কেরালার রজনী চ্যান্ডি। বয়স ৬৯ বছর। বয়সটা ভাটির। এ বয়সে মানুষের শরীর চরমভাবে বার্ধক্য জানান দিতে থাকে। ত্বকে ভাঁজ পড়ে। চুল সাদা হয়ে যায়। চোখের পাতা অবনত হয়। অনেকে চলে যান চরম বার্ধক্যে।
কিন্তু রজনী চ্যান্ডিকে এর কোনোটিই স্পর্শ করতে পারেনি। উল্টো তার যে শারীরিক গঠন, চোখের চাহনি তাতে যুবতীদেরও হার মানায়। অনেক পুরুষ তাই তার ছবি দেখে অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকেন। যুবতীরা তাকান হিংসার চোখে। ফলে অনেকেই তাকে নিয়ে ট্রল করেন। রজনী চ্যান্ডি ভারতের একজন গৃহিনী কাম অভিনেত্রী। সম্প্রতি তিনি ফেসবুকে বেশকিছু ছবি পোস্ট করেছেন। তাতে তার গ্লামার ফুটে উঠেছে। ধরা দিয়েছেন মোহনীয় ভঙ্গিতে। এসব ছবিকে তাই অনেকেই ‘টু সেক্সি’ ছবি বলে ট্রল করেছেন। আর সঙ্গে সঙ্গে তা ভাইরালও হয়েছে। দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে অসংখ্য মানুষের। অবশ্য রজনী চ্যান্ডি এমনটা কখনো আশাও করেননি।
তাকে নিয়ে একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অনলাইন বিবিসি। এতে বলা হয়েছে, তিনি একাধারে একজন গৃহিনী এবং অভিনেত্রী। তাকে সচরাচর দেখা যায় অভিজাত শাড়িতে। কিন্তু এবার তাকে দেখা গেছে জাম্পস্যুটে। লং ড্রেসে। জিন্স পরিচিত। আবার দেখা গেছে ডেনিমের একটি সংক্ষিপ্ত পোশাকে। আবার কোনো ছবিতে তাকে দেখা গেছে টাটকা সাদা ফুল মাথায় পরা। এসব ফুল তিনি নিজের বাগান থেকে সংগ্রহ করেছেন।
তাকে কেরালার স্থানীয় মিডিয়া বর্ণনা করেছে ‘বোল্ড এন্ড বিউটিফুল’ হিসেবে। রজনী চ্যান্ডির বসবাস কেরালায়। কিন্তু তিনি যেসব ছবি তুলে তা পোস্ট দিয়েছেন, তাতে ভ্রু কুঁচকেছেন অনেকে। কারণ, ভারতের দক্ষিণের এই রাজ্যটি রক্ষণশীল। সেখানে বেশির ভাগ নারী শালীন পোশাক হিসেবে পরেন শাড়ি অথবা প্রচলিত লংস্কার্ট। তবু তিনি ওইসব ছবি তুলে পোস্ট দিয়েছেন ফেসবুকে। এ বিষয়ে তিনি বিবিসিকে বলেন, এই ধারণাটি এসেছিল ২৯ বছর বয়সী ফটোসাংবাদিক আথিরা জয়-এর মাথা থেকে। মিস জয় বলেছেন, আমার নিজের মায়ের থেকেও রজনী কত বেশি আলাদা তা-ই আমাকে তার প্রতি আকৃষ্ট করেছে। ভারতীয় নারীরা তাদের পুরো জীবন বিয়ে ব্যবস্থার অধীনে একটি অবরুদ্ধভাবে কাটিয়ে দেন। পরিবারকে দেখাশোনা করেন। একবার তাদের বয়স ৬০ বছরে পৌঁছলে তারা জীবনের অনেক কিছু ছেড়ে দেন। তারা নাতিপুতির নানী বা দাদীতে পরিণত হন। আমার ৬৫ বছর বয়সী মা-ও তাদের মতো। তিনি এই বয়সেই নানা রকম স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে। কিন্তু তার থেকে রজনী চ্যান্ডি আলাদা। তিনি নিজেই নিজের যত্ন নেন। তিনি নিজেকে সুস্থ রাখেন। তিনি আকর্ষণীয়া। তিনি আবেদনময়ী। তিনি সুন্দরী। তিনি ফ্যাশন সচেতন। তার বয়স ৬৯ বছর। কিন্তু তার মন পড়ে আছে ২৯ বছর বয়সী যুবতীর সময়কালে, ঠিক আমার মতো।
মুম্বইয়ে কয়েক দশক সময় কাটানোর পর ১৯৯৫ সালে কেরালায় যান রজনী চ্যান্ডি। তার স্বামী কাজ করতেন মুম্বইতে একটি বিদেশি ব্যাংকে। কেরালায় ফিরে তিনি যখন জিন্স পরে, ঠোঁটে লিপস্টিক লাগিয়ে রাস্তায় বের হতেন তখন সবার মাথা ঘুরে যেত। একবার তিনি স্লিভলেস ব্লাউজ পরেছিলেন। তারপর সেকি কা-! কয়েক বছরে তিনি খবরের শিরোনাম হয়ে যাচ্ছেন। ২০১৬ সালে তার বয়স দাঁড়ায় ৬৫ বছরে। এ বয়সে তিনি মালায়াম ভাষার একটি কমেডি-ছবি ‘অরু মুথাসি গাধা’য় অভিনয় শুরু করেন। এরপর তাকে দুটি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গেছে। গত বছর তিনি ভারতে বহুল আলোচিত বিগ বস অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় সেশনে অংশ নেন। রজনী চ্যান্ডি বলেন, তিনি বয়সী মানুষদের বুঝাতে চান জীবন আছে, উপভোগ করো। তিনি বলেন, বেশির ভাগ যুবা দম্পতি তাদের সময়টা কাটান সন্তানের লালন পালন করে। তারা তাদের জন্য অবলম্বন তৈরি করেন। তারপর মনে করেন তাদের অনেক বয়স হয়েছে। স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তারপর বার্ধক্যে চলে যান। কিন্তু তারা সমাজ কি বলবে এই ভয়ে ভীত। পরিবারের এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার সবটাই আমিও পালন করেছি। আর এখন যা করছি তা হলো একান্তই নিজের সন্তুষ্টির জন্য। ড্রাম বাজানো শিখছি। একেবারে নিখুঁত বাজানো শিখতে পারবো এমনটা মনে হয় না। তবে আমি আনন্দ নেয়ার জন্য এটা করছি। ডিসেম্বরে আথিরা আমাকে বললো- আমি ফটোশ্যুট করতে রাজি কিনা, যেহেু আমার পশ্চিমা ধারার পোশাকের প্রতি একটি দুর্বলতা আছে। আমি তার প্রস্তাবে না বলে দিলাম। যুবতী বয়স থেকে সব সময়ই আমি এ ধরনের পোশাক পরি। তাকে আমি বললাম- আমার তো সুইমস্যুটের ছবি আছে।
ফটো সাংবাদিক আথিরা তার পিছু ছাড়লেন না। এক পর্যায়ে রজনী চ্যান্ডি তার প্রস্তাবে মজা খুঁজে পেলেন। তিনি বলেছেন, বিদেশ সফরের সময় আমি সব সময় বয়সী নারীদের প্রতি সম্মান দেখিয়েছি। এক পর্যায়ে তাকে বললাম- আমি তোমার প্রস্তাব মেনে নেবো, যদি আমার স্বামী অনুমতি দেন। ফলে আথিরা আমার স্বামীর কাছে গেল অনুমতির জন্য। তিনি আথিরাকে আমার সম্পর্কে বললেন- জীবন তার। তিনি যা পছন্দ করেন তাই করতে পারেন। তার এমন সিদ্ধান্তে আমার খুব ভাল লাগলো।
ব্যাস! আথিরা তার জন্য স্থানীয় কিছু পোশাক ভাড়া করে নিলেন। তা দেখে রজনী তো হতাশ। তিনি বললেন, অনেকদিন ধরে আমি এমন আবেদনময়ী পোশাক পরি নি। একবার যখন এগুলো পরলাম, তখন দেখি ঠিক আছে।
এরপর কোচি’তে অবস্থিত রজনীর বিশাল বাড়িতে ২০টি ছবি তোলা হলো। তা পোস্ট করা হলো ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামে। আর যায় কোথা! সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার কমেন্ট, লাইক, শেয়ার। রাতারাতি ভাইরাল হয়ে গেলেন রজনী। অনেকে লিখলেন, আপনি বয়সকে হার মানিয়েছেন। অনেকে লিখলেন ‘বোল্ড’। বিস্ময়কর। অনেকে লিখলেন ‘হট’ ‘বিউটিফুল’। কেউ তো তার ফোন নম্বর সংগ্রহের জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করলেন। কেউ কেউ তাকে ট্রল করে লিখলেন, আপনাকে খুব সুন্দর লাগছে আন্টি। চলতে থাকলো এভাবেই।
রজনী বলেন, আমাকে কেউ তো নোংরা মেয়ে মানুষ (স্লাট) বলে আখ্যায়িত করতে লাগলেন। কেউ কেউ জানতে চাইলেন, আপনি কি এখনও ডায়েট করেন নি? কেউ কেউ লিখলেন- বাসায় থাকুন। আর বাইবেল পড়–ন। আপনার এ বয়সটা প্রার্থনার, শরীর দেখানোর নয়।