২০২০ সালে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ৬৮৬ জন নিহত হয়েছেন। একই সময়ে আহত হয়েছেন ৮ হাজার ৬শ জন। বিদায়ী বছরে ৪ হাজার ৮৯১টি সড়ক দুর্ঘটনার বিপরীতে নিহত ও আহতের এই পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
শনিবার (০৯ জানুয়ারি) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধরী এই প্রতিবেদন তুলে ধরেন। বলেন, দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদমাধ্যম বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
২০১৯ এর তুলনায় ২০২০ সালে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯-এর তুলনায় ২০২০ সালে ১২ শতাংশ দুর্ঘটনা কমেছে। কিন্তু এটাকে কম বলা যাবে না। কারণ, করোনায় দুই মাসের বেশি সময় গণপরিবহন বন্ধ ছিল। সে হিসেবে ২০২০ এ সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে। ২০১৯ সালে যেখানে সড়কে মারা গেছে ৭ হাজার ৮৫৫ জন। ২০২০ সালে মারা গেছে ৬ হাজার ৬৮৬ জন।
২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেলে ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া ৩ দশমিক ৩২ শতাংশ নসিমন মাহিন্দ্রা-লেগুনায়, ১ দশমিক ৪ শতাংশ ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও ০ দশমিক ১৯ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাসে দুর্ঘটনা বেড়েছে। এদিকে গত বছরের তুলনায় বাস-ট্রাকে দুর্ঘটনা কমেছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাসে ৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ দুর্ঘটনা কমেছে। একইভাবে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-লরিতে ১ দশমিক ৪২ শতাংশ কমেছে এবং ০ দশমিক ৮৩ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশায় দুর্ঘটনা কমেছে।
পরিসংখ্যানের তুলনামূলক বিশ্লেষণে আরো দেখা গেছে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে পথচারীকে গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ কমেছে। একইভাবে, বেপরোয় গতির কারণে নিয়ন্ত্রণ হায়িয়ে খাদে পড়ার ঘটনা ০ দশমিক ৯৯ শতাংশ ও ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষ ০ দশমিক ১৬ শতাংশ কমলেও মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ৩৭ শতাংশ বেড়েছে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট দুর্ঘটনার ২৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে এবং ৪৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে সংঘটিত হয়েছে। এ ছাড়া ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। ২০১৯ সালের চেয়ে বিদায়ী বছরে আঞ্চলিক মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনা ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও জাতীয় মহাসড়কে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ, লেভেল ক্রসিং এ ০ দশমিক ১৬ শতাংশ এবং ফিডার রোডে ২ দশমিক ১৯ শতাংশ কমেছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি তাদের পর্যবেক্ষণে সড়ক দুর্ঘটনার ১৫টি কারণ তুলে ধরেছে। সেগুলো হলো- বেপরোয়া গতি, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, রাস্তার ত্রুটি, ফিটসেববিহীন যান, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল ফোন ব্যবহার, মাসক সেবন করে গাড়ি চালানো, ফিডার রোড থেকে হঠাৎ মহাসড়কে উঠে আসা, ফুটপাত দখলে থাকা বা ফুটপাত না থাকা, ট্রাফিক আইনের প্রয়োগ না থাকা, ছোট যানের বৃদ্ধি, সড়কে চাঁদাবাজি, রাস্তার পাশে হাটবাজার এবং ত্রুটিপূর্ণ যান রাস্তায় নামানো। এসব সমস্যা সমাধান করে ১২টি সুপারিশও তুলে ধরা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।