিন কূটনীতিকে জোরালো করে দেখিয়েছে চীন। ২০শে জানুয়ারি তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিং মিডিয়ার সামনে বেশ কিছু দেশের নেতার নাম ঘোষণা করেছেন, যারা চীনের টিকা নিতে চান। তিনি বলেন, ওই সময় পর্যন্ত চীনে তৈরি করোনা ভাইরাসের টিকা আমদানি করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে কমপক্ষে ৪৬টি দেশ। তিনি বলেছেন, চীনে তৈরি টিকা প্রকাশ্যে গ্রহণ করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোগান, তার ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতাই, সিসিলির প্রেসিডেন্ট ওয়াভেল রামকালাওয়ান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মিশর এবং ইন্দোনেশিয়ার নেতারা। উল্লেখ, চীনে মোট চারটি টিকা নিয়ে কাজ চলছে। এর মধ্যে একটি টিকা জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সেটা হলো সিনোফার্মের টিকা। তা সত্ত্বেও তারা ভ্যাকসিন কূটনীতি শুরু করেছে। তবে তাদের সিনোভ্যাক এবং করোনাভ্যাক নামের দুটি টিকা এরই মধ্যে বিদেশে স্থান করে নিয়েছে। ট্রায়াল প্রক্রিয়া বা পরীক্ষা প্রক্রিয়ায় তা ব্যবহার করা হচ্ছে।
১৪০ কোটি মানুষের দেশে শুরু হয়েছে বিনামূল্যে করোনার টিকাদান প্রক্রিয়া। এতে প্রথমেই গুরুত্বপূর্ণ কিছু গ্রুপকে নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। দেশটির ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব এবং বড় বড় নেতাকর্মীরা এখনও টিকা নেননি। তবে এরই মধ্যে সেখানে এক কোটির বেশি মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে। হুয়া চুনিং বলেছেন, চীনের কোম্পানিগুলো এরই মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে, যাতে তাদের টিকা অনুমোদন দেয়া হয়।