বিশ্বজুড়ে গত বছর কোভিড-১৯ মহামারীর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সময়ও চীনের অর্থনীতি ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে প্রবৃদ্ধি বজায় রাখে। যুক্তরাষ্ট্রকে বাণিজ্য যুদ্ধে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার পথও অনেকটা সুগম হয় এরফলে।
২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসেই দেশটির বাণিজ্য উদ্ধৃত্ত ছিল ৭৮ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালে সার্বিকভাবে উদ্ধৃত্ত ছিল রেকর্ড সংখ্যক ৫৩৫ বিলিয়ন ডলার, যা ২০১৯ সালের চেয়ে ২৭ শতাংশ বেশি। একইসাথে, চীনের সর্বকালের সবচেয়ে বেশি রপ্তানিও ছিল এ বছরই।
“অপ্রত্যাশিতভাবে মহামারীর মধ্যেই চীনের সাথে অন্যান্য দেশগুলোর সংযোগ দৃঢ় হয়েছে,” বলেন ম্যাকুয়ারি ক্যাপিটালের শীর্ষ অর্থনীতিবিদ ল্যারি হু।
অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের এশিয়া ইকোনমিকসের প্রধান লুইস কুইজস দেশটির মহামারীর পরিস্থিতি সামলানোর দক্ষতাকে অর্থনৈতিক লাভের কারণ বলে মনে করছেন। মহামারীর মধ্যে বিশ্বব্যাপী প্রোটেক্টিভ গিয়ার ও ইলেকট্রনিক পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এরফলেও চীন লাভবান হয়ে বলে জানান তিনি।
“নিজদেশে মহামারীর ধকল সামলিয়ে যখন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো খুলতে শুরু করলো, তখনই কোভিড-১৯ সম্পর্কিত পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়।” বলেন তিনি।
এসময়েই চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে।
ওয়াশিংটনের সাথে বেইজিং এর বাণিজ্য উদ্ধৃত্ত ৩১৭ বিলিয়ন ডলারে এসে দাঁড়ায়, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৭ শতাংশ বেশি।
লুইজ কুইজস বলেন, “২০২০ সালে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধির দিকে নজর দিলে বোঝাই যায়, ট্রাম্পের চীনের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধ ব্যর্থ হয়েছে।”
চীনের ২০২০ সালের বার্ষিক জিডিপি ঘোষণার আগেই এসব ফলাফল প্রকাশিত হয়। জিডিপির প্রবৃদ্ধিও বজায় থাকবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ২০২০ সালের শেষ তিন মাসে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরও বেড়েছে বলেই মত বিশ্লেষকদের। রয়টার্সের বিশ্লেষণী পোল থেকে ২০২০ সালের সালে চীনের ২ দশমিক ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
“সাপ্লাই চেইনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেশ হওয়ায়, দেশটির সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা বলা সহজ হলে করা বেশ কঠিন।” বলেন লুইস কুইজস।
তবে চীনের সামনেও কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। বিশ্লেষকরা ধারনা করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও চীনের ওপর আরোপিত নানা বিধিনিষেধ তুলে নেবেন না।
“বাইডেন প্রশাসন ভিন্নভাবেই চীনের সাথে সম্পর্কের মাত্রা বজায় রাখবেন, ট্রাম্পের মতো যুদ্ধংদেহী মনোভাবে অবশ্যই নয়। তবে তাও নিকট ভবিষ্যতে চীনের ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করা বাইডেন প্রশাসনের জন্যও রাজনৈতিক ভাবে অসম্ভব।” বলেন তিনি।
সূত্র: সিএনএন