সূর্যের কক্ষপথে গাড়ি পাঠাবার জন্য বিশ্বজুড়ে ব্যাপকভাবে পরিচিত প্রযুক্তি সম্রাট ইলন মাস্ক। বৃহস্পতিবার তিনি তার টুইটারে সমালোচনা করেছেন সিকিউরড এনক্রিপ্টেড যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপের জন্য সম্প্রতি তৈরি করা ফেসবুকের গোপনীয়তা নীতির।
ব্যবহারকারীদের মাস্ক পরামর্শ দিয়েছেন এখন থেকে এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপ ‘সিগন্যাল’ ব্যবহার করার।
এরপর ইলনের টুইটটি রিটুইট করেন টুইটারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যাক ডরসি। এর কিছুক্ষণ পরেই সিগন্যাল টুইট করে যে তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে নতুন ব্যবহারকারীদের ঢেউ সামলাতে।
এবারই প্রথম নয় যে- মাস্ক গোপনীয়তা নীতি নিয়ে ফেসবুকের সাথে প্রকাশ্যে বিবাদে জড়িয়েছে। ২০১৮ সালে তিনি নিজের ব্যক্তিগত পেজ থেকে শুরু করে তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান টেসলা এবং স্পেসএক্স এর পেজ ও সরিয়ে ফেলেছিলেন ফেসবুক থেকে।
এনক্রিপ্ট করা উভয় মেসেজিং অ্যাপেই বছরের পর বছর ধরে নিরাপত্তা বাগ খুঁজে পাওয়া গেছে যা সমাধান করা হয়েছে।
হোয়াটসঅ্যাপের নতুন গোপনীয়তা নীতিমালা থেকে ফেসবুকের সাথে তথ্য আদান-প্রদান সংক্রান্ত একটি অনুচ্ছেদ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। আর তাতেই গণমাধ্যম ও ব্যবহারকারীরা সন্দেহ করছে হোয়াটসঅ্যাপ তার পুরনো নীতিমালা থেকে সরে এসেছে। গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়টি আর গুরুত্ব পাচ্ছে না।
মুছে ফেলা অনুচ্ছেদে লেখা ছিল- “আপনি হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারী হয়ে থাকলে ফেসবুকের সাথে তথ্য ভাগাভাগি না করার বিষয়টি বেছে নিতে পারেন।”
তবে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে ২০১৬ সাল থেকেই তারা ব্যবহারকারীদের যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের অভিজ্ঞতা সহজ করে তুলতে ফেসবুকের সাথে তথ্য শেয়ার করে আসছে। নতুন করে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। যে অনুচ্ছেদটি মুছে ফেলার কথা বলা হচ্ছে তা ২০১৬ সালের নীতিমালা পরিবর্তনেরই প্রতিফলন মাত্র।
অন্যদিকে, যা কিছু ব্যবহারকারীর তত্থ্য সংগ্রহ করে- সিগন্যালের রয়েছে তেমন কিছুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দীর্ঘ ইতিহাস। এই অ্যাপে ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা আরো জোরদার করতে সিগন্যাল এখনো নিত্যনতুন বৈশিষ্ট্য যোগ করে যাচ্ছে।
সিগন্যাল প্রচলিত একটি ওয়ান-ট্যাপ ইনস্টল অ্যাপ যা গুগলের প্লে স্টোর এবং অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরের মত মার্কেটপ্লেসে পাওয়া যায়। সিগনাল’ও অন্যসব অ্যাপের মতই সাধারণ টেক্সট মেসেজিং অ্যাপ হিসেবে কাজ করে।
সিগনাল একটি ওপেন সোর্স ডেভেলপমেন্ট যা অলাভজনক সংস্থা সিগন্যাল ফাউন্ডেশন বিনামূল্যে প্রদান করে।
এডওয়ার্ড স্নোডেনের মত গোপনীয়তার হাই-প্রোফাইল অনেক আইকন পর্যন্ত বছরের পর বছর ধরে অ্যাপটি ব্যবহার করছেন।
সিগন্যালের প্রধান কাজ হল ব্যবহারকারীর পরিচয় যাচাই করে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন দ্বারা ব্যবহারকারীর আদানপ্রদান করা টেক্সট, ভিডিও, অডিওসহ সকল তত্থ্য সুরক্ষিত করা। অ্যাপটি দিয়ে ব্যবহারকারীরা একজন ব্যক্তি বা একটি গ্রুপের সাথে নিরাপদে ভয়েস এবং ভিডিও কল করতে পারে।
যখন গোপনীয়তার প্রসঙ্গ আসে তখন সিগন্যালের সুবিধাগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া কঠিন। সিগনাল ব্যবহারকারীর ডেটা সংরক্ষণ করে না। এনক্রিপশন দক্ষতার বাইরেও সিগনাল ব্যবহারকারীকে অ্যাপ-নির্দিষ্ট লক, ফেসব্লার নজরদারি বিরোধী সরঞ্জাম, এবং ডিসএপেইয়ারিং ম্যাসেজ’সহ অনস্ক্রিন গোপনীয়তা প্রদান করে।
প্রযুক্তিগত কোন জটিলতা না থাকলেও গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে সিগন্যালের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ব্যবহারকারীদের ব্যাপকতা বৃদ্ধি। একটি সঙ্কেতায়িত সংকেত বার্তা প্রেরণ করা দারুণ এক ব্যাপার, তবে যদি আপনার প্রাপক সংকেত ব্যবহার না করে, তাহলে আপনার ম্লান হয়ে যেতে পারে গোপনীয়তা।
সিগন্যালকে তুলনা করা যেতে পারে প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করা কোনো টিকার সাথে, পার্থক্য হচ্ছে- সিগন্যাল জোরদার করবে বার্তার গোপনীয়তা।