লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে থামছে না করোনার তাণ্ডব। গত একদিনেও দেশটিতে ৬৮ হাজারের বেশি মানুষের শরীরে হানা দিয়েছে ভাইরাসটি। প্রাণহানি ঘটেছে আরও ১১শ’ জনের। এতে করে মৃতের সংখ্যা ২ লাখ ৮ হাজার ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে সুস্থতা বাড়লেও সংক্রমণের তুলনায় তা কম।
ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের নিয়মিত পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৮ হাজার ১৩৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৮৩ লাখ ৯৪ হাজার ২৫৩ জনে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ১৩১ জন। ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২ লাখ ৮ হাজার ২৯১ জনে ঠেকেছে।
অপরদিকে, এখন পর্যন্ত সেখানে করোনামুক্ত হয়েছেন ৭৩ লাখ ৬১ হাজার ৩৭৯ জন রোগী। এর মধ্যে গত একদিনে সুস্থতা লাভ করেছেন ২১ হাজার ৬৭৬ জন।
গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারিতে দেশটির সাও পাওলো শহরে ৬১ বছর বয়সী ইতালি ফেরত এক জনের শরীরে ভাইরাসটি প্রথম শনাক্ত হয়। এরপর থেকেই অবস্থা ক্রমেই সংকটাপন্ন হতে থাকে। যেখানে আক্রান্ত ও প্রাণহানির তালিকায় অনেক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন।
এদিকে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় অ্যামোজোনাস রাজ্যে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের লাগাম টেনে ধরার চেষ্টায় বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) সেখানে ১০ দিনের কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমানে রাজ্যটিতে কোভিড-১৯ রোগের সংক্রমণ বেড়েই চলেছে এবং এতে বিভিন্ন হাসপাতালে বেড ও অক্সিজেন সংকট দেখা দিয়েছে। খবর এএফপি’র।
ব্রাজিলের বড় এ রাজ্যে করোনা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটায় কর্তৃপক্ষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। রাজ্যটির রাজধানী মানাউসে স্বাস্থ্য সেবা একরকম ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে।
ফিওক্রুজ-অ্যামাজোনিয়া সায়েনটিফিক ইনভেস্টিগেশন ইনস্টিটিউটের জেসাম ওরিলানা এএফপি’কে বলেন, নগরীটিতে ‘অক্সিজেনের সংকট দেখা দিয়েছে এবং সেখানের কিছু স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র সাফোকেশন চেম্বারে পরিণত হয়েছে।’
ম্যানাউসের লুইজা ক্যাস্ট্রো নামের এক বাসিন্দা এএফপি’কে বলেন, ‘সেখানের হাসপাতালগুলোতে আর কোন বেড খালি নেই এবং অক্সিজেনের কোন ট্যাঙ্কও নেই। আমরা সকলে এখন সবকিছু বিধাতার ওপর ছেড়ে দিয়েছি।’
আর অ্যামাজোনাসের গভর্নর উইলসন লিমা জানান, ‘রাজ্যটিতে ‘বর্তমানে মহামারি করোনাভাইরাসের একেবারে নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭ টা থেকে ভোর ৬ টা পর্যন্ত কারফিউ শুরু হবে।’
লিমা বলেন, ‘এটি অনেক কঠিন হলেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। আমরা বর্তমানে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।’
অন্যদিকে শুধু ব্রাজিলই নয়, করোনার ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়েছে গোটা লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশগুলোতেও। যেখানে পূর্বের তুলনায় ভাইরাসটির দাপট অনেকটা বেড়েছে। এমন অবস্থায় করোনাকে বাগে আনতে দেশগুলোর সরকার মানুষকে ঘরে রাখতে চেষ্টা করছেন। কিন্তু অর্থনীতির চাকা সচল থাকা নিয়ে রয়েছে যত দুশ্চিন্তা। ফলে সংকটাবস্থার মধ্য দিয়ে ব্রাজিল, পেরু, চিলি, ইকুয়েডর ও আর্জেন্টিনার মতো দেশগুলোতে অনেক কিছুই চালু রয়েছে।
এর মধ্যে ব্রাজিলে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা। দেশটিতে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে বেশ বিপাকে পড়তে হচ্ছে চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোকে। অপরদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
এর মধ্যে কলম্বিয়ায় করোনাক্রান্ত রোগী আজ ১৮ লাখ ৭০ হাজার। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৪৭ হাজার ৮৬৮ জনের।
আর্জেন্টিনায় সংক্রমিতের সংখ্যা ১৭ লাখ ৮৩ হাজারের বেশি। মৃত্যু হয়েছে ৪৫ হাজার ২২৭ জনের।
পেরুতে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখ ৫৬ হাজারের অধিক। যেখানে মৃতের সংখ্যা ৩৮ হাজার ৬৫৪ জনে ঠেকেছে।
এছাড়া চিলিতে সংক্রমিত ৬ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ। এখন পর্যন্ত ১৭ হাজার ৩৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।