কর্ণফুলী নদীর অধিনে ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেলটি ২০২২ সালের মধ্যে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ইঞ্জিনিয়ার হারুনুর রশিদ চৌধুরী আজ এ তথ্য জানিয়ে বলেন,“কর্ণফুলী টানেলের সামগ্রিক অগ্রগতি ৬২ শতাংশে পৌঁছেছে এবং আর্থিক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে ৫৬ দশমিক ৮০ শতাংশে। এটি সম্পূর্ণ হলে, টানেলটি এশিয়ান হাইওয়ের একটি অংশ হবে।”
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহুলেন সড়ক টানেল নির্মাণ প্রকল্প বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের অগ্রগতি সম্পর্কে পিডি বলেন, প্রকল্পটির প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৩৭৪ দশমিক ৪২ কোটি টাকা। যার মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ সহায়তা ৪ হাজার ৪৬১ দশমিক ২৩ কোটি টাকা এবং চীন সরকারের অর্থ সহায়তা ৫ হাজার ৯১৩ দশমিক ১৯ কোটি টাকা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মূল টানেল নির্মাণ কাজের খরচ বাবদ ১০০ শতাংশ টাকা চীন সরকার বহন করছে।
তিনি বলেন, প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার। ২টি টিউব সম্বলিত মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। এরমধ্যে টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার এবং ভিতরের ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার। টানেলের ভিতরের ভার্টিকাল ক্লিয়ারেন্স ৪ দশমিক ৯০ মিটার। টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে মোট ৫ দশমিক ৩৫ কি.মি এপ্রোচ রোড এবং ৭২৭ মিটার ওভার ব্রিজ রয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেল বোরিং কাজের শুভ উদ্বোধন করেন। ইতোমধ্যে ২ হাজার ৪৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি টানের টিউবের রিং প্রতিস্থাপনসহ বোরিং-এর কাজ ২০২০ সালের ২ আগস্ট সম্পন্ন হয়েছে।
ইঞ্জিনিয়ার হারুনুর রশিদ চৌধুরী জানান, গত ১২ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ২ হাজার ৪৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে দ্বিতীয় টানেল টিউব-এর বোরিং কাজ উদ্বোধন ঘোষণা করেন। ইতিমধ্যে গত ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত দ্বিতীয় টানেল টিউবের ১০৪ মিটার বোরিং কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চীনের জিয়াং সু প্রদেশের জেং জিয়াং শহরে টানেল সেগমেন্ট কাস্টিং প্ল্যান্টে সেগমেন্ট নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে এবং গত ৩০ ডিসেম্বর ১৯ হাজার ৬১৬টি সেগমেন্টের সবকটির নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। রিজেক্টেড সেগমেন্টসমূহের সম-পরিমাণ সেগমেন্টের পুন:নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এপর্যন্ত ১৫ হাজার ৭৮৪টি (৮০.৪৬ শতাংশ) সেগমেন্ট চট্টগ্রাম সাইটে পৌছেছে, তন্মধ্যে ৯ হাজার ৭৮৪টি সেগমেন্ট নির্মাণাধীন প্রথম টিউবে এবং ৪১৬টি সেগমেন্ট দ্বিতীয় টিউবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক জানান, আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার ভায়াডাক্ট নির্মাণ কাজের সাবস্ট্রাকচার-এর কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং সুপারস্ট্রাকচারের ২০৩টি প্রি-ফেব্রিকেটেড বক্স গ্রিডার এর মধ্যে ১৪২টির (৬৯.৯৫ শতাংশ) কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ইতিমধ্যে ১ থেকে ১৩ স্প্যানসমূহের মধ্যে ১১৫টি প্রি-ফেব্রিকেটেড বক্স গ্রিডার এর প্রতিস্থাপন কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি বলেন, এপর্যন্ত পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় পতেঙ্গা ও আনোয়ারা প্রান্তের ১হাজার ১০২জন ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিক বা ব্যক্তিকে অতিরিক্ত মঞ্জুরি অর্থ বাবদ মোট ২০৩.১১ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২০-২১ অর্থবছওে এডিপিতে মোট ১ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। গত ডিসেম্বও পর্যন্ত ৬৫২.১১ কোটি টাকা (৪১.৯৯ শতাংশ) খরচ হয়েছে, যার মধ্যে জিওবি ২৪৩.৪৩ কোটি টাকা ও প্রকল্প সাহায্য ৪০৮.৬৮ কোটি টাকা। বর্তমানে কর্ণফুলি টানেল নির্মাণ প্রকল্পে ২৬১ জন চীনা নাগরিক ও ৭৭৫ জন বাংলাদেশী নাগরিক কর্মরত আছেন।- বাসস