spot_img

ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে করোনার টিকাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরাইল!

অবশ্যই পরুন

প্রতিনিয়তই ফিলিস্তিনিদের ভূমি, বসতি ও অধিকারের ওপর হুমকি সৃষ্টি করে আসছে ইহুদিবাদী ইসরাইল। এবার সব ধরনের ধর্মীয় বিধান, আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তি লঙ্ঘন করে কোভিড-১৯ টিকাকে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে দখলদার রাষ্ট্রটি।

ইসরাইলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০ ডিসেম্বর থেকে তাদের টিকা কার্যক্রম শুরু করে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, ভ্যাকসিনের যে পরিমাণ ডোজ কেনা হয়েছে তা ইসরাইলের প্রত্যেক বাসিন্দার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু এই ঘোষণা পুরোটাই প্রতারণা। ইসরাইল তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ঝুঁকিগ্রস্ত অনেক মানুষকে টিকা সরবরাহ করছে না। এদের মধ্যে ইসরাইলি নিয়ন্ত্রণে বাস করা ফিলিস্তিনি বাসিন্দা ও ইসরাইলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দীরা রয়েছেন, যাদের প্রতি আইন ও মূল্যবোধের দিক থেকে ইসরাইল দায়বদ্ধ।

বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয় যখন ২৬ ডিসেম্বর জননিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী আমির ওহানা ইসরাইলে থাকা বন্দীদের ভ্যাকসিনের জন্য অগ্রাধিকার তালিকা থেকে বাদ দেয়ার নির্দেশ দেন।

টাইমস অফ ইসরাইলের খবরে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ থাকার পরেও ওহানা ইসরাইল কারাগারে শুধুমাত্র কর্মীদের টিকা দিতে বলেছেন।

অথচ ইসরাইলের কারাগারগুলোতে ধারনক্ষমতার বেশি থাকা ফিলিস্তিনি বন্দীরা করোনা সংক্রমণের সব থেকে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ২০০ ফিলিস্তিনি বন্দী ইসরাইল কারাগারে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছে।

জাতিসঙ্ঘের তথ্যমতে, ইসরাইল মানবাধিকার সংস্থা ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস ফিলিস্তিনি বন্দী ও তাদের পরিবারের কাছ থেকে কারাগারের অবস্থা নিয়ে বছরে চার শ’ অভিযোগ পায়। ওহানা তার সিদ্ধান্ত বহালের জন্য জোর করছেন, যা তিনি শুক্রবার ইসরাইলের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিত মারারিকে পাঠানো এক চিঠিতে নিশ্চিত করেছেন। আমিত মারারি অবশ্য ওহানাকে জানিয়েছিলেন, কারাগারে বন্দীদের টিকা দেয়া-না দেয়ার বিষয়টি তার কর্তৃত্বের অধীন নয় এবং বন্দীদের অবশ্যই টিকা নিতে হবে।

পাঁচটি ইসরাইলি অধিকার গোষ্ঠী ওহানার ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রোববার ইসরালি হাইকোর্টে আপিল করে। কিছু সূত্র আবেদনে জানিয়েছে, বন্দীরা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তাদের অবশ্যই সমানভাবে টিকার আওতায় নিতে হবে।

পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকার ওই অঞ্চলগুলো এখনো পুরো ইসরাইলের দখলে। দখলদারিত্বের অধীনে থাকা সকলের মৌলিক প্রয়োজন প্রদান করা রাষ্ট্রের আইনি দায়িত্ব। কিন্তু ইসরাইল ওই দায়িত্ব প্রতিনিয়ত উপেক্ষা করে চলেছে।

পশ্চিম তীরে সামরিক চেকপোস্ট বসানোর পর থেকে ফিলিস্তিনিদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। ২০০৭ সাল থেকে গাজা ভূখণ্ড ইসরাইল অবরোধে থাকায় সেখানকার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। হাসপাতালগুলোতে ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের গুরুতর ঘাটতির সাথে সাথে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ ও পানির মারাত্মক অভাব রয়েছে। যার ফলে মারা গেছে শত শত রোগী।

চতুর্থ জেনেভা কনভেনশনের ৫৬ অনুচ্ছেদের অধীনে যেকোনো দেশের তাদের দখলকৃত অঞ্চলের বাসিন্দাদের সংক্রামক রোগ ও মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিষেধক ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দায়িত্ব। সেক্ষেত্রে ইসরাইল তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ফিলিস্তিনিদের করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে টিকা সরবরাহ করতে আইনিভাবে বাধ্য।

অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে কোভিড-১৯ টিকা সরবরাহে ইসরাইলের বাধা দেয়া থেকে দেশটির টিকাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়।

খবরে এসেছে , ২০১৪ সালে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের সময় অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণ করা ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হাতে বন্দী হওয়া ইসরাইলি সৈন্যদের ফেরত না দেয়া পর্যন্ত ওই অঞ্চলে কোনো প্রকার টিকা সরবরাহ না করার ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইল। ইসরাইলের আনুষ্ঠানিক কর্তৃপক্ষ থেকে এমন কোনো ঘোষণা না এলেও ইসরাইলি কোনো কর্মকর্তা বা হামাস এই খবর অস্বীকার না করায় ঘটনার যথার্থ বলেই মনে হচ্ছে।

ইসরাইলি দৈনিক হারেৎজে ২৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত এক প্রবন্ধে গাদা মাজদালি এক প্রবন্ধে লিখেন, করোনা সংক্রমণের হুমকিতে ইসরাইলি বন্দী ও নিখোঁজ সৈন্যদের ফিরে আনতে হামাস দলের অসহায়ত্বের অপব্যবহার করছে। প্রবন্ধে তিনি জোর দিয়ে বলেন, গাজায় টিকা দেয়ার অনুমতি কোনো দাতব্য কাজ নয় এটি ইসরাইলের ‘আইনি ও মানবিক কর্তব্য’।

গাজার সেন্টার পলিটিকেল ও ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ সেন্টার (সিপিডিএস) ইসরাইলের ওই শর্তের সমালোচনা করে বলছে, ইসরাইল টিকা দেয়ার বিষয়ে ‘বর্ণবাদী নীতি’ গ্রহণ করছে। ইসরাইল রাজনৈতিক লাভ অর্জনের জন্য করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের বিষয়টিকে কাজে লাগাচ্ছে। যা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

সূত্র : মিডলইস্ট মনিটর

সর্বশেষ সংবাদ

ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানালেন পুতিন

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় অবশেষে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানালেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও। ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানানোর পরিকল্পনা নেই...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ