গত বসন্তে মহামারীর প্রথম ধাক্কা যখন আসে তার তুলনায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে সব-বয়সের অনেক বেশি মানুষ এখন বিশ্বজুড়ে হাসপাতালে রয়েছেন।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তরুণ, ছাত্রসহ ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি। এই বয়সসীমার কিছু মানুষের অবশ্যই হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হবে।
তবে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ বা মৃত্যু ঝুঁকির ধরনে সার্বিকভাবে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন আসেনি। এই পরিস্থিতিতে যে যত বয়স্ক, কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে ভয়াবহ পরিণতি বরণ করার ঝুঁকি তার ক্ষেত্রে ততো বেশি। বৃদ্ধরা, বিশেষ করে যাদের বয়স ৬৫ বছরের উপরে, তারা বেশি ঝুঁকিতে আছেন।
৪০ বছরের কমবয়সী ব্যক্তির ক্ষেত্রে মৃত্যুঝুঁকি মাত্র ০.১ শতাংশ। কিন্তু ,এ ঝুঁকি ৮০ বছরের বেশী বয়সীদের জন্য বেড়েছে ৫ শতাংশের উপরে, করোনার প্রথম ধাপ নিয়ে ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের গবেষণা অনুসারে এ হার নির্ণয় করা হয়েছে, যা হার প্রতি আট বছর বয়সের ব্যবধানে দ্বিগুণ হয়ে যায়।
উন্নত চিকিৎসা, ভাইরাসের গতিবিধি সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা ও প্রতিষেধক টিকা চলে আসার ফলে আশা করা যাচ্ছে মহামারীর দ্বিতীয় ধাপে এই পরিসংখ্যানের উন্নতি হবে।
সেপ্টেম্বরে মহামারীর দ্বিতীয় ধাপ শুরু হবার পর থেকেই হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে করোনা আক্রান্ত ৭৫ থেকে ৮৫ বছরের বেশী বয়স্ক মানুষের সংখ্যা। ধারাবাহিকভাবে হাসপাতালে সবচেয়ে কম ভর্তি হয়েছে শিশু এবং তরুণেরা।
গত বসন্তে মহামারীর প্রথম ধাপের তুলনায় প্রতিদিন আরো বেশি শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রেও হাসপাতালে ভর্তি হবার বাস্তবতা একই রকম।
সম্প্রতি রয়েল কলেজ অফ পেডিয়াট্রিক্স অ্যান্ড চাইল্ড হেলথের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক রাসেল ভিনার বলেন, হাসপাতালে শিশুদের ওয়ার্ড সাধারণত শীতকালে ব্যস্ত থাকে, এখন চারিদিকে সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে সে তুলনায় কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়া শিশুদের সংখ্যা খুব সামান্যই। বেশিরভাগ শিশু এবং তরুণদের মধ্যে আক্রান্ত হবার লক্ষণ কম।
মধ্যবয়সের মানুষেরাও ৬৫ বছরের বেশী বয়সীদের তুলনায় কম আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে তারা কোনভাবেই ঝুঁকিমুক্ত নন।
ইংল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, গত কয়েক সপ্তাহে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি হওয়াদের মোট ৪০ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৬৪। কিন্তু ৬৫ থেকে ৮৪ বছর বয়সীদের ভর্তির হার ৪০ শতাংশ এবং বাকি ২০ শতাংশ ভর্তি হচ্ছে ৮৫ বছরের বেশী বয়সী রোগীরা।
৪৫-৬৪ বছর বয়সী প্রতি ১০০০ জনের মধ্যে তিনজন গুরুতর অসুস্থ হয়ে ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে। অপরদিকে, ১৭ বছরের কম বয়সীদের মাঝে হাসপাতালে ভর্তি হবার হার শতকরা মাত্র এক শতাংশ, যার মধ্যে খুব কম শিশুকেই আইসিইউ’তে নেবার প্রয়োজন হচ্ছে।
১৫-৪৪ বছর বয়সী প্রতি ১ লক্ষ জনের মধ্যে একজনেরও কম ডিসেম্বর মাসে করোনার ফলে গুরুতর অসুস্থ হয়েছে। জুন মাস থেকে এ পর্যন্ত করোনায় মারা যাওয়া মোট মানুষের সংখ্যায় বিশাল প্রভাব রয়ছে বয়স্ক মানুষের মৃত্যুর। ৩০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে মৃত্যুর প্রকোপ অবশ্য শুরু থেকেই কম ছিল।
আর কম বয়সী মৃতদের মধ্যে ৮০ শতাংশের’ও বেশী মানুষের আগে থেকেই স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অন্যান্য জটিলতা ছিল। যেমন হৃদরোগ বা টাইপ ২ ডায়াবেটিস।
সোসাইটি ফর অ্যাকিউট মেডিসিনের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডঃ নিক স্ক্রিভেন বলেছেন যে, তিনি ২০ বছর বয়সী একজন রোগীকেই কেবল কৃত্রিম যন্ত্রের সাহায্যে শ্বাসগ্রহণ করতে দেখেছেন। কিন্তু যাদের বয়স বয়স ৪০, ৫০ বছর বা তার বেশি- সবচেয়ে গুরুতর অসুস্থতার সম্মুখীন হন তারাই।
তিনি বলেন, “মহামারীর প্রথম ধাপে আক্রান্তদের সাথে বর্তমানে আক্রান্তরা খুব একটা আলাদা বয়সের নয়, যদিও এখন মানুষ করোনা নিয়েও বেশিদিন বেঁচে থাকছে এবং অপেক্ষাকৃত কম রোগীর ভেন্টিলেটরে থাকার প্রয়োজন পড়ছে ।
- সূত্র: বিবিসি