ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে ২০০২ সালে বোমা হামলার প্রধান সন্দেহভাজন আবু বকর বা ’আসির কারাগার থেকে আগাম মুক্তি পেয়েছেন। তিনি আল-কায়েদা সমর্থিত জেমাহ ইসলামিয়ার সাবেক কমান্ডার ছিলেন। ওই হামলায় দু’শোরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
২০০২ সালে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে বোমা হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে অভিযুক্ত ছিলেন এই ব্যক্তি। কারাগারে থাকা অবস্থাতেও তিনি তার বাণী প্রচার চালিয়ে যান এবং ২০১৪ সালে ইসলামিক স্টেটের সাথে মিত্রতা ঘোষণা করেন।
সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে আবু বকর বা’আসিরকে কারাগারে পাঠাতে প্রায় এক যুগ লাগে ইন্দোনেশিয়ার কৌসুলিদের। প্রেসিডেন্ট জোকে উইদোদোর একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্তের পর মানবিক বিবেচনায় কারাগার থেকে মুক্তি পান ৮০ বছর বয়সী আবু বকর বা’আসির।
সুন্নি মতাবলম্বী এই ধর্মীয় নেতা বারবার ইন্দোনেশিয়ায় শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার তাগিদ দিয়ে এসেছেন। আল-মুকমিন ইসলামিক বোর্ডিং স্কুল পরিচালনার সময় প্রথম আলোচনায় আসেন বা’আসির। মধ্য জাভায় ১৯৭২ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি।
ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষ এবং অন্যান্য সংস্থার মতে, স্কুলটি তরুণ ছাত্রদের মধ্যে উগ্রবাদী মতবাদ এবং পারস্পরিক বিদ্বেষ ছড়ানোতে ভূমিকা রাখে। ২০০২ সালে বালিতে বোমা হামলার ঘটনায় ২০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা যায়। ঐ হামলার সাথে জড়িত একাধিক ব্যক্তির বা’আসিরের স্কুলে নিয়মিত যাতায়াত ছিল।
১৯৮২ সালে ইন্দোনেশিয়াকে শরিয়া রাষ্ট্র হিসেবে দাবি করে সংবিধান অবমাননা করায় কারাদণ্ডের শাস্তি দেয়া হয় তাকে। তবে ১৯৮৫ সালে তিনি পালিয়ে মালয়েশিয়ায় চলে যান। ১৫ বছর পর ইন্দোনেশিয়ায় ফিরে তিনি ইন্দোনেশিয়ান মুজাহিদিন কাউন্সিল (এমএমআই) গঠন করেন।
২০০০ সালের বড়দিনে ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন গীর্জায় একসাথে বোমা হামলায় সম্পৃক্ত থাকার দায়ে অভিযুক্ত ছিলেন তিনি। বড়দিনে সেসব হামলায় ১৮ জন মারা যায়।
২০০২ সালের ১২ই অক্টোবর বালিতে ট্রাক বোম বিস্ফোরিত হলে ২০২ জন মারা যায়, যাদের মধ্যে ৮৮ জন অস্ট্রেলিয়ান এবং ৩৮ জন ইন্দোনেশিয়ান নাগরিক ছিলেন।
ঐ হামলাটি পরিচালনা করেছিল জেমাহ ইসলামিয়াহ নামের একটি ইসলামপন্থী দল। আল কায়েদার সাথে সম্পৃক্ত থাকা ঐ দলের আধ্যাত্মিক নেতা আবু বকর বা’আসির সেসময় অভিযুক্ত হয়েছিলেন।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দীর্ঘ সময় ধরে ইসলাম ধর্ম অনুসারে খলিফাকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল ঐ দলটি।
এরপর বেশ কয়েকবছর ইন্দোনেশিয়ার কৌসুলিরা সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে বা’আসিরকে শাস্তির আওতায় আনার চেষ্টা করেন।
২০০০ এর দশকে তিনি কারাগারে যাওয়া আসার মধ্যেই ছিলেন; কিন্তু ২০০২ আর ২০০৩ সালে তার বিরুদ্ধে আনা বোমা হামলার অধিকাংশ অভিযোগ উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে বাতিল হয়ে যায়।
২০০২ সালের বোমা হামলার দায়ে অল্প কিছুদিন কারাভোগ করেন তিনি – অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ যেই দণ্ডাদেশ পরবর্তীতে বাতিল হয়ে যায়।
২০০৮ সালে আবু বকর বা’আসির প্রতিষ্ঠিত জেমাহ আনশারুত তৌহিদের (জেএটি) সদর দপ্তরে ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষ অভিযান চালায় ২০১০ সালে।
আচেহ প্রদেশের একটি জঙ্গী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সাথে সম্পর্ক থাকার অভিযোগ আনা হয় জেএটি’র বিরুদ্ধে। ঐ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির সাথে ইন্দোনেশিয়ার শীর্ষস্থানীয় জঙ্গী সংগঠনের সদস্যদেরও সম্পর্ক ছিল।
ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষের মতে, ইসলামিক রাষ্ট্র তৈরি করার উদ্দেশ্যে শীর্ষস্থানীয় সরকারি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার জন্য ঐ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রস্তুত করা হচ্ছিল জঙ্গীদের।
ঐ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির পৃষ্ঠপোষকতা করা এবং সেটি গঠনে মূখ্য ভূমিকা রাখার দায়ে অভিযুক্ত হন বা’আসির। ২০১০ সালে তাকে কারাদণ্ড দেয়া হয়।
আইএস’এর সাথে সম্পৃক্ততা
বা’আসির তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ বারবার অস্বীকার করেছেন। তাকে কারাগারে রাখার ষড়যন্ত্র করার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত আছে বলে সবসময় অভিযোগ করে এসেছেন তিনি। কিন্তু জেলে থেকেও সবসময় জিহাদিদের সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছেন তিনি।
ইসলামিক স্টেট জঙ্গীরা সিরিয়া ও ইরাকের কিছু অংশ দখল করে খিলাফাত প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা শুরু করার পর ২০১৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলামিক স্টেট গ্রুপের সাথে সম্পৃক্ততার বিষয়টি ঘোষণা দেন বা’আসির।
কারাগারের ভেতরেও নিজের বাণী প্রচারের মাধ্যমে দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন বা’আসির; যা কর্তৃপক্ষকে ভাবিয়ে তুলেছিল। প্রেসিডেন্ট উইদোদো’র বা’আসিরকে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত মানুষের মধ্যে সন্দেহ, বিস্ময় ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।