মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসাবে আজ শপথ গ্রহণ করবেন জো বাইডেন। শপথের অনুষ্ঠানে ফের তান্ডবের আশঙ্কায় কার্যত গ্যারিসন সিটির চেহারা নিয়েছে ওয়াশিংটন ডিসি। নিরাপত্তাজনিত লকডাউন জারির পাশাপাশি শহর জুড়ে হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৯/১১-এর পরে এ বারই প্রথম এমন সেনা-সমাবেশ দেখছে ওয়াশিংটন।
ন্যাশনাল গার্ডের ২৫ হাজারেরও বেশি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে শহরে। সঙ্গে কয়েক হাজার স্থানীয় পুলিশ এবং আরও বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা সংস্থার কর্মীরা। ক্যাপিটল হিল, পেনসিলভ্যানিয়া অ্যাভিনিউয়ের একটা বড় অংশ এবং হোয়াইট হাউস যেন দুর্গই। জায়গায় জায়গায় বসছে আট ফুট উঁচু লোহার ব্যারিকেড। এরই মধ্যে সোমবার অনুষ্ঠানের মহড়া চলাকালীন ক্যাপিটলের অদূরে একটি অস্থায়ী তাঁবুতে আগুন লেগে যায়। চূড়ান্ত সতর্কতা হিসেবে সাময়িক ভাবে লকডাউন করে দেয়া হয় ক্যাপিটল ভবন ও তার আশপাশের এলাকা। ঘটনার সময়ে তাঁবুতে কেউ ছিলেন না অবশ্য। পুলিশ জানিয়েছে, অনুষ্ঠানের সঙ্গে এই দুর্ঘটনার সম্পর্ক নেই। খুব দ্রুত আগুন নিভিয়েও ফেলা হয়। তবে শপথ অনুষ্ঠানের জন্য ইতিমধ্যে শুধু ওয়াশিংটন ডিসি-তেই চার হাজার অফিসার মোতায়েন করেছে ইউএস মার্শাল।
প্রত্যেক বার ক্যাপিটল হিল লাগোয়া যে ন্যাশনাল মল থেকে হাজার হাজার মানুষ শপথ-অনুষ্ঠান দেখতেন, সেটিও বন্ধ নিরাপত্তার কারণেই। বাইডেনের শপথের দিন সাত সকালেই ফ্লোরিডায় নিজের রিসর্টে চলে যাচ্ছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সূত্রের খবর, সেখানে নিজেই নিজের বিদায়-অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন তিনি। কিন্তু এফবিআইয়ের আশঙ্কা, দেশের ৫০টি রাজ্যের রাজধানীতেই সশস্ত্র তান্ডব চালাতে পারেন ট্রাম্প-সমর্থকেরা। বাইডেনের শপথের আগেই ট্রাম্পকে সরাতে চেয়ে বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে চাপ দিয়ে সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগের চেষ্টা করেছিলেন ডেমোক্র্যাটরা।
পেন্স তাতে বাগড়া দিয়ে বলেছিলেন, এ ভাবে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টকে সরিয়ে দেয়া দেশের পক্ষে শুভ হতে পারে না। বাইডেনের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে অবশ্য তিনি সক্রিয় সহযোগিতা করবেন বলেই পেন্স-শিবির সূত্রে খবর। ঠিক চার বছর আগে শপথগ্রহণের দিনে পেন্সের জন্য এয়ারফোর্স-টু বিমান পাঠিয়েছিলেন তৎকালীন বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেন। রোববার উত্তরসূরি কমলা হ্যারিসকে ফোনে অভিনন্দন জানিয়ে সেই একই বন্দোবস্ত করার কথা বলেন পেন্স। ট্রাম্পকে সরাতে রাজি না-হলেও, ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে তান্ডব শুরুর আগে পর্যন্ত কিন্তু সুষ্ঠু ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষেই দেখা গিয়েছিল পেন্সকে।
এখন ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারেও তিনি যে ভাবে এগিয়ে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাতে আপাত খুশি বাইডেন শিবিরের একাংশ। অন্য অংশ আবার বিপদের গন্ধও পাচ্ছেন। হোয়াইট হাউসের নতুন প্রেস সচিব জেন সাকি জানিয়েছেন, এই ক’দিনে এক বারও কথা হয়নি পেন্স-বাইডেনের।
হোয়াইট হাউস সূত্রের খবর, অতীতে সুযোগ থাকলেও কখনওই খুব বেশি ঘনিষ্ঠ হননি এই দুই নেতা। তাই আগামী দিনে ট্রাম্প যদি লাগাতার বেসুরো গেয়েই চলেন, তখন বাইডেন-পেন্সের সম্পর্ক কী হবে, তা নিয়ে চিন্তায় বিশেষজ্ঞরা। তবু এরই মধ্যে শপথের প্রস্তুতি তুঙ্গে। মঞ্চে থাকার কথা সাবেক তিন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট— জর্জ ডব্লিউ বুশ, বিল ক্লিন্টন ও বারাক ওবামার। সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার বাড়ি থেকেই যোগ দেবেন অনুষ্ঠানে। পেন্স তো থাকছেনই।
সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট, দ্য গার্ডিয়ান।