মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলার পর দেশটির টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে সে দেশের সশস্ত্র বাহিনী। তদন্ত সংস্থা এফবিআই নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শপথের আগে আরও হামলার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে। এছাড়া সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা এক নজিরবিহীন বিবৃতিতে সর্বতোভাবে সংবিধান রক্ষার কথা জানিয়েছেন। গত বুধবার প্রতিনিধি পরিষদ দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসন করেছে ট্রাম্পের। কোনো প্রেসিডেন্টের দুইবার অভিশংসন কিংবা প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর এমন ভূমিকা পূর্বে দেখা যায়নি যুক্তরাষ্ট্রে। এদিকে ১৭ জানুয়ারি দেশজুড়ে এবং ২০ জানুয়ারি ওয়াশিংটনে ট্রাম্প সমর্থকদের বিক্ষোভের ডাক উদ্বেগ বাড়িয়েছে আরও।
বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী রাজনীতি এড়িয়ে চললেও গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে ক্যাপিটল ভবনে হামলার সঙ্গে বেশ ক’জন সাবেক এবং কর্মরত সেনাসদস্য জড়িত থাকার অভিযোগ উঠতে থাকায় সেনা নেতৃত্ব স্পষ্টতই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি, ডেমোক্র্যাটদের কাছ থেকে পেন্টাগনের ওপর চাপও তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থল, নৌ এবং বিমানবাহিনীসহ মার্কিন সেনাবাহিনীর সব শাখার শীর্ষ কমান্ডাররা যৌথভাবে সেনা সদস্যদের প্রতি এক বার্তা পাঠিয়েছেন। যৌথ বাহিনীর চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলিসহ সাতজন শীর্ষ জেনারেল এবং একজন অ্যাডমিরালের সই করা এই বার্তা সেনার উদ্দেশে দেওয়া হলেও মার্কিন সংবাদমাধ্যম তা প্রকাশ করেছে।
বার্তায় বলা হয়, ‘ওয়াশিংটন ডিসিতে ৬ জানুয়ারির সহিংস দাঙ্গা যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস, ক্যাপিটল ভবন এবং আমাদের সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার ওপর সরাসরি হামলা। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং জমায়েতের অধিকার কাউকে সহিংসতা, দেশদ্রোহিতা এবং বিদ্রোহের অধিকার দেয় না। সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টির কোনো চেষ্টা আমাদের (সেনাবাহিনীর) মূল্যবোধ, রীতি এবং শপথের খেলাপ এবং বেআইনি।’
কমান্ডাররা সৈনিকদের বলেছেন, ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন জো বাইডেন এবং তিনি সেনাবাহিনীর নতুন কমান্ডার-ইন-চিফ হবেন।
আগামী ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণের আগেই ফের ট্রাম্প ভক্তরা হামলা চালাতে মরিয়া। তারা বিভিন্ন আদালতের দখল নিতে গোপনে বার্তা দিয়েছে। যেকোনো রকম পরিস্থিতি এড়াতে গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই জারি করেছে বিশেষ সতর্কবার্তা। এমন প্রেক্ষাপটেই এসেছে মার্কিন সেনাবাহিনীর যৌথ কমান্ডের বিবৃতি।
এই বিবৃতির পরই ফের আন্তর্জাতিক মহল সরগরম। জানা গেছে, ক্ষমতায় বসতে চলা ডেমোক্র্যাটরা বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ক্ষমতা শেষের আগেই অভিশংসন করতে মরিয়া। এরই মধ্যে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পের অভিশংসন প্রস্তাব পাস হয়েছে। এখন তা চূড়ান্ত রূপ পেতে সিনেটে ভোটাভুটিতে যাবে। এদিকে অভিশংসন বিচার শুরু করতে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কংগ্রেসের উচ্চ কক্ষ সিনেটের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। অন্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোর পাশাপাশি এ প্রক্রিয়াটিরও সুরাহা করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এক বিবৃতিতে বাইডেন বলেন, এ দেশের মানুষ প্রাণঘাতী ভাইরাস ও বিপর্যস্ত অর্থনীতি নিয়ে সংকটের মধ্যে আছে। আমি আশা করি, সিনেট নেতারা এ দেশের জন্য অন্য জরুরি কাজগুলো করার পাশাপাশি অভিশংসন নিয়ে তাদের যে সাংবিধানিক দায়িত্বগুলো রয়েছে তা পালনের জন্য উপায় খুঁজে বের করবেন।
সূত্র : বিবিসি, সিএনএন